সফল নির্বাচনী সংলাপ : প্রয়োজন আস্থা বৃদ্ধি ও ব্যয় সংকোচন

এএইচএম নোমান

নির্বাচন সম্পর্কীত সফল সংলাপ’র ফলশ্রুতিতে সকল প্রার্থী দল জাতি রাষ্ট্র আজ নির্বাচনমুখী। ইতোমধ্যে মনোনয়ন প্রদান সমাপ্ত হয়েছে। এখন প্রয়োজন সুষ্ট ও সকলের জন্য গ্রহণযোগ্য বিশেষ করে ভোটার-জনগণকে কেন্দ্র ভিত্তিক সহ অবস্থানে সাবলীল পরিবেশ সৃষ্টি।

উভয় এলায়েন্স প্রায় প্রতিদিনই পরস্পর অভিযোগ দাবী আবেদন প্রধান নির্বাচন কমিশন, মিডিয়া বরাবরে বা সাক্ষ্যাতে পেশ করে থাকেন। নির্বাচন ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্র থেকে শুরু করে ভোট কেন্দ্র পর্যন্ত যদি একটি সমঝোতামূলক আচরণ, এথিকস সহ ‘আপনিও জিতুন আমিও জিতি’ প্রয়োজন একটি মূল মালিক ভোটাররাই ঠিক করুক। কে হবে রাষ্ট ক্ষমতার মালিক, তাহলে সৌহার্দ ও শান্তি পূর্ন পরিবেশ সহায়ক হবে প্রয়োজন একটা উদ্যোগ।

এজন্য আমরা বিদ্যমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা হিসেবে ‘সার্বজনীন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা পরিষদ’ (সনবপ) (Universal Election Management Council-UEMC) গঠন করার প্রস্তাব করছি। নির্বাচন পরিষদ শুধু নির্বাচনকে সহায়ক ব্যবস্থাপনা করবে, সরকারকে নয়। পরমতসহিষ্ণুতা ও পরস্পর আদর্শিক শ্রদ্ধাবোধ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে এগিয়ে নিতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পূর্বাপর সাক্ষাৎ সংলাপ স্বাগতম জানিয়েছেন ও উদ্যোগও নিয়েছেন। যা-ই হোক শেষ পর্যন্ত বিএনপি সহ বৃহওর ঐক্যজোটের প্রধান ডঃ কামালের সংলাপের জন্য আনুষ্ঠানিক চিঠি ও সংলাপসমূহ জনগণের আস্থার বিশাল পথ রচিত হলো।

এ পরিষদ নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষ, স্বাধীন, স্বচ্ছ, শক্তিশালী ও গতিশীলতায় সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এটি রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, সুশীল সমাজ, এনজিও ও নেটওয়ার্কসহ সুশাসন বিনির্মাণ গণতন্ত্র চর্চা ও ব্যবহারিকতা আনয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। নীতিগতভাবে এ পরিষদ গঠনের সিদ্ধান্ত হলে, দলীয় ও বাষ্ট্রিয় প্রধান মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা, ঐক্যজোটের প্রধান ডঃ কামাল হোসেনের সাথে যে সব সংলাপ ও কথাবার্তা হয়েছে, একে ভিত্তি করেই এগুন যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই উদ্যোগে ইতিবাচক দৃষ্টিতে ঘটকের ভূমিকা রাখতে পারেন।

এই পরিষদ একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে থেকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিবে ও বাস্তবায়নে কাজ করবে। অর্থাৎ যার যার দল বিদল এলায়েন্স মত-পথ অনুযায়ী যে যেখানে আছেন সেখানেই নীতি আদর্শ নিয়ে কাজ করবেন ও অবস্থান নিবেন। বর্তমান প্রেক্ষিতে এ পরিষদের মেয়াদকাল হবে এখন থেকে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিন ও নির্বাচন ফলাফলসহ ফরংঢ়ঁঃব মীমাংসা পর্যন্ত পরবর্তী ৩ মাস।

এই পরিষদের কাঠামো ৪ স্তর বিশিষ্ট ক. জাতীয় খ. আসন। উপজেলা গ. ইউনিয়ন ঘ. ভোট কেন্দ্রে ভোটার পরিষদ। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সকল রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট ধাপের কর্মকর্তা, শিক্ষক, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও এনজিও প্রতিনিধি এ পরিষদের সদস্য হবেন। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল থেকে ৩ জন করে প্রতিনিধি থাকবেন। তারা হলো: সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের দলের ১. সভাপতি ২. সেক্রেটারী ও ৩. সাংগঠনিক সম্পাদক। এ পরিষদ ৪ পর্যায়েই সাচিবিক সমন্বয় কাজ হবে। চলতি ও ইম্মিডিয়েট পাষ্ট সরকারি দলের সংশ্লিষ্ট ধাপ/শাখার সভাপতি/চেয়ারপার্সন যৌথ সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন। দলের অনুমোদনে জোটভুক্ত দলের এলায়েন্স সভাপতির বদল হতে পারে। নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের কর্মকর্তা সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ সদস্য (EWG) বা বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ (বামাসপ) বা নির্বাচন কমিশন তালিকাভুক্ত নির্বাচনে দেশীয় পর্যবেক্ষণ সংস্থা/এনজিও প্রতিনিধি যুগ্মসচিব হবে। বৃহৎ উভয় জোট ও ফ্রন্টের সংলাপের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ে নির্বাচন পরিষদ হবে। এ পরিষদের ব্যয় নির্বাহের প্রয়োজনীয় তহবিল সংশ্লিষ্ট আসন প্রার্থী অর্থাৎ পরিষদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রার্থীগণের বা সংশ্লিষ্ট দলীয় শুভাকাঙীদের সহনীয় চাঁদা-দান তহবিলেই হয়ে যাবে।

যেকোনো খোলা জনসমাগমস্থল/মাঠে নির্বাচনী সভা হতে পারে। সকল সভার জন্য মাইক, চুঙ্গা, ঢোল, সহরত বা স্থানীয় যে কোনো বা সাধ্যমত সকল প্রকার প্রচারণার ব্যবস্থা নিতে হবে। সকল ইউনিয়নে জনসভা শেষ করে উপজেলা পরিষদ/সংসদ এলাকা পর্যায়ে বৃহৎ জনসভার মাধ্যমে দলীয় জোটভাবে মনোনীত প্রার্থীর তাদের দলীয় আদর্শ ও মেনিফেস্ট ভোটারদের কাছে পেশ করবেন। সকল প্রার্থী দলীয় বা নির্দলীয়, স্বতন্ত্র একই সাইজের এক রং-এর পোষ্টার ব্যবহার করবেন যা নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে শুরু করেছে। প্রতি গ্রাম, পাড়া, ইউনিয়ন, জনসমাগমস্থল, বাজার ভোট কেন্দ্রসহ জনসভা মিলে মোট ১০-১৫ টি সভা হবে। একই মঞ্চে সকল প্রার্থী যার যার নির্বাচনী ওয়াদা ও আদর্শসহ বক্তব্য রাখবেন। যা (সনবপ) ব্যবস্থাপনার সকল দলের সক্রিয় কমন বিষয়ও সিদ্ধান্তের মাধ্যমেই হবে।

নির্বাচন কমিশন সর্বশেষ আরপিও অনুযায়ী প্রার্থীপ্রতি ২৫ (পঁচিশ) লাখ ব্যয় ধার্য করেছে। এভাবে নির্বাচনী ব্যয় কমের মধ্যে থাকলে ও বাধ্য-বাধকতায় রাখলে নীতিমালা অনুযায়ী (সনবপ) স্বচ্ছতায় ব্যয় করতে পারবে। নির্বাচন ব্যয় সহনীয় হবে। কালো টাকার মালিকদের দাপটি কমবে। সৎ ও সজ্জন যোগ্য প্রার্থীদের পক্ষে জয় সহজ হবে। নির্বাচনী ব্যয় সংক্রান্ত নির্বাচন কমিশন ঘোষিত বিদ্যমান নিয়ম কাঠামো এ পরিষদ কাজে লাগাবে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় মনিটর করবে মর্মে ঘোষণা দিয়েছে। মেজিষ্ট্রেট-সেনাববাহিনী থাকছে। পূরো প্রক্রিয়ায় সকল দল ও সুশীল সমাজের প্রবক্তারা অংশ নিয়ে আজকের সাধারণ ভোটার মানুষের দাবি দুর্নীতি, অপনীতি, সন্ত্রাস, কালো টাকা, ঋণ খেলাপী, ব্যবসায়িক ও মিথ্যা উন্নয়ন প্রবক্তাদের হাত থেকে উদ্ধার করার পথ রচনার কাজ আমাদের শুরু করতেই হবে। যে পথে বৈষম্যহীন স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণ হবে, শোষণহীন সমাজ ও অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে। মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্রের স্বাদ ও সুফল দেশবাসী সমভাবে ভোগ করবে।

সাধারণ ভোটারদের ডাক, সমঝোতামূলক সনবপ’র মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করি, সমঝোতা ও সহিষ্ণুতার পরিবেশে শান্তি ও আদর্শিক রাজনৈতিক কালচার সৃষ্টি করি। প্রভাবহীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সত্যিকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রাষ্ট্র পরিচালনা, ক্ষমতা ও আইনের শাসন প্রয়োগ করি। সনবপ গঠনের এর ফলে জোড়াতালি, সাময়িক সমাধানের পথ ও মলম দিয়ে আপাতত চিকিৎসার বিপরীতে, দীর্ঘস্থায়ী তৃণমূল থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে দেশ ও জাতি মাথা উঁচু করে দাড়াবে, শান্তি আসবে, হানাহানি, হিংসা বিদ্বেষ দূর হবে। দেশ গণতন্ত্রের একটি নতুন পথ খুঁজে পাবে।

সকল দলের অংশগ্রহণকে সা¤েœ তুলে দুই বড় জোটের পক্ষ থেকে যদি একটি সমঝোতাপত্র বা ঘোষণা ভোট কেন্দ্র, ইউনিয়ন ও আসন দলীয়/জোট সদস্যকে জানান দেয়া হয় তাহলে মনস্তাত্বিক শক্তি সকলের বেড়ে যাবে, হিংসা দ্বেষ বৈরীতার স্থলে বন্ধুত্ব সম্পৃতি ও শান্তির পরিবেশ বিদ্যমান থাকবে। যার যার স্থান থেকে ভোটার যাকে বা যে দলকে পছন্দ তাকে ভোট দিবে। এটাই আজ আমজনতা দেশবাসী ভোটারদের কাম্য।
লেখক : নির্বাচন পর্যবেক্ষক এবং গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী -২০১৩

nouman@dorpbd.org

Print Friendly

Related Posts