মতলব উত্তরের উন্নয়ন ধারাকে ত্রাণ সচিব মো. শাহ্ কামাল এর অভিনন্দন

জাকির হোসেন বাদশা, মতলব (চাঁদপুর) ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ্ কামাল বলেছেন, মতলব উত্তরে যারা কৃষি কাজে জড়িত তারা তাদের খাদ্যের সংস্থান করে ৩ শ’ মে.টন বেশি খাদ্য উৎপাদন করছে। যেটা অন্য উপজেলায় বা জেলায় করতে পারছে না। এজন্য আমি সরকারের এবং আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে কৃষকদের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানাই।

আমাদের যে উন্নয়ন হল এখানে আছেন যারা পাকিস্তান আমলে জন্ম নিয়েছেন। ওই সময়ে আমরা কিন্তু পরাধীন দেশে জন্ম নিয়েছিলাম। তারা দেখেছেন ওই সময়ে দেশের কি অবস্থা ছিল। এই এলাকায় কোন রাস্তা ঘাট ছিল না। আজকে আপনারা যে ধান উৎপাদন করছেন এ বেরীবাঁধ ছিলনা মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পও ছিল না। বৃহস্পতিবার বিকালে মতলব উত্তরে ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলা ২০১৮ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সচিব শাহ কামাল এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে তা একটা মাত্র কারণেই সম্ভব হয়েছে। সেটা হল স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যদি জন্ম না নিতেন তাহলে এদেশ স্বাধীন হত না। তিনি যদি এদেশটাকে স্বাধীন না করতেন তাহলে আমরা আজ এখানে দাড়িয়ে কথা বলতে পারতাম না, এ উপজেলাও সৃষ্টি হত না। এই যে আজকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসে ঠাঁই নিয়েছে তারা বুঝে স্বাধীনতা কি জিনিস। আমাদেরকেও পাকিস্তানিরা তাড়িয়ে ভারত পাঠিয়ে দিয়েছিল। তাহলে স্বাধীনতা লাভ করার কারণেই কিন্তু আমাদের এ পরিবর্তন এসেছে, আমাদের উন্নয়ন হয়েছে।

তিনি উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, এ উন্নয়নগুলো ধাপে ধাপে হয়েছে। কিন্তু গত ৫ বছরে আপনাদের এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এমপির নেতৃত্বে ব্রীজ হয়েছে ২১৫ টি। এ উপজেলায় গত ৫ বছরে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৫ টি ব্রীজ হয়েছে। রাস্তা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা, ৬টি আশ্রয়কেন্দ্র ১৫ কোটি টাকা, ৮শ’ সোলার প্যানেল ৭ কোটি টাকা, ৪০ দিনের কমসূচী ২০ কোটি টাকা, গ্রামীন অবকাঠানো সংস্কার ২০ কোটি টাকা, টি আর কর্মসূচীর আওতায় কাজ হয়েছে ২০ কোটি টাকা, ৩ হাজার বান্ডেল ঢেউটিন বিতরণ ও প্রতি বান্ডেলের সাথে ৩ হাজার করে নগদ টাকা বিতরন, ৩০ হাজার পিচ শীতবস্ত্র বিতরণ।

আমার হিসাব মতে মতলব উত্তরে এ দপ্তর প্রায় ৩০০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছে। এ উন্নয়নগুলো যদি একটা মন্ত্রণালয়ে হয়ে থাকে একটি উপজেলায় তাহলে সারাদেশে কত পরিমাণ কাজ হয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোও তো এভাবেই উন্নয়ন করেছে। দেশটা যদি স্বাধীন না হত তাহলে এসব উন্নয়ন কখনোই সম্ভব হত না।

সচিব শাহ কামাল বলেন, গত ১০ বছরে মতলব উত্তর তথা সারাদেশে কেউ না খেয়ে মরে নি। চিকিৎসার জন্য কেউ মারা যায়নি। স্বাস্থ্যসেবা দারগোড়ায় পৌছানোর জন্য সরকার কমিউনিটি কিনিক করে দিয়েছে। আগামী ১০ বছর পর এগুলো হাসপাতালে পরিণত হবে। এখন প্রতিটি ঘরের ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায়। সরকার মেয়েদের উপবৃত্তি দিচ্ছে। বৃদ্ধরা ভাতা পান, গর্ভবতী মায়েরা ভাতা পান, মুক্তিযোদ্ধারা ও প্রতিবন্ধীরাসহ বিভিন্ন মানুষ ভাতা পাচ্ছেন। সরকার চিন্তা করছে আগামী ৫ বছর পর সকল নাগরিককে পেনশন দিবে। সরকার এগুলো করছে শক্তিশালী হওয়ার জন্য। আর সরকারকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব জনগণের। অতএব জনগণকে বুঝতে হবে এ উন্নয়ন কাজটা কি চলবে না থেমে যাবে। এ বিষয়টি কিন্তু আপনাদের চিন্তা করতে হবে। আর এই উন্নয়ন মেলা করার কারন হলো গত ১০ বছরে সরকার কি কি উন্নয়ন করলো এগুলো জনগনের মাঝে তুলে ধরতে। কোন কর্মকর্তা যদি কাগজে কলমে বলে এই উন্নয়ন হয়েছে, আর আপনি যদি সরেজমিনে দেখেন হয়নি তাহলে, সাথে সাথে তাকে আপনারা ধরবেন।

তিনি আরও বলেন, সরকার এখন দেশে টেকসই উন্নয়ন করছে। এ টেকসই উন্নয়নের জন্যই কিন্তু উন্নয়ন মেলা। সরকার যে উন্নয়ন করেছে তা জনগণকে জানান দেওয়ার জন্যই কিন্তু উন্নয়ন মেলার আয়োজন। আমি মনে করি উন্নয়ন মেলার মাধ্যমেই কিন্তু হিসাব নিকাশ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। অর্থাৎ সরকার যে সারাদিন টেলিভিশনে বলে এটা করছি ওটা করছি, তাহলে মতলব উত্তরের লোকজন দেখবে সরকারের বলা উন্নয়নগুলো হয়েছে কিনা। আমি পিআইওকে নিদের্শ দিচ্ছি যে, এ উপজেলায় যে ২১৫ টি ব্রীজ হয়েছে সেগুলো নাম্বারিং করে দিতে হবে। তাহলে কারো যদি মন চায় এ ব্রীজগুলো ঘুরে দেখতে পারবে। এভাবে প্রত্যেক উন্নয়ন কাজকে মার্কিং করতে হবে। যাতে জনগণ খুব সহজে উন্নয়ন বুজতে পারে।

শাহ কামাল বলেন, এক সময় গ্রামে সিঁদেল চুরি হত। এখন আর হয়না। দেখেন মানুষের নৈতিক কত উন্নয়ন হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে। খাদ্য ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা-ঘাট স্কুল কলেজ সকল দিকে উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়নকে অব্যাহত রাখতে আগামী নির্বাচনে উপযুক্ত প্রার্থী দেখে আপনারা নিজেদের সিদ্ধান্ত নিবেন। এ উন্নয়ন মেলা দেখে আপনাদের যদি কোন পরামর্শ থাকে, তাহলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানাবেন। অথবা অফিসারদেরকে জানাতে পারেন। তারা সেভাবে কাজ করবে। এবং তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী সরকার সেভাবে সিদ্ধান্ত নিবেন।

এর আগে ফিতা কেটে উন্নয়ন মেলা উদ্বোধন করেন সচিব শাহ কামাল। বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধন করা হয় উন্নয়ন মেলা। উদ্বোধন শেষে মেলার ষ্টল পরিদর্শন করেন সচিব শাহ কামাল। এরপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শারমিন আক্তারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমদ। দিন ব্যাপী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারি শিক্ষা অফিসার মো. মাহফুজ মিয়া। সকালে উন্নয়ন মেলা উপলক্ষ্যে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনজুর আহমদের নেতৃত্বে ‘উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ’ এই স্লোগানে বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি সকল দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষক, ছাত্র/ছাত্রী ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly

Related Posts