আফ্রিকার জঙ্গলের ত্রাস

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মাথা আকাশে ঠেকে যাওয়ার মতো বড় বড় গাছ৷ ঝাঁকড়া ঘন সবুজ অরণ্য৷ দক্ষিণ আফ্রিকার ঘন জঙ্গলেই এখন চোখ রাঙাচ্ছে পিঁপড়ের মতো এক ছোট্ট পোকা৷ হ্যাঁ, কালো কুচকুচে পোকার গ্রাসে চলে যাচ্ছে একের পর এক বড় গাছ৷

প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করার পর নিজেরাই বিস্মিত অরণ্য গবেষকের দল৷ খুদে পতঙ্গের গাছখিদে দেখে তাঁদের আশঙ্কা, দ্রুত কোনও ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই বন সাফ হয়ে যাবে৷ এই মুহূর্তে পোকা বধের উপায় খুঁজতে হিমশিম দশা তাঁদের৷

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে প্রায় সাত সমুদ্র, তেরো নদী পেরিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ চার বছর ধরে এই পথেই দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া থেকে আফ্রিকার ঘন জঙ্গলে পৌঁছে বসতি গেড়েছে এই পোকার দল৷

গবেষণায় জানা গিয়েছে, কাঠবোঝাই জাহাজের মধ্যে কোনওভাবে ঢুকে সমুদ্র পেরিয়ে এসে দক্ষিণ আফ্রিকার বন্দরে ভিড়েছে৷ এবং চুপিসাড়ে ঢুকে পড়েছে জঙ্গলের মধ্যে৷ এই মুহূর্তে কেপ টাউনই হয়ে উঠেছে তাদের স্বর্গরাজ্য৷

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এও নাকি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব৷ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের থাকার উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে৷ তাই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এতটা পথ উজিয়ে আফ্রিকায় ঠাঁই নিতে হয়েছে৷ অরণ্য ধ্বংসকারী পোকার এই আগমনকে মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না পরিবেশ বিজ্ঞানীরা৷ এর প্রভাব যে ধ্বংসাত্মক হবে, তা আগাম টের পেয়েছিলেন বলে দাবি তাঁদের৷

জোহানেসবার্গের জঙ্গলের বৈশিষ্ট্য, নীল আকাশের নিচে ঘন সবুজ চাঁদোয়ার আকার গাছের শ্রেণি৷ যা কিনা শুধুই প্রকৃতির দান নয়, অরণ্যজীবীদের যত্নে এক সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা গাছেদের এমন সৌন্দর্য রচনা৷ কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এই অরণ্যের অন্তত ৩০ শতাংশ পতঙ্গের পেটে চলে গিয়েছে৷ এমন চলতে থাকলে আফ্রিকার ফল এবং ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়বে৷ বিশেষত বাদাম, ফলের রস এবং কাঠ ব্যবসায় ঝুঁকি বাড়বে৷

প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ঘাতক পতঙ্গদের মূল টার্গেট কিন্তু গাছের কাঠ অর্থাৎ কাণ্ড এবং শাখাপ্রশাখা৷ তা কুরে কুরে খেতে গিয়েই গাছের মৃত্যু ঘটায়৷

গবেষক ডে বিয়ারের কথায়, ‘ এধরনের পতঙ্গরা জঙ্গলে ঢোকে একটি বিশেষ গাছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে৷ কিন্তু এরা যে হারে গাছেদের উপর হামলা চালাচ্ছে, তাতে আমাদের কাজের খেই হারিয়ে যাচ্ছে৷ কাজ করতে অসুবিধা হচ্ছে৷ কোনও কোনও গাছ অচিরেই মারা যাচ্ছে৷ আবার কেউ কেউ শক্তপোক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এতটুকুও নষ্ট হয়নি৷ এই পর্যবেক্ষণ আমাদেরকে বিভ্রান্ত করছে৷’ বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে৷ তাতে উঠে এসেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য৷ দক্ষিণ আফ্রিকার বনাঞ্চলের স্যাঁতসেতে মাটি ওই পতঙ্গের বংশবৃদ্ধির জন্য একেবারে আদর্শ৷ যাকে বলে ঝাড়বংশে বেড়ে চলেছে পোকার দল৷

কিন্তু এর হাত থেকে কি জঙ্গল বাঁচানোর কোনও উপায় নেই? হ্যাঁ, সেই পথও বের করেছেন৷ বলা হচ্ছে, এক বিশেষ ধরনের ইনজেকশন প্রয়োগে পোকার আক্রমণ আটকানো যেতে পারে৷ যদিও প্রয়োজনের তুলনায় বাস্তবে ইনজেকশন প্রয়োগ করা বেশ কঠিন৷ পরিকল্পনামাফিক সব করতে অন্তত ১০ বছর সময় লাগবে৷ ততদিনে হয়ত আরও অনেক গাছই সাফ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের৷

Print Friendly

Related Posts