হানাদারমুক্ত প্রিয় মাতৃভূমি

মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর প্রিয় মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করে ৩০ লক্ষাধিক প্রাণ আর ৪ লক্ষাধিক মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি। স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন সামনে নিয়ে দীর্ঘ চব্বিশটি বছর কঠিন সংগ্রাম পরিচালনা করে, নিজের জীবন উত্সর্গ করে, ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাস অনেক বিস্তৃত। অনেক কষ্টের ফসল আমাদের এ স্বাধীনতা। লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত এ স্বাধীনতা।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি নিধনে ঝাঁপিয়ে পড়লে একটি জনযুদ্ধের আদলে মুক্তিযুদ্ধ তথা স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চের কালো রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ঢাকায় অজস্র সাধারণ নাগরিক, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, পুলিশ ও ই.পি.আরকে হত্যা করে এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপ্রাপ্ত দল আওয়ামী লীগ প্রধান বাঙালিদের তত্কালীন জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেফতারের পূর্বে ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল ১৯৭১ সালে সংঘটিত তত্কালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সশস্ত্র সংগ্রাম, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে আত্ম-প্রকাশ করে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকেই এর পূর্ব অংশ পশ্চিম অংশের তুলনায় নানাভাবে বঞ্চিত হতে থাকে এবং স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের আগ পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর ছিল পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ-বঞ্চনার ইতিহাস।

মহান বিজয় দিবসের ৪৭তম বার্ষিকীতে আজ গর্ব করে বলতে পারি, যে স্বপ্ন ও প্রত্যাশা নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় তারই সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আজ তা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও শোষণমুক্ত সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে চলেছে। শিগগিরই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। আজ দেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নাই। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী এবং যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সংবিধান পরিবর্তন করেছিল, রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিকে যারা বাতিল করেছিল, এবং যারা দেশের স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে ধ্বংস করেছিল—আজকে ভাবতে লাগে তারাই আজ নতুন রূপে আবির্ভূত হয়েছে।

বাঙালির জাতীয় জীবনে মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালি জাতি চূড়ান্তভাবে একটা স্বাধীন দেশ পায়। একটা স্বাধীনতা পায়। নিজেদের ন্যায্য অধিকার পায়। আজ আমরা যে একটা সুখী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাসম্পন্ন দেশ গড়তে চলেছি। যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। সহজভাবে বলতে গেলে আজকের আমাদের এ বাংলাদেশ উন্নতির যে ধাপগুলো স্পর্শ করেছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু করবে তার সঙ্গে মিশে থাকবে লাখ লাখ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার এক অসামান্য অবদান। সকল শহীদের প্রতি রইল আমার স্বশ্রদ্ধ সালাম।

 

মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান: সাধারণ সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংগ্রামী ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি

Print Friendly

Related Posts