বড় চমক আসছে নতুন মন্ত্রিসভায়

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা দুই মেয়াদে সফলভাবে দায়িত্ব পালনের পর তৃতীয়বারের মতো শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন।

এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস গড়বেন তিনি। আরও দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনার জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তার নতুন মন্ত্রিসভায় বড় চমক রাখতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগকেও নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে শেখ হাসিনার।

আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় একাধিক নেতা জানান, ৩০ ডিসেম্বর ভোটে বিজয়ের পর দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের মধ্যে অনেকেই নিজ নিজ এলাকা থেকে ঢাকায় ফিরেছেন। বাকিরাও আজকালের মধ্যে ফিরবেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে দলের সিনিয়র নেতাদের পরামর্শ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দল ও জোটের বর্ষীয়ান নেতাদের পাশাপাশি নতুন মন্ত্রিসভায় নবীন নেতৃত্বও অগ্রাধিকার পাবে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে বিদায়ী মন্ত্রিসভার ৫৩ সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা এবার বাদ পড়তে পারেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া তৃণমূল পর্যায় থেকে জনপ্রিয় কয়েকজনকে মন্ত্রিসভায় আনা হতে পারে বলেও জানা গেছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ের পরে এখন চলছে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ এবং নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নানামুখী আলোচনা। এমন প্রেক্ষাপটে চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন সরকার গঠন ও মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা জানান, আগামীকাল বৃহস্পতিবার নবনির্বাচিত এমপিরা শপথ নেবেন। এর এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ১০ জানুয়ারির আগেই সংসদ সদস্য ও মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান শেষ করা সম্ভব হবে। গতকাল মঙ্গলবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আশা করি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারির আগেই শপথ শেষ হবে।

নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকালের মধ্যে নতুন এমপিদের গেজেট ও শপথের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে দেখা করবেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে সরকার গঠনের আহ্বান জানাবেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ১০ জানুয়ারির আগেই এমপি ও মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান শেষ করা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী সংসদের বিরোধী দলও নির্বাচিত হবে বলে জানান ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।

দল ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষতা-অভিজ্ঞতার পাশাপাশি সততার বিষয়টিকেও প্রাধান্য দেবেন। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির মনোনয়নবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ টেকনোক্র্যাট হিসেবে নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পেতে পারেন।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে থেকেই অর্থমন্ত্রী কে হবেন তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এরই মধ্যে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে তার পরিবর্তে তার ছোট ভাই ড. এ কে আবদুল মোমেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মোমেন এবং সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নাম আলোচনায় ছিল। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের নামও শোনা গেছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে তিনি আরও অন্তত এক বছর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকতে চান। সেক্ষেত্রে তাকে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী করা হতে পারে। তাহলে ড. মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেতে পারেন।

এদিকে শারীরিক অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন না। এ ছাড়া বিভিন্ন কারণে বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য বাদ পড়তে পারেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীরবিক্রম), পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এবং যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়।

দপ্তর রদবদলের সম্ভাবনা থাকলেও পুরনোদের মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় থাকছেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল লোটাস, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল, অর্থ এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উ শৈ সিং, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট ড. বীরেন শিকদার, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হিরু বীরপ্রতীক, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব।

এবারও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনা সংসদ নেতা হচ্ছেন। তবে বর্তমান সংসদের উপনেতা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় নতুন কাউকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হবে কি-না এ নিয়ে আলোচনা চলছে। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী একাদশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হচ্ছেন তা অনেকটাই নিশ্চিত। এবারের নির্বাচনে তিনি রংপুর-৬ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। বিদায়ী সংসদে অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া ডেপুটি স্পিকারের দায়িত্বে ছিলেন। নতুন সংসদের ডেপুটি স্পিকারের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে চলতি বছরের ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদি বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হবে। সরকারের পাশাপাশি দলীয় কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করার লক্ষ্যে শেখ হাসিনা আগামী জাতীয় সম্মেলনে শীর্ষ নেতৃত্বে ব্যাপক রদবদল করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে।

সূত্র: সমকাল

Print Friendly

Related Posts