সোশাল মিডিয়ায় ঝড় তোলা ইয়েমেনের ছোট্ট মেয়েটি আর নেই

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় করা ইয়েমেনের ছোট্ট মেয়ে আমাল হুসেন আর বেঁচে নেই৷ বয়স ছিল তার সাত মাত্র৷ ম্যালনিউট্রশনে ভোগা এই মেয়ের ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট হতেই সারা বিশ্ব জুড়ে শুরু হয়েছিল তোলপাড়৷ সাহায্যের হাত বাড়াতে গিয়েছিল বহু মানুষ৷ কিন্তু বড় দেরি হয়ে গেল৷

যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইয়েমেনের কচি মেয়ে আমাল৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে শুধু হাড় আর চামড়া৷ তার মাঝে কোনও চর্বি তো দূরের কথা মাংসও নেই৷ নিউইয়র্ক টাইমসের চিত্রগ্রাহক ছবিটি তোলেন৷ সেই ছবি দেখেই রাগে ফেটে পড়ে গোটা দুনিয়া৷ এমন ফুটফুটে মেয়ের এ কী অবস্থা! বলতে শুরু করেন সকলে৷ তাকে সুস্থ করে তুলতে এগিয়ে আসতে চান অনেকে৷ তার খরচ চালাতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে চান৷ কিন্তু সব শেষ করে গল্পের ইতি টানল ছোট্ট মেয়ে আমাল৷

তার পরিবার জানিয়েছে সে আর বেঁচে নেই৷ রিফিউজি ক্যাম্পে তার মৃত্যু হয়েছে৷ উদ্বাস্তু ক্যাম্পটি হাসপাতাল থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেই হাসপাতালেই প্রথমে চিকিৎসাধীন ছিল মেয়েটি৷ নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশ, অসুস্থ থাকা স্বত্বেও তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়৷ কারণ চিকিৎসকদের ঘরটি খালি করার দরকার ছিল৷ সেখানে নতুন রোগী ভরতির জন্য৷ আমালের চিকিৎসক ডঃ মেহদি আমালের মাকে বলেন তাঁর মেয়েকে ভালোও কোনও হাসপাতালে ভরতি করতে৷

চিকিৎসক ডঃ মিক্কিয়া মেহেদি আমালকে হাসপাতালে দেখতে এসে জানান “দেখুন কোনও মাংস নেই৷ শুধু হাড়৷” সাত বছরের এমন ছবিটি তোলেন ফটোগ্রাফার টাইলার হিকস৷ ইয়েমেনের আসলাম শহরে মোবাইল UNICEF ক্লিনিকে ১৮ই অক্টোবর তোলা হয় ছবিটি৷

আমালের মা মারিয়ম আলি তাঁর চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না৷ তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে টেলিফোনে জানিয়েছেন “তাঁর মন ভেঙে গিয়েছে৷” তিনি জানান তাঁর মেয়ের ছবি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার পর এখন তিনি তাঁর অন্য সন্তানদের জন্য চিন্তিত হয়ে পড়েছেন৷

UN এর সেক্রেটারি জেনারেল শুক্রবার জানিয়েছেন “ইয়েমেন এখন খাদের ধারে দাঁড়িয়ে আছে৷” যুদ্ধ বিধ্বস্ত মিডল-ইস্টে এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ১০০০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অর্থাৎ ১৪ মিলিয়ন ইয়েমেনবাসী আগামী মাসে আরও সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে বলে এক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে৷

শেষ হয়ে যেতে বসেছে পরিবারগুলি৷ সন্তানকে মৃতপ্রায় শিশু কোলে নিয়ে বসে রয়েছেন বহু মা৷ “আমার কাছে একটিও পয়সা ছিলনা যা দিয়ে আমি আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারি৷ আমার কাছে আর কোনও উপায় ছিল না তাই আমি তাকে বাড়ি নিয়ে চলে আসতে বাধ্য হই৷” জানিয়েছেন ওই একরত্তি মৃত মেয়ের মা৷ ‘আমাল’৷ যে নামের মানে ‘আশা’৷ সেই আশা একটু খাবারের আশায় সুস্থ হয়ে ওঠার আশা থেকে বঞ্চিত হয়ে চিরবিদায় নিল পৃথিবী থেকে৷ সারা বিশ্বের তাকে সুস্থ করার আশা থাকলেও তাকে বুড়ো আঙুল দেখাল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের পরিস্থিতি৷

Print Friendly

Related Posts