বাতিল হচ্ছে আমেরিকায় জন্মসূত্রে নাগরিক হওয়ার সুযোগ!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জন্মসূত্রে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার চলতি নিয়ম বাতিলের পরিকল্পনা করেছেন। জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এক্সিওস এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।

ট্রাম্প বলেন, “আমেরিকার নাগরিক নন, এমন যে কেউ এসে সন্তান জন্ম দিলেই সেই সন্তান আমেরিকার নাগরিকত্ব দাবি করতে পারে। এই নিয়ম অত্যন্ত হাস্যকর, এটি বন্ধ হওয়া উচিত।”

তবে এটি দেড়শ বছরের পুরোনো নীতি। তাতে বলা হয়েছে, আমেরিকার মাটিতে জন্মগ্রহণ করলেই দেশটির নাগরিকত্ব পাবে। এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

ট্রাম্পের বক্তব্য হচ্ছে, তাঁর আইন বিশেষজ্ঞরা তাঁকে নিশ্চিত করেছেন যে, তেমন কোনো সংশোধনীর প্রয়োজন নেই।নির্বাহী আদেশের মাধ্যমেই এটা করা সম্ভব।

যুক্তরাষ্ট্রে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিয়মে কী আছে?

যুক্তরাষ্ট্রের শাসনতন্ত্রে ১৪তম সংশোধনীর মাধ্যমে এই নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত করা আছে। এই সংশোধনীর প্রথম বাক্যতেই বলা আছে, “যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী সকল ব্যক্তিই দেশটির নাগরিক হবে। সে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যেখানেই বসবাস করুক, সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়।”

অভিবাসন নিয়ে কট্টরপন্থীরা বলছেন, এই ব্যবস্থা অবৈধ অভিবাসনের জন্য ‘চুম্বক’ হিসেবে কাজ করে থাকে।এবং সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য গর্ভবতী নারীদের সীমান্ত অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্র আসতে উৎসাহিত করছে। ট্রাম্প বলেন, জন্ম নেয়া শিশুটি ৮৫ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র্রের সব সুবিধা ভোগ করবে, এটা বন্ধ হতে হবে।

২০১৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৬০ভাগ আমেরিকান জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের সুযোগ রাখার পক্ষে রয়েছে। আর এই সুযোগ বাতিলের পক্ষে আছে ৩৭ শতাংশ আমেরিকান।

কিভাবে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছিল?

গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৮৬৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে চতুর্দশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। ত্রয়োদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল ১৮৬৫ সালে।সেই সংশোধনীর মাধ্যমে দাসত্ব প্রথা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। এরপর চতুর্দশ সংশোধনীর মাধ্যমে আমেরিকায় জন্ম নেয়া সাবেক ক্রীতদাসদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করা হয়েছিল।

১৮৫৭ সালে একটি ঘটনায় সুপ্র্রিমকোর্ট সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, আফ্রিকান আমেরিকানরা কখনও আমেরিকার নাগরিক হতে পারে না। কিন্তু এরপর চতুর্দশ সংশোধনী তাদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করে। ১৮৯৮ সালে সুপ্র্রিমকোর্ট একটি মামলায় নিশ্চিত করে যে,অভিবাসীদের শিশুদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হবে।

চীনা বাবা-মা আমেরিকায় সন্তান জন্ম দিয়েছিলেন।ওয়াং কিম আর্ক নামের সেই শিশু ২৪ বছর বয়সে চীনে বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি ফেরার সময় তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।তখন ওয়াং যুক্তি দিয়েছিলেন যে, তিনি আমেরিকায় জন্ম নিয়েছেন। চতুর্দশ সংশোধনীতে যে অধিকার আছে, সেখানে তার বাবা মা’র অভিবাসন অবস্থা কোনো প্রভাব ফেলে না। এই যুক্তি দিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন।

ইমিগ্রেশন হিস্ট্রি রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক ইরিকা লী লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়াং কিম আর্কের মধ্যে তখন যে আইনী লড়াই হয়েছে, সেখানে এসেছিল যে আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারি সকলে দেশটির নাগরিক হবে। তখন থেকে আদালত আর কখনও এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি।

Print Friendly

Related Posts