স্বাগত নতুন বর্ষ ২০১৯

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আজকের ভোরের সূর্যোদয় ঘটেছে আরেকটি নতুন বছরের বারতা নিয়ে। ২০১৮ সাল পেরিয়ে আমরা এখন পা রেখেছি ২০১৯ সালের আঙিনায়। স্বাগত নতুন বর্ষ ২০১৯।

নতুন স্বপ্ন আর সম্ভাবনা নিয়ে যাত্রা শুরু হলো নতুন বছরের। না পাওয়ার সব গ্লানি মুছে নতুন বছর অর্জন আর প্রাচুর্য্যে, সৃষ্টি আর কল্যাণে হেসে উঠবে-এই প্রত্যাশায় নববর্ষ ২০১৯ উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি প্রত্যাশা করেন নববর্ষে বিগত বছরের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা পেছনে ফেলে নতুন বছরে বাংলাদেশ অমিত সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘নববর্ষ সকলের মাঝে জাগায় প্রাণের নতুন স্পন্দন, নতুন আশা, নতুন সম্ভাবনা। খ্রিষ্টীয় নববর্ষ ২০১৯ সবার জীবনে অনাবিল আনন্দ ও কল্যাণ বয়ে আনুক ।’

প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক ধারা রক্ষা এবং জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জ্বীবিত করার ক্ষেত্রে ২০১৮ সাল জাতির ইতিহাসে একটি গৌরবোজ্জ্বল বছর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গত বছর ছিল বাংলাদেশের জন্য সাফল্যময় বছর।’

প্রধানমন্ত্রী মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার জন্য তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নতুন বছর সবার জীবনে অনাবিল সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনার জন্য তিনি মহান আল্লাহতায়ালার কাছে প্রার্থনা করেন।

বাংলাদেশে ২০১৮ সাল ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে অর্জনের বছর। এ বছর রাজনীতি, অর্থনীতি, কৃষি, জঙ্গি দমন এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ আশাতীত সাফল্য অর্জনসহ মধ্যম আয়ের দেশে এগিয়ে যাওয়ার পথে উন্নীত হয়েছে।

এ বছর বিশ্ব সূচকেও বাংলাদেশের অনেক সাফল্য রয়েছে। এছাড়াও রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। রাজনৈতিক পরিস্থিতি শান্ত থাকায় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনেও এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ।

তারই ধারাবাহিকতায় বছরের শেষে এসে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আবারো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই গতবছরে সবচেয়ে বড় অর্জন হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকবে এ অর্জন।

বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। গত ১০ বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ, গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন, কূটনৈতিক সাফল্য ও সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পৃথিবীর ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইট-প্রযুক্তির অভিজাত দেশের কাতারে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৮৬ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ২১.৮% এবং চরম দারিদ্র্যের হার ১১.৩%-এ দাঁড়িয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ১৭৫১ মার্কিন ডলার। নতুন বছরে শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের বই পাচ্ছে। শিক্ষার হার ৭৩ শতাংশ। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হয়েছে। সারাদেশে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু, ফ্লাইওভার, পাতাল সড়ক, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রেল, নৌ ও যোগাযোগ অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ হচ্ছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। সরকার বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

বছরের শেষ দিনগুলো নির্বাচনী উত্তাপে পার করেছে বাংলাদেশ। থার্টি ফার্স্ট নাইটের আগ মুহূর্তে ৩০ ডিসেম্বর হয়ে গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই ভোটে জয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।

আর এর মধ্য দিয়েই নতুন ভিশনে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যা দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়।

নানা ঘটনায় ২০১৮ সাল পার হলেও সামনের বছর সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বছরের শুরুর দিনটি শিক্ষার্থীদের কাছে মহা আনন্দের। এ দিনটিতে নতুন বই হাতে পাবে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধটাই যেন নতুনের আনন্দ বার্তা দেবে তাদের।

অন্যদিকে রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরনো বছর ছিল নানা কারণে আলোচিত। দুর্নীতির মামলায় বিরোধী জোটের নেতা খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো ছিল বড় ঘটনা। নির্বাচনে সব দলের অংশ নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপ আয়োজন ছিল বছরের আলোচিত ঘটনা।

Print Friendly

Related Posts