কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের দোড়গোড়ায় উন্নত চক্ষুসেবা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল কক্সবাজারের জনগণের দোড়গোড়ায় উন্নত চক্ষুসেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে কক্সবাজারস্থ উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’ নামে একটি ভিশন সেন্টার আজ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

এরফলে স্থানীয় জনগণ এখন দূরবর্তী শহরে না গিয়ে সহজেই চোখের প্রাথমিক ও আধুনিক চিকিৎসা করাতে পারবেন। Qatar Fund For Development-এর আর্থিক সহায়তায় Orbis International Bangladesh ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে স্থাপিত এই চক্ষু সেবা কেন্দ্রটি পরিচালনা করবে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতাল।

এ উপলক্ষ্যে আজ উখিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহা পরিচালক অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে ড. খালেদা ইসলাম, পরিচালক (অব.) প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা; ড. তারাপ্রসাদ দাস, রিজিওনাল চেয়ার, সাউথ ইস্ট এশিয়া, International Agency for Prevention of Blindness; প্রফেসর ড. আভা হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এশিয়া প্যাসিফিক ওপথালমিক সোসাইটি; ডা: আব্দুল মান্নান, উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পা কর্মকর্তা; ড. মুনীর আহমেদ, কান্ট্রি ডিরেক্টর; মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, ডিরেক্টর অব প্রোগ্রামস্ ও মো. ইকবাল হোসেন, প্রজেক্ট ম্যানেজার, Orbis International Bangladesh; জেরিন খায়ের, কান্ট্রি ডিরেক্টর, The Fred Hollows Foundation; এমএম সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসাপাতালসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

orbis2

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি অধ্যাপক এএইচএম এনায়েত হোসেন বলেন, আজ থেকে উখিায়সহ টেকনাফের স্থানীয় জনগণ এই ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে সহজে ও কম খরচে চোখের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারবে। বিশেষ করে যারা কক্সবাজার বা চট্টগ্রাম যেতে পারে না, তারা এই কেন্দ্র থেকে একই মানের চিকিৎসা সেবা পাবেন। তিনি Orbis ও কক্সবাজার বায়তুশ শরফ হাসপাতালকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরো প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা সেবার কার্যক্রম বিস্তৃত করার অনুরোধ জানান।

চোখের স্বাস্থ্য সেবাখাতে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা তুলে ধরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সাথে যৌথভাবে চোখের স্বাস্থ্য নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ভিশন সেন্টার এই কার্যক্রমের একটি অংশ। এর মাধ্যমে শরণার্থী জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

Orbis International Bangladesh-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনীর আহমেদ বলেন, Orbis International ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশে উড়ন্ত চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু করে। সেই থেকে এদেশের চক্ষু সেবার মান উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ার গৃহীত সারা দেশে ২০০টি ভিশন সেন্টার চালু করার পরিকল্পনারই এক অংশ হিসেবে এই ভিশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়।

উখিয়ার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আব্দুল মান্নান Orbis-কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কক্সবাজারের স্থানীয় জনগণের জন্য এ অঞ্চলে মানসম্মত প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিতে ‘প্রাথমিক চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’ স্থাপন করেছে। এই এলাকার মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুর চোখের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে এই স্থায়ী ‘চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Qatar Fund For Development অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের মাধ্যমে ‘কাতার ক্রিয়েটিং ভিশন (কিউসিভি) এক্সপান্ডিং আই কেয়ার ইন সাউথ ইস্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পটি এ পর্যন্ত প্রায় ১২,০০০ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কের চক্ষু পরীক্ষার পাশাপাশি, ঔষধ ও চশমা বিতরণসহ চোখের অপারেশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, স্থানীয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য কর্মীদের চোখের স্বাস্থ্য পরিচর্যা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম চলমান আছে।

এ প্রকল্পের আওতায়, অদূর ভবিষ্যতে শরণার্থী ক্যাম্প ছাড়া স্থানীয় জনগণের চক্ষু সেবায় মোবাইল ইউনিটের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ক্যাম্পের শিশু ও নারীদের চক্ষু পরীক্ষা করা হবে।

 

অরবিস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ

অরবিস ইন্টারন্যাশনাল ১৯৮৫ সালে প্রথম বাংলাদেশে এসে চিকিৎসা ও সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে। আর দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি শুরু করে ২০০০ সাল থেকে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি ১৪টি সহযোগী চক্ষু হাসপাতালের মাধ্যমে অরবিস এ পর্যন্ত ২৩,২৯৯ জন চক্ষু চিকিৎসকসহ নার্স, প্যারামেডিকস্, মাঠ পর্যায়ের স্বাস্থকর্মীদের বিভিন্ন পর্যায়ে একাধিকারবার প্রশিক্ষণ প্রদান করেছে। এছাড়া প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষের চোখ পরীক্ষা ও ৩৬ লক্ষ রোগীর চিকিৎসা সম্পন্ন করেছে। বিনামূল্যে চোখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ২ লক্ষের বেশি রোগীর দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে।

বর্তমানে অরবিস বাংলাদেশে শিশু ও ডায়াবেটিকজনিত অন্ধত্বের উপর গুরুত্ব প্রদান করছে। একই সঙ্গে সব ধরনের পরিহারযোগ্য অন্ধত্ব নিবারণে কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ন্যাশনাল আই কেয়ারের সাথে। Orbis প্রথম শিশু অন্ধত্ব নিবারণের জন্য ১২টি বিশেষায়িত শিশু বান্ধব চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করে। যার মাধ্যমে দেশের শিশুরা চোখের চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি, ১৯টি ভিশন সেন্টারের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের কাছে চোখের চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়া সহ Orbis-ই এদেশে প্রথম সক্রিয় ও সফল চক্ষু ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি হাসপাতালে।

Print Friendly

Related Posts