কলকাতা বইমেলায়ও গর্জে উঠেছে বাংলাদেশ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ সল্টলেক করুণাময়ী সেন্ট্রাল পার্ক মেলা প্রাঙ্গনে ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা৷ ওইদিন বিকেলে ৪৩তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার শুভ সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্বোধনের দিন থেকেই বইমেলায় বই প্রেমীদের উপচেপড়া ভীড়।

বইমেলায় রয়েছে ৯ টি প্রবেশ পথ৷ একটি গেট সাহিত্যিক রমাপদ চৌধুরীর নামে৷ রয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি- সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় ও দিব্যেন্দু পালিতের নামে চিহ্নিত তিনটি প্যাভিলিয়ন।

এবারের বইমেলার ফোকাল গুয়াতেমালা। থিম কান্ট্রির পাশাপাশি এবার বইমেলার ফোকাস লেপচা। এবারের বইমেলায় থাকছে ৬০০টি বইয়ের স্টল এবং ২০০ লিটল ম্যাগাজিন। লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্য প্রয়াত কবি পিনাকী ঠাকুরের নামে। ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে মেলা। সময় প্রতিদিন দুপুর ১২টা থেকে রাত্রি ৮টা।

বইমেলা উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন দফতর ব্যবস্থা করেছে অতিরিক্ত ১৯০টি বাসের। বইমেলায় পৌঁছনোর জন্য বিশেষ বাসগুলো আসে হাওড়া স্টেশন, শিয়ালদহ স্টেশন, শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়, বেহালা ও গড়িয়া থেকে ৷ তবে ওই বাসগুলোকে মেলা প্রাঙ্গনের কাছাকাছি যাত্রীদেরকে নামিয়ে দেয়৷ কোনও বাসকেই বইমেলার সামনে দাঁড়াতে দেওয়া হয় না৷

৩ ফেব্রুয়ারি এসবিআই অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছিল কৃত্তিবাস পুরস্কার অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষন্দু মুখোপাধ্যায়, স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়, সুবোধ সরকার প্রমুখ। এবার পুরস্কার পান দুই তরুণ কবি নির্মাল্য মুখোপাধ্যায় এবং অর্পিতা কুণ্ডু।

bookfair+

দুই বাংলার সম্প্রীতির অনুষ্ঠান ‘বইসাঁকো’

২ ফেব্রুয়ারি বইমেলার চিত্রটা ছিল জমজমাট। এদিন বিকেল সাড়ে পাঁচটায় এসবিই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সৌহার্দপূর্ণ বই প্রকাশ অনুষ্ঠান ‘বইসাঁকো’। এমন অনুষ্ঠনের আয়োজন করে কলকাতার ‘পত্রভারতী’ এবং ঢাকার ‘অন্যপ্রকাশ’ প্রকাশনা।

দুই প্রকাশনার যৌথ উঠোগে প্রকাশিত হয় পাঁচটি নতুন বই। দুই দেশের দুই প্রকাশনা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে বইপ্রকাশ বাংলা প্রকাশনার ইতিহাসে নতুন ঘটনা। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রন্থাগারমন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। ছিলেন কথা সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার, ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, প্রচেত গুপ্ত, সত্যম রায়চৌধুরী-সহ বাংলাদেশের অতিথিবর্গ।

অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলেন “আমি অনেক বছর ধরে উপন্যাস লিখছি বাংলাদেশের কাগজে। মাজহার এবং ত্রিদিব হাত মেলালো, যৌথ প্রকাশনার যাত্রা শুরু করল– এই ভাবনাটা এর আগে কেউ ভাবেনি। ভাবলে কত যে ভাল হত। আমাদের যখন অল্প বয়স তখন এমন সুযোগ থাকলে আমরা আরও অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারতাম। কেন যে ওঁরা এত দেরি করল! আমাদের সময় এখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। খারাপ লাগে! কিন্তু একই সঙ্গে ভাল লাগে যাঁরা এই সুযোগ পেলেন তাঁদের কথা ভেবে। পশ্চিমবঙ্গের বই চট্টগ্রাম কিংবা তারও প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। আবার পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে যাবে বাংলাদেশের বই।”

অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান। তার গান শুনতে ভিড় জমান বইমেলায় বহু সাধারণ মানুষ।

rose-garden

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের থিম রোজ গার্ডেন

বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের থিম রোজ গার্ডেন নজর কাড়বে কলকাতা বইমেলায়। বাড়িটার সর্বশেষ দাম ধার্য হয়েছিল সাড়ে তিনশ কোটি টাকা৷ আইনি জটিলতা কাটিয়ে সেই টাকা দিয়ে সেই বিখ্যাত বাড়ি কিনে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার৷ আর সেই চোখ ধাঁধানো ভবনই এবার কলকাতা বইমেলার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের থিম৷ ঐতিহ্যের সোপান বেয়ে বিখ্যাত ঢাকার বিখ্যাত রোজ গার্ডেন কয়েকদিনের জন্য দর্শক-পাঠকদের নজরবন্দি হয়ে থাকবে৷ ঐতিহাসিক তথ্যে মিলছে, এই বাড়ি-ই আদতে আওয়ামী লীগের সূতিকাগার৷

প্রতিবারই কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ তার নিজস্বতা নিয়ে স্বমহিমায় হাজির থাকে৷ মেলা প্রাঙ্গণের সব থেকে নজরকাড়া প্যাভিলিয়নটি তৈরি করে বাংলাদেশ৷ আর ভাষা এক হওয়ার সুবাদে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকরা সেই প্যাভিলয়নে হামলে পড়েন৷ সংগ্রহ করেন ঢাকা থেকে প্রকাশিত বই৷ ফলে বাংলাদেশ সরকারের তৈরি এই প্যাভিলয়ন থাকে আকর্ষণের কেন্দ্রে৷ এবার নজরকাড়া গঠনশৈলী নিয়ে তৈরি করা হয়েছে গোলাপ বাগানের বাড়ি বা রোজ গার্ডেন ভবন৷

পাবলিশার্স অ্যান্ড গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দিবস অনুষ্ঠিত হবে বইমেলার শেষের আগের দিন অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি। সেদিন বাংলাদেশ থেকে চারজন বিশিষ্ট লেখক আসবেন। আমরা এবার অতিথি হিসেবে পেতে চলেছি ঢাকা ‘বাংলা একাডেমি’র মহাপরিচালক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজীকে। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে আসবেন বিখ্যাত গায়িকা রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।

book2+

বইমেলায় চলমান কবিতার গাড়ি

বিগত তিন বছরের মতো এবারও বইমেলায় হাজির ভাষানগর কবিতার গাড়ি। প্রতি বছর মাঠময় এই অভিনব গাড়িটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখে চমকে যান অনেকে, বিশেষত খুদেরা। সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্কে ৪৩তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার মাঠেও নতুন চমক নিয়ে হাজির কবিতার গাড়ি।

গাড়ির মধ্যমণি ভাষানগর পত্রিকার সম্পাদক সুবোধ সরকার। তিনি জানিয়েছেন, “ফেলে দেওয়া রিকশ ভ্যানের ওপর কবিতার গাড়িটি বানিয়েছেন শিল্পী-স্থপতি সুমন্ত ব্যানার্জী এবং তাঁর ছোট্ট মেয়ে অহনা ব্যানার্জী। গত তিনবছর ধরে অবিশ্বাস্য সাড়া পেয়েছি। জাতি-ধর্ম-ছন্দ-প্রকরণ-নির্বিশেষে কবিতার বই এখানে পাওয়া যায়। কে ক’দিন বাঁচব তার কোন গ্যারান্টি নেই! তার আগে খোলা আকাশের নীচে কবিতার গাড়ির সামনে এক খুড়ি চা নিয়ে বসলে কারওর কোনও জাত যাবে না।”

কবিতার গাড়ির দেয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে আধুনিক চিত্রকলা। শিল্পী সুমন্ত ব্যানার্জী জানিয়েছেন “মানুষের জীবনযাত্রা জটিল হয়ে যাচ্ছে, আবার তার মধ্যে সৌন্দর্যও আছে। মানুষের জীবনের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে– সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছি ছবির মধ্যে দিয়ে। বর্তমান সমাজ কীভাবে মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছে– সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে এবার। মার্বেল ডাস্ট ব্যবহার করেছি।”

গাড়ি ঘিরে প্রতিদিন চলবে গান-কবিতাপাঠ-আড্ডা। গতবার কবিতার গাড়ির সামনে গান গেয়েছিলেন আমেরিকান কবি বব হলম্যান। বইমেলার ৫ নম্বর গেটে, গিল্ড অফিসের সামনে সাধারণত দেখা যাবে গাড়িটিকে।

 

 

Print Friendly

Related Posts