উৎসবমুখর বসন্তবরণ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়ে উৎসবপ্রিয় বাঙালি বুধবার বরণ করে নিল পহেলা ফাল্গুন। দিনভর নাচ-গান ও কবিতায় মুখর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলা।

বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশের গ্রন্থমেলায়। বসন্তের আনন্দ আবাহনের পাশাপাশি নতুন বইটি সংগ্রহের তাগিদে অনেকেই গিয়েছিলেন গ্রন্থমেলায়। বাড়িয়েছেন মেলার ঔজ্জ্বল্য।

ফাগুনের প্রথম দিন বসন্ত বরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন এলাকাজুড়েই উদ্‌যাপনের মাত্রাটা ছিল চোখে পড়ার মতো। আর সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজনটি বসেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়। এখানেই ১৪০১ বঙ্গাব্দে সূচনা হওয়া বসন্ত আবাহনের অনন্য আয়োজনটি করে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ।

পঁচিশতম আয়োজনটিতে সকাল থেকে রাত অবধি নাচ-গান ও কবিতায় মুখরিত ছিল শিল্পাচার্য জয়নুলের স্মৃতিধন্য এ আঙিনা। বাঙালির মনন আলোড়িত করা রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, অতুলপ্রসাদ, জসীমউদ্‌দীন, শাহ আবদুল করিমের সৃষ্টিসম্ভারে সন্ধান মেলে বসন্ত আবাহনের এ আয়োজনে।

এছাড়া পরিষদ আয়োজিত পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ ও উত্তরার রবীন্দ্র স্মরণির মুক্ত ছিল বসন্ত বরণের আয়োজন। অনেকেই আবার উপভোগ করেছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্ত মঞ্চের বসন্ত্ম উৎসব। ‘বসন্তে ফুল গাঁথলো আমার জয়ের মালা, বইল প্রাণে দখিন-হাওয়া আগুন-জ্বালা’ প্রতিপাদ্যে ঋতুরাজ বন্দনার এ আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। লালমাটিয়ার বেঙ্গল বইঘরেও গান, কবিতা ও যাত্রাপালায় হয়েছে বসন্ত্ম বরণ। এর বাইরেও ঢাকাবাসীর অনেকেই কোনো আয়োজনে না গিয়েও নবীন বসন্তের উদাসী হাওয়া গায়ে মেখে ঘুরে বেরিয়েছে আপন খেয়ালে।

বেঙ্গল পরম্পরার সঙ্গীতালয়ের শিক্ষার্থী শিল্পীদের ধ্রুপদী যন্ত্রসঙ্গীতের মূর্চ্ছনায় শুরু হয় চারুকলার বসন্ত উৎসব। সেই সুরের স্নিগ্ধতা থামতেই শোনা যায় কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ। আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়ের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘বসন্তের আবাহন’। ভরাট কণ্ঠে আহ্‌কাম উল্লাহ্‌ পাঠ করেন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’।

কবিতার পথ ধরে আসে গান। লাইসা আহমেদ লিসা কণ্ঠে গীত হয় রবীন্দ্রসঙ্গীত। মিতা হকের নেতৃত্বাধীন সুরতীর্থের শিল্পীরা গেয়েছে বসন্ত্মের গান। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি ও প্রিয়াংকা গোপ গেয়েছেন নজরুলসঙ্গীত। গানের পথরেখায় আসে নাচ। ‘ভাবনা দোলা লাগিল আজি দক্ষিণ পবনে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় সম্মেলক নৃত্য। পরিচালনায় ছিলেন নৃত্যশিল্পী সামিনা হোসেন প্রেমা। এরপর ছিল সমবেত সঙ্গীত। সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সমবেত সঙ্গীতে পরিবেশিত হয় ‘বিহুর লগন’ শিরোনামের গান। ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’ পরিবেশন করেছে বহ্নিশিখার শিল্পীরা। বিমান চন্দ্র বিশ্বাস পরিবেশিত লোকসঙ্গীতের শিরোনাম ছিল ‘তোমার কুঞ্জ সাজাও গো’।

পূজা সেনগুপ্তের পরিচালনায় ‘মাদল বাজে, বাজে বাঁশের বাঁশি’ গানের সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন তুরঙ্গমী। এছাড়া লায়লা হাসানের পরিচালনায় ‘আজ বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’ গানের সুরে পরিবেশিত হয় নাচ। ‘ফাগুনেরও মোহনায়’ গানের তালে নাচ সরেছে স্পন্দনের শিল্পীরা। আয়োজনে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে রেওয়াজ পারফরর্মিং আর্ট। নৃত্য পরিবেশন করা অন্য দলগুলো ছিল ভাবনা, নটরাজ, নৃত্যনন্দন, অনন্ত রাঙামাটি (আদিবাসী)।

বসন্ত বরণের আয়োজনটিতে ছিল বসন্ত কথন পর্বটি। এতে অংশ নেন বসন্ত উদযাপন কমিটির সহ-সভাপতি এবং আয়োজনের সভাপতি শফিউর রহমান, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও আবৃত্তিশিল্পী আহ্‌কাম উল্লাহ্‌ এবং সঙ্গীতশিল্পী মাহমুদ সেলিম।

উৎসবে সাংস্কৃতিক আয়োজনে ফাঁকে ছিল আবির মাখানো পর্ব। সে রং যেনো লেগেছে সকলের মরমে। লাল-নীল-হলুদ রঙের আবির ছুঁয়েছে গাল থেকে কপালে। একে অন্যের কপালে ও গালে ছুঁয়ে দেয়া বর্ণবহুল আবিরের মাখামাখিতে উৎসবটি হয়ে ওঠে আরো রঙিন।

এ বছর বসন্ত উৎসরটি পূর্ণ করলো আয়োজনের ২৫ বছর। বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত আবারো আয়োজন চলে চারুকলার বকুলতলায়। পাশাপাশি ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চ, লক্ষীবাজারস্থ বাহাদুর শাহ্‌ পার্ক এবং উত্তরার ৩ নং সেক্টরের রবীন্দ্র স্মরণির উন্মুক্ত মঞ্চে বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা অবধি ছিল বসন্ত বন্দনার বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা।

Print Friendly

Related Posts