ব্রি’র উদ্ভাবন সাফল্য গগনচুম্বি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এ পর্যন্ত ছয়টি হাইব্রিডসহ ৯৪টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে বেশ ক’টি প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল এবং উন্নত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। এগুলোর ফলন সনাতন জাতের চেয়ে তিন গুণ বেশি।

এ ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রেক্ষাপটে নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলার লক্ষ্যে ব্রি বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত ১১টি লবণ-সহিষ্ণু, দু’টি জলমগ্নতা সহিষ্ণু, তিনটি খরা সহিষ্ণু, একটি খরা পরিহারকারী, দু’টি শীত সহনশীল এবং চারটি জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।

অন্যদিকে বিভিন্ন ধরনের বৈরী পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার উপযোগী আরো ধানের জাত উদ্ভাবনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

আবার ধানের গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন ‘এ’ এবং আয়রন সমৃদ্ধ ধান উদ্ভাবনের কাজও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ব্রি উদ্ভাবিত সরু ও সুগন্ধযুক্ত বোরো মওসুমের জাত ব্রি ধান৫০ বা বাংলামতি রপ্তানি সম্ভাবনাময়। বর্তমানে দেশের ৮০ ভাগ জমিতে ব্রি উদ্ভাবিত ধানের চাষাবাদ হয় এবং এর থেকে আসে দেশের মোট ধান উৎপাদনের শতকরা ৯১ ভাগ।

ব্রি অডিটরিয়ামে ব্রি’র ‘বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ২০১৭-১৮’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শনিবার এসব তথ্য জানানো হয়।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান মো. ফজলে ওয়াহেদ খোন্দকার, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মীর নূরুল আলম, ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর, ব্রি’র পরিচালক (প্রশাসন ও সাধারণ পরিচর্যা) ড. মো. আনছার আলী। কর্মশালায় ‘গবেষণা অগ্রগতি ২০১৭-১৮’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রি’র পরিচালক (গবেষণা) ড. তমাল লতা আদিত্য।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক দেশে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার লক্ষ্যে কৃষিখাতে ভর্তুকি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং নতুন ধানের জাতসহ উন্নত প্রযুক্তি দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন প্রতিকূল পরিবেশ সহনশীল ধানের জাত ও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও উন্নয়নের জন্য ব্রি’র বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্রি’র প্রকাশনা ও জনসংযোগ বিভাগের প্রযুক্তি সম্পাদক ও প্রধান এম এ কাসেম জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধান গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের অর্জন ও অগ্রগতির বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তী পাঁচদিন ধরে চলবে কর্মশালার বিভিন্ন কারিগরী অধিবেশন। কর্মশালার কারিগরী অধিবেশনগুলোতে গত এক বছরে ব্রির ১৯টি গবেষণা বিভাগ ও নয়টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের গবেষণা ফলাফল সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সামনে উপস্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ব্রি গত দু’ বছরে একটি হাইব্রিডসহ মোট ১২টি উচ্চ ফলনশীল (উফশী) ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। নতুন উদ্ভাবিত ১২টি জাতের মধ্যে চারটি  রোপা আমন, তিনটি রোপা আউশ এবং পাঁচটি বোরো মওসুমে চাষ উপযোগী। এসব জাত হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ৭-৮ টন ফলন দিতে সক্ষম।

এছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্ভাবিত ব্রি ধান৭৫ এবং ব্রি ধান৮০ যার চাল সরু এবং সুগন্ধযুক্ত। ব্রি ধান৭৬ ও ব্রি ধান৭৭ অলবণাক্ত জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষ উপযোগী। ব্রি ধান৭৮ লবণাক্ত জোয়ার-ভাটা এলাকায় চাষ উপযোগী জাত। লবণাক্ততা সহনশীল বোরো জাত ব্রি ধান৬১ ও ব্রি ধান৬৭, জিঙ্ক সমৃদ্ধ  ব্রি ধান৬২, ব্রি ধান৬৪, ব্রি ধান৭২ ও ব্রি ধান৭৪,  ঐতিহ্যবাহী বালাম চালের অনুরূপ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এবং সরু বালাম নামে পরিচিত জাত ব্রি ধান৬৩, সরাসরি বপনযোগ্য আগাম আউশ ধানের জাত ব্রি ধান৬৫, খরা সহনশীল ও উচ্চ মাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ রোপা আমনের জাত ব্রি ধান৬৬, বোরো মওসুমের আদর্শ উফশী জাত ব্রি ধান৬৮ এবং কম খরচে আবাদযোগ্য ব্রি ধান৬৯। দেশে কৃষক মহলে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং  বোরো মওসুমে সর্বোচ্চ ফলন দিতে সক্ষম ব্রি ধান২৯ এর সমপর্যায়ের গুণাগুণ সম্পন্ন ব্রি ধান৫৮ এবং আমন মওসুমের জনপ্রিয় জাত বিআর১১ এর সমতুল্য ব্রি ধান৪৯। ব্রি ধান৫৮ এবং ব্রি ধান৪৯ জাত দুটি  যথক্রমে ব্রি ধান২৯ এবং বিআর১১ এর চেয়ে প্রায় এক সপ্তাহ আগাম।

তিনি জানান, ধান ফসলের উন্নত বালাই ব্যবস্থাপনা, স্থান ভিত্তিক শস্য বিন্যাস, কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা এবং যন্ত্রপাতিসহ শতাধিক ব্রি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সারাদেশে  কৃষক পর্যায়ে ব্যবহার করা হয়।  ব্রি উদ্ভাবিত দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্রটি সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানের পেটেন্ট অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

 

 

Print Friendly

Related Posts