খেলা শুরুর পর ওয়েলিংটন টেস্টের তৃতীয় দিনেও বৃষ্টি

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ টানা বৃষ্টির কারণে ম্যাচের প্রথম দুই দিন টসই করা সম্ভব হয়নি। তাই সিদ্ধান্ত হয় ম্যাচের শেষ তিনদিন এক ঘণ্টা করে বেশি খেলা হবে। কিন্তু বৃষ্টির বাধায় তা আর সম্ভব হলো কই? ম্যাচের তৃতীয় দিন নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগেই খেলা শুরু হলেও শেষ করা যায়নি নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পরে। বরং বৃষ্টির কারণে প্রায় দেড়ঘণ্টা আগেই ‘স্টাম্পস’ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন দুই আম্পায়ার।

আবহাওয়ার পূর্ভাবাস অনুযায়ী ওয়েলিংটনে রোববার বৃষ্টি হওয়ার খুব বেশি সম্ভাবনা ছিল না। তবু হালকা বৃষ্টির আভাস ঠিকই দেয়া হয়েছিল। সেই আভাসেই মোটামুটি ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে ওয়েলিংটন টেস্টের তৃতীয় দিনেও। যে কারণে আবারও বন্ধ হয়েছে খেলা।

বৃষ্টি নামার আগে তৃতীয় দিনে খেলা হয়েছে সবমিলিয়ে ৭২.৪ ওভার। তখনো বাকি ছিলো দিনের অন্তত ২৫.২ ওভার। ম্যাচে টসে হেরে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৬১ ওভার ব্যাটিং করতে পেরেছে বাংলাদেশ দল, স্কোরবোর্ডে জমা হয়েছে মাত্র ২১১ রান। খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ১১.৪ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৮ রান করতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড।

বৃষ্টির কারণে প্রথম দুইদিন টসই হয়নি ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে। তৃতীয় দিন নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা আগে যখন হলো টস, তখন সহায় হলেন না ভাগ্যদেবী, হাসলেন নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। দুইদিন বৃষ্টি ও কভারের নিচে থাকা উইকেটে টসে জিতে বোলিং নিতে এক মুহূর্ত ভাবেননি কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিনই দেখা গিয়েছিল উইকেট পুরোটাই সবুজ, ঘাসের আধিক্য এত বেশি যে আউটফিল্ডের সঙ্গে উইকেটকে আলাদা করা বেশ মুশকিল হয়ে পড়ে। এমন পিচে ট্রেন্ট বোল্ট এবং টিম সাউদির রুদ্রমূর্তি ধারণের উদাহরণ খুঁজতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। তাই বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও সাদমান ইসলাম অনিকের জন্য এ দুই পেসারের প্রথম স্পেল সামাল দেয়া ছিলো বড় দায়িত্ব।

দুই টাইগার ওপেনারই তা করেছেন নিপুণতার সঙ্গে। সাউদি-বোল্টের শুরুর স্পেল সামলেছেন পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে। তামিম-সাদমানের উদ্বোধনী জুটিতেই বাংলাদেশ পায় ৭৫ রান। কিন্তু পরের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২১১ রানের বেশি যায়নি দলের সংগ্রহ। টানা তৃতীয় ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস খেলা তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৭৪ রান।

ব্যাট করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে বাংলাদেশ করে বিনা উইকেটে ৪২ রান, বোল্টের ৫ ওভারেই আসে ৩০ রান। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে প্রথম দশ ওভারে মোট ৮টি চারের মার আসে তামিম-সাদমানের ব্যাট থেকে।

হ্যামিল্টনে সিরিজের প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়েছিলেন এ দুই বাঁহাতি ওপেনার। ওয়েলিংটনের প্রথম ইনিংসেও বজায় থাকল ধারাবাহিকতা। ইনিংসের দ্বাদশ ওভারেই উদ্বোধনী জুটি ও দলীয় পঞ্চাশ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। এনিয়ে মাত্র তৃতীয়বারের মতো টানা তিন ইনিংসে পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশের ওপেনাররা।

তামিম-সাদমানকে দেখে তখন মনে হচ্ছিলো ব্যাটিং যেন খুবই সহজ। তবু একুশতম ওভারে ঘটে বিপত্তি। দলীয় ৭৫ রানের মাথায় কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের দারুণ এক ডেলিভারিতে আউটসাইড এজ হয়ে স্লিপে ধরা পড়েন সাদমান। ফলে টানা তৃতীয় ইনিংসে অল্পতেই সমাপ্তি ঘটে ২৩ বছর বয়সী এ ওপেনারের সম্ভাবনাময় ব্যাটিংয়ের। আউট হওয়ার আগে ৪ চারের মারে ৫৩ বলে ২৭ রান করেন সাদমান।

দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুল হককে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন তামিম। যেখানে সিংহভাগ রানই আসে অগ্রজ ওপেনারের ব্যাট থেকে। ইনিংসের ২৪তম ওভারে চলতি সিরিজে টানা তৃতীয় ইনিংসে ব্যক্তিগত ফিফটি তুলে নেন তামিম। পঞ্চাশ করতে ৮১টি বল খেলেন তিনি। এ নিয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয়বারের মতো ফিফটির ‘হ্যাটট্রিক’ করেন তিনি। তামিমের দৃঢ় ব্যাটিংয়ের সামনে খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না কিউই বোলাররা।

ঠিক তখনই স্বাগতিক বোলারদের মুখে হাসি ফোঁটান মুমিনুল। নেইল ওয়াগনারের লেগস্টাম্পের বাইরে করা শর্ট বলে সময়মতো ব্যাট সরাতে পারেননি বাঁহাতি এ টপঅর্ডার, বল গ্লাভসে লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক বিজে ওয়াটলিংয়ের হাতে, সমাপ্তি ঘটে মুমিনুলের সংগ্রামী ইনিংসের। জোড়া বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৮ বলে ১৫ রান করেন মুমিনুল।

মুমিনুলের বিদায়ের পরেও দুই উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে প্রথম সেশনটা ভালোভাবে কাটানোর ইঙ্গিতই দিচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির ঠিক আগে আবারো ওয়াগনারের শর্ট বলে ধরা পড়েন মিঠুন। ওভারের পঞ্চম বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর শেষ বলে ঠিকই আউট হন চার নম্বরে নামা এ মিডলঅর্ডার। ১০ বলে মাত্র ৩ রান করেন তিনি।

৩ উইকেটে ১২৭ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল তখন অপরাজিত ৭২ রানে, সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির। কিন্তু তিনিও ফিরে যান বিরতি থেকে ফিরে এক ওভার পরেই। পুল এবং ফ্লিকের মাঝামাঝি এক শটে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন তামিম।

১৩৪ রানের মাথায় ৩৪ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তিনি। ১১৪ বলে ১০ চারের মারে ৭৪ রান করেন তামিম। এরপরের ব্যাটসম্যানরা কেউই তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। পাল্টা আক্রমণ করে সৌম্য সরকার ২ চার ও ১ ছয় হাঁকিয়ে আউট হন ২৪ বলে ২০ রান করে।

উইকেটে তখন শেষ দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান লিটন দাস এবং মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু তাদের দুজনের জুটি স্থায়ী হয় মাত্র ৭.২ ওভারে, যোগ করে ১৬ রান। ওয়াগনারের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ত্রিশ গজের বৃত্তের মধ্যেই ধরা পড়েন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, করেন ১৩ রান।

বিনা উইকেটে ৭৫ রান থেকে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান নিয়ে দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়ে বাংলাদেশ। তবে সপ্তম উইকেটে সে যাত্রা পার করান লিটন দাস এবং তাইজুল ইসলাম। দুজন মিলে গড়েন ৩৮ রানের জুটি। ২০৬ রানের মাথায় সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাইজুল আউট হওয়ার পর মাত্র ৫ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। শেষদিকে লড়াই করা লিটন খেলেন ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস।

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে হতাশ হননি পাঁচ বোলারের কেউই। সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন নেইল ওয়াগনার। ট্রেন্ট বোল্ড নিয়েছেন ৩ উইকেট। এছাড়া ১টি করে উইকেট গিয়েছে টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের দখলে।

বাংলাদেশ দল নিজেদের ইনিংসে মাত্র ২১১ রানে অলআউট হলেও উদ্বোধনী জুটিতে এসেছিল ৭৫ রান। কিন্তু নিউজিল্যান্ড পায়নি ভালো শুরু। তাদের ইনিংসের শুরুতেই জোড়া আঘাত হেনেছেন সিলেটের পেসার রাহী। মাত্র ৮ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন দুই কিউই ওপেনার টম লাথাম এবং জিত রাভাল।

তৃতীয় সেশনে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আবু জায়েদ রাহী ও ইবাদত হোসেনের বোলিংয়ের বিপক্ষে অস্বস্তিতে ছিলেন রাভাল এবং লাথাম। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে লাথামের বেশ কঠিন পরীক্ষাই নেন রাহী। ওভারের শেষ বলে বাঁহাতি এ ওপেনারকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করে সাজঘরে পাঠান ২৫ বছর বয়সী এ পেসার। লাথাম করেন ৪ রান।

মাত্র ৫ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে খোলসবন্দী হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড। দ্বিতীয় উইকেটে রক্ষণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন কেন উইলিয়ামসন এবং জিত রাভাল। অপরপ্রান্ত থেকে দারুণ লাইন-লেন্থে বোলিং করেন ইবাদত। নবম ওভারে যার ফায়দা নেন রাহী। এবার তিনি সাজঘরে পাঠান আরেক ওপেনার রাভালকে। শর্ট কভারে ক্যাচটি ধরেন সৌম্য সরকার।

বৃষ্টি নামার আগপর্যন্ত ১১.৪ ওভার শেষে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ৩৮ রান। রস টেলর ১৩ বলে ১৯ এবং অধিনায়ক উইলিয়ামস ১৭ বলে ১০ রান নিয়ে অপরাজিত রয়েছেন। চতুর্থ দিন সকালে ৮ উইকেট হাতে রেখে ১৭৩ রান পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামবেন এ দুই ব্যাটসম্যান।

Print Friendly

Related Posts