বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে টেস্টের প্রথম দিন রঙিন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ শুরুতেই জিম্বাবুয়ের দুই উইকেট তুলে নিয়ে আভাস দিয়েছিলেন দিন শেষে নায়ক হতে চলেছেন তাইজুল ইসলাম, হলো না। ব্যাট হাতে সেই দুর্দশা থেকে দলকে টেনে তুলে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দিনটি হতে পারে হ্যামিল্টন মাসাকাদজার, সে আশার গুড়ে বালি।

মাঝে সমান তালে লড়েছে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে; টানাটানি হয়েছে দড়ি ধরে, মিউজিক্যাল চেয়ারে সিন উইলিয়ামসের ব্যাটে চড়ে একবার তরী ভেড়ে সফরকারীদের তীরে তো পরক্ষণেই মাহমুদউল্লাহ-মিরাজে বাজি পাল্টে সেখানে স্বাগতিকদের জয়োগান- তাতেও হয়নি সুরাহা। শুধুমাত্র একজন ব্যাটসম্যান কিংবা বোলার অথবা একটি দলের ঝুলিতে যাবে এমন একটি দিন সেটিই বা হতে দেবেন কেন ভাগ্য বিধাতা!

কার্তিকের ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল দিনটির নায়ক যে গোটা একটা স্টেডিয়াম, সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম!

সবুজেঘেরা লাক্কাতুরায় এর চেয়ে সুন্দর সকাল আর হতে পারতো না। প্রথমবারের মত টেস্টের টস করতে মাঠে নামলেন দুই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ এবং মাসাকাদজা। একদল শিশু সুনীল আকাশে উড়িয়ে দিলো এক ঝাঁক রঙিন বেলুন। বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান বাজিয়ে দিলেন সোনালী ঘণ্টা (দ্য ফাইভ মিনিটস বেল)। ব্যাস ইতিহাসের অংশ হয়ে গেল বাংলাদেশ এবং জিম্বাবুয়ে। ১৮ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামটি পা দিলো ক্রিকেটের অভিজাত পাড়া টেস্ট আঙিনায়।

উৎসব মুখর পরিবেশেই হয়েছে সিলেট ভেন্যুর টেস্ট অভিষেক। দিনটিকে রঙিন করে তুলতে আয়োজনের খামতি রাখেনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও সিলেট বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থা। স্টেডিয়ামের লবিতে করা জাতীয় দলে খেলা সিলেটের ক্রিকেটারদের ছবি নিয়ে করা হয়েছে একটি গ্যলারি। শিল্পীর সুনিপুন তুলিতে আঁকা বাংলাদেশ ক্রিকেটের গুরুত্বপূর্ণ বাঁক কিংবা দুর্দান্ত ইনিংস খেলার ক্রিকেটারদের ছবিও শোভার বাড়াচ্ছে সেই গ্যালারির। সকালে টস হয়েছে বিশেষ স্মারক কয়েনে, এই চায়ের শহর থেকে গর্বের লাল-সবুজ জার্সি গায়ে যারা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আয়োজকদের সেই ডাকে সাড়া দিয়ে হাজির হয়েছিলেন হাসিবুল হোসেন শান্ত, রাজিন সালেহ ও এনামুল হক জুনিয়র।

টসভাগ্য বরাবরই মাহমুদউল্লাহ বিমুখ। ঐতিহাসিক এই টেস্টেও হয়নি তার বত্যয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নামাটাই যে দিন শেষে ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বাংলাদেশকে সংবাদসম্মেলনে এসে সেটি অকপটেই স্বীকার করলেন লোকাল হিরো আবু হায়েদ রাহি। এ মাঠে খেলেই তার ক্রিকেটার হয়ে ওঠা, তার চাইতে ভালো মাঠের আচরণ আর কে বুঝতে পারবে, ‘উইকেট যেরকম ছিলো সেই হিসেবে ওরা (জিম্বাবুয়ে) খুব একটা বেশি রা করতে পারে নি। তবে আমাদেরও উচিত ছিলো আরো দু-একটি উইকেট বেশি নেয়া।’

ঐতিহাসিক এই টেস্টে একজন পেসার ও তিনজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। প্রথম উইকেটটি নিয়েছেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম, তার জোড়া আঘাতেও পর ঝুলিতে উইকেট পুড়েছেন রাহি নিজেও, সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে আরেক ঘূর্ণির জাদুকর নাজমুল অপুর নাগিন ড্যান্সও আনন্দ দিয়েছে ঐতিহাসিক টেস্ট দেখতে আসা হাজার সাতেক দর্শককে।

দেনা পাওনার হিসেব মিটিয়ে বলতে গেলে লড়াইটা হয়েছে সমানে সমানে। প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেট ফেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। মাসাকাদজার দলও ইঙ্গিত দিচ্ছে বড় সংগ্রহের। ৯১ ওভার শেষে সফরকারীদের সংগ্রহ ২৩৬। ইনিংসকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে এগোচ্ছেন পিটার মুর, অপরাজিত আছেন সময়পযোগী ১২২ বলে ৩৭ রানের ইনিংস নিয়ে। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছেন রেগিস চাকাভা (৪৮ বলে ২০)। তবে এর মাঝে তিনটি বড় না হলেও কার্যকরী জুটিই ভুগিয়েছে বাংলাদেশের বোলিংকে। তৃতীয় উইকেটে মাসাকাদজা-উইলিয়ামসের ৩৮, ৪র্থ উইকেটে উইলিয়ামস-সিকান্দারের ৪৪ এবং ৫ম উইকেটে উইলিয়ামস-মুরের ৭২ রানের জুটির আক্ষেপটাই দিনশেষে বড় হয়ে ধরা দিলো এই পেসারের কথায়, ‘দেখুন ওদের দলে বেশ কিছু অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আছে যারা ম্যাচের গতি পরিবর্তন করে দেবার জন্য যথেষ্ঠ। তারাই কিন্তু রান পেয়েছে। তবে আমাদের আরো ধারালো বোলিং প্রয়োজন ছিল।’

অনেক ক্ষণ এক পাশ আগলে রাখা বিপদজনক হয়ে ওঠা সিন উইলিয়ামসকে ফিরিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। তবে অধিনায়কের বলের চাইতে দারুণ এক ক্যাচ নিয়ে এই শিকারের হকদার অবশ্যই মেহেদী মিরাজ। প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে দারুণ দক্ষতায় তালুবন্দী করে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১২ রান আগে থামিয়েছেন এই টপ অর্ডারকে। তাইতো রাহির কণ্ঠেও ঝরলো তার প্রসংশা, ‘অনেকটা সাবলীয় ভাবে খেলতে শুরু করে দিয়েছিল সিন (উইলিয়ামস)। দিনের খেলাও প্রায় শেষের পথে। তাকে ঐ সময় আটকানো না গেলে সে কতদূর যেতো সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।’

আজ দ্বিতীয় দিনে উইকেট আর কতদূর নিয়ে যাবে জিম্বাবুয়েকে সেদিকে তাদিয়ে মাহমুদউল্লাহর দল, সেদিকে তাকিয়ে গোটা বাংলাদেশও।

Print Friendly

Related Posts