দৃশ্যটি তুষারপাতের নয়, ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ দৃশ্যটি ইউরোপ কিংবা আমেরিকার কোনো দেশের তুষারপাতের নয়, দৃশ্যটি আমাদের দেশের। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ভোররাতে রাজশাহীর পুঠিয়াজুড়ে ভয়াবহ এ শিলাবৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রবীণরা বলছেন- তাদের ৬০ বছরের জীবনে এমন ভয়াবহ শিলাবৃষ্টি আগে কখনও দেখেন নি।

ভোরের সূর্য উঁকি দেওয়ার আগেই রাজশাহীতে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়। এতে সদ্য চোখ মেলা আমের মুকুলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টির আঘাতে রাজশাহীর পুঠিয়া, গোদাগাড়ী, তানোর, পবা, চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় আমের মুকুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

শিলাবৃষ্টির তীব্রতা এতোটাই ছিল যে, উপজেলার গ্রামগুলোতে টিনের চাল ছিদ্র হয়ে ঘরেও শিলা ঢুকে যায়। শিলাবৃষ্টি থামার তিন ঘণ্টা পরও বাইরে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছিল না। স্থানীয়রা কোদাল দিয়ে কিংবা কাঠ দিয়ে রাস্তার শিলা সরিয়ে চলাচলের উপযোগী করে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রমতে, রেকর্ড পরিমাণ শিলাবৃষ্টি হয়েছে পুঠিয়ার তিন ইউনিয়নে। যা এর আগে রাজশাহীতে কখনও হয়নি। উপজেলার বানেশ্বর, ভালুকগাছি ও জিউপাড়া ইউনিয়নে শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ টিনের চালের বাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। শিলার প্রকোপে টিনের চাল শুধু ছিদ্রই হয়নি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।

পুঠিয়ার জিউপাড়ার বাসিন্দা ও রাজশাহী জেলা পরিষদের সদস্য আবুল ফজল বলেন, ভোররাতে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। এর প্রকোপ এতোটাই বেশি ছিল যে, আমার বাড়ির আশেপাশের মানুষ ভয়ে চিৎকার শুরু করে। আমরাও ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। ভোরের আলো ফোটার পর বাইরে গিয়ে যা দেখলাম, তা ছিল অবিশ্বাস্য।

তিনি বলেন, আধাঘণ্টা স্থায়ী এ শিলাবৃষ্টিতে এলাকার ফসল তছনছ হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। মৌখিকভাবে স্থানীয় সাংসদ, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে জানানো হয়েছে।

মধুখালি এলাকার কৃষক তাহের আলী বলেন, আমার দুটো ঘরই টিনশেডের। শিলাবৃষ্টি শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরই মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। তখন টিন ছিদ্র হয়ে পুরো ঘরে শিলার স্তূপ জমা হয়। ভয়ে আমার স্ত্রী ও সন্তানরা তটস্থ হয়ে পড়ে। মাঠে পেয়াজ ও রসুনের চাষ ছিল। সকালে সেখানে গিয়েও দেখি, সব শেষ। এখন কী করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে আমের মুকুল ঝরে পড়েছে। তবে সঠিকভাবে আমের মুকুলের ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা না গেলেও এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন রাজশাহীর স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, শিলাবৃষ্টিতে আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। এতে ফলন কমবে। তবে রাজশাহীতে গত কয়েক বছরের ফলনের যে হার তাতে এখনও যা মুকুল অবশিষ্ট আছে তাতেও ফলন খারাপ হবে না।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, ভোর ৪টা ৪০ মিনিট থেকে ৫টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত এই শিলাবৃষ্টি স্থায়ী ছিল। এ সময় বজ্রপাতও হয়েছে। তবে বৃষ্টির সময় ঝড়ো হাওয়া ছিল না। ভোরের এই ৩৮ মিনিটে রাজশাহীতে ১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

Print Friendly

Related Posts