মধুবালার জীবনে এসেছিলেন জুলফিকর আলি ভুট্টো

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ অনিন্দ্য সুন্দরী সুপারস্টার অভিনেত্রী মধুবালার জীবনে এসেছিলেন জুলফিকর আলি ভুট্টো।

মধুবালার অল্প সময়ের জীবনে মিলেছে প্রচুর খ্যাতি। তার রূপে পাগল হয়েছে একের পর এক পুরুষ। সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, ভেঙেও গিয়েছে। কিন্তু জুলফিকর আলি ভুট্টোর সঙ্গে তাঁর প্রেমের কাহিনী আজও এক রহস্য। তার শেষের দিকের ‘প্রেমিকদের’ তালিকায় যাকে রাখা হয় তিনি পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো।

জুলফিকর আলি ভুট্টো তখন পাকিস্তান পাকাপাকিভাবে বসবাস করলেও ভারতের পার্লামেন্টে তাঁকে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিতর্ক এই নিয়ে যে, জুলফিকর আলি ভুট্টো যেমন পাকিস্তানের বাসিন্দা তেমনই দেশভাগ হওয়ার আগে তাঁদের ভারতেও প্রচুর সম্পত্তি রয়েছে এবং সেটা মুম্বাইতে। এটাই ছিল জুলফিকর আলি ভুট্টোর দাবি। তাঁর দাবি এও ছিল যে ভারতে থাকা তাঁর সমস্ত সম্পত্তি কোনওদিনই এক উদ্বাস্তুর সম্পত্তি হিসাবে পরিগনিত করা যাবে না।

১৯৫৮ সালে তিনি যখন পাকিস্তানের মন্ত্রী হন তখনই ভারতের রাজ্যসভায় এই বিতর্ক চরমে ওঠে। ষাটের দশকে তাই তাকে ভারতে আসতে হত। আসতে হত বোম্বেতেও। সেই সূত্রেই অনিন্দ্য সুন্দরী সুপারস্টার অভিনেত্রী মধুবালার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। মধুবালা তখন ‘মুঘল–এ–আজম’ ছবির শ্যুটিং করছেন। মাঝে সম্পর্কে চিড় ধরতে শুরু করেছে দিলিপ কুমারের সঙ্গে। মর্মাহত মধুবালার মন তখন কারোর কাঁধ চাইছে মাথা রাখার জন্য। সেই সময়ের কানাঘুষো শোনা যায়।

madhu

মধুবালার প্রয়োজনীয় কাঁধটি তখন বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের নবম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকর আলি ভুট্টো। শোনা যায় আনারকলির ঝলক পেতে তিনি প্রায়ই হাজির হতেন ‘মুঘল–এ–আজম’-এর সেটে। বলিউডে এই প্রেম কাহিনী এখনও আলেচিত। বলা হয় জুলফিকর আলি ভুট্টোর সঙ্গে মধুবালার এই সম্পর্ক খুব বেশীদিন স্থায়ী হয়নি।

অনেকের মতে সম্ভবত ভুট্টো বুঝে গিয়েছিলেন তাঁদের এই সম্পর্কের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। কারণ, মধুবালার জন্য তিনি শুধুই একটি ভরসার কাঁধ হতে পারেন। জীবনসঙ্গী হওয়ার মতো তাদের সম্পর্ক নেই। আসলে তখনও মধুবালা দিলিপ কুমারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন। প্রেম ব্যর্থ হওয়ার ব্যথা তিনি কোনওদিনই ভুলতে পারেননি।

এরপরেই মধুবালা বিয়ে করেন কিশোর কুমারকে। ‘চলতি কা নাম গাড়ি’ ছবিতে সেটেই কিশোর-মধুবালার পরিচয় এবং সম্পর্কের শুরু। ১৯৬০ সালে তাকেই বিয়ে করেন সুন্দরী অভিনেত্রী। মধুবালাকে নিয়ে তার বোনের লেখা জীবনীতে জানা যায়, কিশোর কুমারকে বিয়ে করলেও তিনি দিলীপ কুমারকেই ভালবাসতেন। এমনকি দিলীপ কুমারকে দেখানোর জন্যই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেছিলেন।

এক প্রাক্তন আইএএস অফিসার লতিফ ছিলেন মধুবালার মেয়েবেলার প্রেমিক। দিল্লিবাসী মধুবালা যখন মুম্বইতে চলে আসেন তখন তার দিল্লির দিলওয়ালে লতিফকে নাকি একটি গোলাপ ফুল দিয়ে এসেছিলেন। শোনা যায় লতিফ মধুবালার মৃত্যুর পর প্রত্যেক ২৩ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ মধুবালার মৃত্যু বার্ষিকীতে তার কবরে একটি গোলাপ রেখে যেতেন। এমনই ছিল তার ভালোবাসা।

মধুবালা ১৯৩৩ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী একটি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের এক টোব্যাকো কোম্পানিতে চাকরি করতেন; কিন্তু তার চাকরি চলে যাওয়াতে সংসারে অভাবের কারনে মধুবালা অভিনয়ে যোগ দেন।

এগারো ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম. মমতাজ জাহান নাম দিয়ে অভিনয় শুরু করলেও অভিনেত্রী দেবিকা রানী তার নাম দেন মধুবালা। মধুবালা শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে অভিনয় শুরু করলেও মূল নারী চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন ১৪ বছর বয়সে কিদার শর্মার ‘নীলকমল’ ছবিতে। সেই ছবির নায়ক ছিলেন রাজ কাপুর। অভিনয় জীবনে প্রায় ৭০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। ‘মুঘল-ই-আজম’-ই মধুবালার জীবনের শ্রেষ্ঠ ফিল্ম।

Print Friendly

Related Posts