ছাত্রলীগ নেতা রাকিব খুনের পেছনে সজীবের স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বনানী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি তানজিল হোসেন রাকিব (২৭) খুনের পেছনে পূর্বশত্রুতাকেই দায়ী করছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে রাকিবকে খুন করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, রাকিবের সন্দেহভাজন খুনি হিসেবে এরইমধ্যে একই এলাকার সজীব নামে একজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে সজীব পলাতক রয়েছেন। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জসীম নামে আরেকজনের নাম এসেছে, তবে তাকে এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

সূত্র আরো জানায়, একই এলাকার বড়ভাই সজীবের স্ত্রীর সঙ্গে রাকিবের ভালো সম্পর্ক ছিল। একপর্যায়ে সজীব তার স্ত্রীকে তালাক দিলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল রাকিব। আর এ বিষয় নিয়ে রাকিবের উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন সজীব। যার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।

বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) দিনগত রাত ১২টার দিকে রাজধানীর মহাখালী টিঅ্যান্ডটি কলোনিতে নিজ বাসার পাশেই রাকিব ও তার বন্ধু নূর ইসলামকে কুপিয়ে জখম করা হয়। পরে পরিবার ও স্থানীয়রা তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাকিবকে মৃত ঘোষণা করেন। নূর ইসলাম ঢামেক হাসপাতালের ৩০৩ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।

রাজধানীর তেজগাঁও কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিভাগে বিবিএ সম্পন্ন করেন রাকিব। পরে তিতুমীর কলেজে এমবিএতে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। গত ৫-৭ বছর ধরে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের পদধারী হন রাকিব।

রাকিবের বাবা আলতাফ হোসেন বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার চণ্ডপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বিটিসিএল’র লাইনম্যান পদে চাকরিরত আলতাফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরেই পরিবারসহ মহাখালী টিঅ্যান্ডটি কলোনির কল্যাণ-৬০৪ নম্বর বাসায় বসবাস করতেন। দুই ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে রাকিব ছিলেন দ্বিতীয়।

পরিবারের সদস্যরা জানান, বাসার পাশেই একটি মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলে বাসায় ফিরছিলেন রাকিব। এ সময় কে বা কারা অতর্কিতভাবে ধারালো অস্ত্রসহ রাকিব ও তার বন্ধুর উপর হামলা চালায়।

মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদনে বনানী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মালেক উল্লেখ করেন, রাকিবের ঠোঁটের বাম পাশ থেকে বাম চোয়ালসহ থুঁতনি পর্যন্ত গভীর কাটা জখম, মাথার পেছনে কয়েক জায়গায় ও ঘাড়ে গভীর কাটা জখম, বাম হাতের কনুই, কব্জি ও বুকের কয়েক জায়গায় কাটা জখম রয়েছে।

সুরতহাল প্রতিবেদনে প্রাথমিক তদন্তে তিনি উল্লেখ করেন, বৃহস্পতিবার রাতে কলোনির দুলাল শিকদারের বাড়ির সামনের রাস্তায় রাকিব ও তার বন্ধু নূর ইসলাম দাঁড়িয়ে কথা বলার সময় পেছন থেকে কয়েকজন দুষ্কৃতকারী তাদেরকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে আহত করে। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর রাকিবের মৃত্যু হয়। পূর্ব শত্রুতার জেরে রাকিব খুন হতে পারেন বলেও উল্লেখ করা হয়েছে সুরতহাল প্রতিবেদনে।

নিহতের বড়ভাই তারেক হোসেন চাকরি সূত্রে টাঙ্গাইল থাকেন। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুর খবর শুনে গতরাতেই ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলেন, জানি না কে বা কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিলো বলে জানতাম না। এলাকার সবাই রাকিবকে ভালো হিসেবেই জানে।

এ ঘটনায় জড়িত যেই হোক না কেন দ্রুতই আইনের আওতায় এনে ফাঁসির দাবি জানান তিনি।

নিহত রাকিবের বন্ধু ফয়সাল আহমেদ রাব্বি জানান, কড়াইল বস্তির সজীবই রাকিব ও নূর ইসলামকে কুপিয়েছে। সজীবের সঙ্গে জসিমও ছিলো। তারা প্রায়ই রাকিবকে থ্রেট দিতো। মাদকাসক্ত সজীব বিভিন্ন খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িত।

ঘটনার সময় পাশের বাড়িতে পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ করছিলেন শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, আমি ও ফিরোজ নামে একজন রাতে কাজ করছিলাম। বাড়ি থেকে বের হতেই আহত নূর ইসলাম চিৎকার দিয়ে বলে, কাকা আমারে বাঁচান। দৌড়ে তাকে ধরতেই পেছনে দেখি রাকিব রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে রাকিবের পরিবারের লোকজন এলে তাদেরকে প্রথমে রিকশায় করে ওয়ারলেস নিয়ে যাই। এরপর সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যাই। তবে ঘটনাস্থলে এসে কাউকে দেখতে পাননি কিংবা ঘটনার সময় চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

রাকিবের ছোটবোন দোলন আহাজারি করতে করতে বলছিলেন, ৮ ডিসেম্বর (শনিবার) আমার ভাইয়ের জন্মদিন ছিল। আর আজ ভাই লাশ হয়ে শুয়ে আছে।

রাকিবের আরেক বন্ধু আজিজুর রহমান বলেন, রাকিবের সঙ্গে দু’টি মোবাইল ছিল। কিন্তু পরে সেগুলো পাওয়া যায়নি। তার নম্বরগুলোও এখন বন্ধ রয়েছে। তিনি বলেন, শনিবার তার জন্মদিন। গত এক সপ্তাহ ধরেই সব বন্ধুদের সঙ্গে জন্মদিনে কি খাওয়াবে এ নিয়ে আলোচনা করছিল। জন্মদিনের একদিন আগেই সে চলে গেলো।

পুলিশের এক কর্মকতা বলেন, রাকিব রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা এখনো পাওয়া যায়নি। সন্দেহভাজন সজীবের রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কেও নিশ্চিত হতে পারিনি।

তিনি বলেন, ঘটনায় আহত নূর ইসলাম জ্ঞান ফেরার পর হাসপাতালেই পুলিশকে সজীব নামে একজনের কথা বলেছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি তাকে ধরতে পারলে ঘটনার কারণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, বনানী ১৯ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি রাকিবকে হত্যার ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। এ বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করছি। হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে এখনো আমরা নিশ্চিত নই, তবে সার্বিক অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত চলছে।

শুক্রবার বাদ জুমা টিঅ্যান্ডটি কলোনি মসজিদে রাকিবের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতেই মরদেহ গ্রামের বাড়ি বরিশালে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে মরদেহ দাফন করা হবে।

Print Friendly

Related Posts