চিনে নিন নীল অপরাজিতা, জেনে নিন ঔষধি গুণ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সবুজ পাতার মধ্যে গাঢ় নীল রঙের চোখজুড়ানো ফুলটিই হচ্ছে ‘নীল অপরাজিতা’। নীল ফুলের কথা বললে প্রথমেই আসে রূপসী অপরাজিতার নাম।

লতানো গাছে সবুজ পাতার কোলে এক টুকরো প্রগাঢ় নীলের সম্ভাষণ ভালোলাগার অনুভূতিকে নিমেষে ছুঁয়ে যায়। ফুলে কোনো গন্ধ নেই, তবু রঙের বাহার আর মিষ্টি শোভায় অনন্য সে অপরাজিতা।

আরও দুটি রং আছে অপরাজিতা ফুলের—ফিকে নীল ও সাদা। ফুলটি বৃতি থেকে এক পাশে বিস্তৃত। দল অর্ধবৃত্তাকার। নীল রঙের অপরাজিতা ফুলের দ্বৈত পাপড়িও দেখা যায়। সাধারণত: বসত বাড়ির শোভা বর্ধনে বাড়ির আঙ্গিনায় এ গাছ রোপণ করা হয়।

রোপণের সময় : বর্ষাকাল। গাছের ডাল বর্ষাকালে স্যাঁত স্যাঁতে মাটিতে রোপণ করতে হয়, ছোট ছোট ধূসর ও কালো বর্ণের বিচি রোদে শুকিয়ে নরম মাটিতে রোপণ করতে হয়। বাড়ির আঙিনায়, টবে বা বাগানেও এ গাছ লাগানো হয়।

গাছটি লতা জাতীয় । অনেক লম্বা হয়ে থাকে। কোনো অবলম্বন পেলে এটি তরতর করে বেড়ে উঠে। ঝোপজাতীয় গাছে প্রায় সারা বছর ফুল ফোটে। বহুবর্ষজীবী এ লতা ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।

জানা যায়, আমাদের দেশে এই ফুলটি এসেছে মালাক্কা দ্বীপ থেকে। খুব প্রাচীনকালে এই দ্বীপ এশিয়াসহ অস্ট্রেলিয়া মিলে একটি মহাদেশে ছিল। টারনেটি বা মালাক্কা থেকে এসেছে বলে অপরাজিতার বৈজ্ঞানিক নাম ক্লিটোরিয়া টারনেটিকা। ক্লিটোরিয়া অর্থ যোনিপুষ্প। ফুলের ভিতরের আকৃতি দেখে এই নাম। কেরালায় একে বলে ‘শঙ্খপুষ্পী’। এই ফুলের বয়স অন্তত পাঁচ কোটি বছর। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঢাকায় রমনা পার্ক, শিশু একাডেমির বাগান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, বলধা গার্ডেন ও কোনো কোনো অফিসের বাগানে এই ফুলের গাছ আছে।

ধর্ম: নীল অপরাজিতা বারো মাস ফোটে। তবে শীতে কমে যায়। নীল ফুলের গাছ যত তাড়াতাড়ি শাখা-প্রশাখা ছড়ায় সাদা তত তাড়াতাড়ি নয়। অপরাজিতা ফুল গুচ্ছে ফোটে না। পাতাভর্তি লতার ফাঁকে ফাঁকে এক একটি ফুল ফোটে, যেন এরা একা থাকতে ভালোবাসে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অপরাজিতা পবিত্র উদ্ভিদ। শারদীয় দুর্গোৎসবে ষষ্ঠীতে এবং বিজয়া দশমীর পুজোয় এ ফুল ব্যবহারের প্রচলন আছে। রূপকথার গল্পেও আছে অপরাজিতার নাম, পরীদের কাছে আংটি হিসেবে ছিল ফুলটির ব্যবহার।

ঔষধি গুণ: অপরাজিতা কেবল সৌন্দর্যে নয়, ঔষধি গুণেও অতুলনীয়। এর ফুল, পাপড়ি, মূল ও গাছের লতা নানা ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার্য। মূর্ছায়, শূল ব্যথায়, ভূতের ভয়ে উন্মাদে, গলগন্ডে, ঘন ঘন প্রস্রাবে, মেধা বৃদ্ধিতে, স্বরভঙ্গে, শুকনো কাশিতে, আধকপালে বেদনায়, খোস-পাঁচড়ায়, মেহ ও শোথে অপরাজিতার মূল, পাতা বা ডাল ওষুধের কাজ করে।

কোন ব্যক্তি মূর্ছা যাওয়া বা হিস্টেরিয়ায় আক্রান্ত হলে অপরাজিতা ফুলের গাছ ও পাতা থেঁতে ছেঁকে ১ চা চামচ রস রোগীকে খাওয়ালে রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়। অপরাজিতার মূলের সাথে ৫/৬ গ্রাম পরিমাণ ঘি মিশিয়ে শিলে পিষে অল্প মধু দিয়ে সকাল বিকাল টানা ৭ দিন খেলে, গলগন্ড রোগ ভাল হয়ে যায়। শরীরের কোন স্থান ফুলে গেলে, ওই স্থানে নীল  অপরাজিতার পাতা, মূল সহ বেটে অল্প গরম করে লাগালে, ফুলাভাব কমে যায়। ফুলাভাব না কমা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখতে হবে।

শিশু অথবা বয়ষ্ক যারা ঘন ঘন প্রস্রাব করে এই ক্ষেত্রে সাদা বা নীল অপরাজিতা গাছের মূল  সহ রস করে এক চা চামচ প্রত্যেকদিন ২ বার একটু সামান্য দুধ মিশিয়ে সকাল বিকাল এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

ঠাণ্ডাজনিত কারণে গলার স্বর ভেঙ্গে গেলে, অপরাজিত গাছের লতানো পাতা ১০ গ্রাম পরিমানে নিয়ে ৪/৫ কাপ পানিতে সিদ্ধ করতে হবে। সিদ্ধ পানি ১ কাপ থাকা অবস্থায় নামিয়ে ছেঁকে, ৪/৫ দিন ৩/৪ বার ১৫ মিনিট গারগেল করলে স্বর ভালো হয়ে যায়।

অপরাজিতা মূলের রস ১ চা চামচ আধা কাপ অল্প গরম পানিতে মিশিয়ে, সেই পানি ১০/১৫ মিনিট মুখে রেখে ৭ দিনে ৩বার গারগেল করলে শুষ্ক কাশি ভালো হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মিশ্রণটি খাওয়া যাবে না।

এক টুকরা মূল ও গাছ থেঁতলে তার রস হাতের তালুতে নিয়ে নাক দিয়ে টেনে দিনে দু’তিন বার নস্যি নিলে মাথা ব্যাথা সেরে যায়।

সম্পাদনা : শাহ মতিন টিপু

Print Friendly

Related Posts