কাপ্তাই লেক : সৃষ্টিকর্তার অপরূপ জলভূমি

শিউল মনজুর

শুভলং যেতে যেতে আমাদের নৌযানটি যতই কাপ্তাই লেকের গভীরের দিকে যাচ্ছিল ততই আমরা মুগ্ধ হচ্ছিলাম। সেই ছোটবেলা থেকে কাপ্তাই লেক এর গল্প লোকমুখে শুনে আসছিলাম। বই এর পাতায়ও লেকের ছবি দেখেছি। দেখেছি ক্যালেন্ডারের রঙিন পাতায়। আর মনে মনে ভেবে রেখেছি তোমাকে দেখব একদিন কাপ্তাই লেক।

দেখলাম, কাপ্তাই লেকের অপূর্ব সৌন্দর্য। মহান আল্লাহপাক দেখালেন অপূর্ব সৌন্দর্যের জলভূমি। চারদিকে পাহাড় আর মাঝখানে জলভূমি। জলভূমির উপর দিয়ে ছুটে চলেছে নৌকা, ইঞ্জিনচালিত নৌকা, স্প্রীডবোর্ড।

রাঙামাটির এই নান্দনিক লেকটি শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর বিস্তৃতি শহর পেরিয়ে আশপাশের থানা ও উপজেলাকে স্পর্শ করেছে। যে কারণে এখানে লেকের ও জলযানের গুরুত্ব জনগণের কাছে খুব বেশি। আবার এই লেকের পাশেই রয়েছে সৌন্দর্যের আরেক স্থান শুভলং ঝর্ণা এবং আরেকদিকে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের নির্মিত ঝুলন্ত ব্রীজ। যে কারণে লেকটির বাণিজ্যিক গুরুত্বও রয়েছে।

পাহাড়ে পাহাড়ে রোপন করা হয়েছে পেপে, কলা, আম, কাঠালসহ নানা রকম ফলের গাছ। লেকে জাল ফেলে মাছ ধরছে ধীবরেরা। মহিলারাও নৌকা চালিয়ে পাড়ি দিচ্ছে গন্তব্যস্থানে। সেই সাথে দূর দূরান্তের যাত্রী নিয়ে ছুটে চলেছে ছোট বড় শত শত ইঞ্জিন নৌকা। কাপ্তাই লেক ঘিরে মানুষের এই ব্যস্ততা নির্মল আনন্দ দেয়।

মাঝে মাঝে লেকের মধ্যে ছোট ছোট দ্বীপ সদৃশ্য জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে রেস্টুরেন্ট। তাছাড়া মাঝে মাঝে পাহাড়ের কিনারে দেখা যায় ছোট বড় রেস্টুরেন্ট। এ সব রেস্টুরেন্ট এর ঘাটে ঘাটে পর্যটকদের নৌকা ভিড় করে আছে। আবার কোনো কোনো পাহাড় গুলোর চূড়ায় বৌদ্ধমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। এই লেকের মধ্যদিয়েই ছুটে চলেছে বাঁশের ভেলা। সম্ভবত বাঁশগুলো কাপ্তাই পেপার মিলের জন্য অথবা নির্মাণ শিল্পে ব্যবহারের জন্য দূরের গন্তব্যে যাচ্ছে। লেকঘিরে এতোসব দৃশ্য সত্যিই আকর্ষণীয়। প্রকৃতির মধ্যে এইসব দৃশ্য পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয়।

লেকের মধ্যদিয়ে যেতে যেতে, কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য দর্শনে মুগ্ধ আমরা আরেকবার শীত মৌসুমে বেড়ানোর স্বপ্ন রোপন করতে করতে শুভলং ঝর্ণার কাছাকাছি চলে আসি। পর্যটন মোটেলের ঘাট থেকে এখানে আসতে প্রায় ২ঘন্টারও বেশি সময় লেগে গেলো। কিন্তু কিভাবে সময়টা পার হয়ে গেলো, আমরা তিনটি পরিবারের বারজন সদস্য কিছুই বুঝতে পারলাম না। এর মধ্যে আমাদের ক্ষুদে ক্যামেরাম্যানরা ছবি তুলেছে অসংখ্য।

অবশ্য কাপ্তাই লেকসহ রাঙামাটি ঘুরে বেড়ানোর আয়োজন করার জন্য আমাদের টিম লিডার বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের উপ পরিচালক মুখলেছুর রহমান রিপন সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। এই গ্রীষ্মকালীন সময়ে তাঁর প্রচেষ্টাতে এ রকম দর্শনীয় স্থান দেখতে পেয়ে আমরা সত্যি আনন্দিত।

কাপ্তাই লেক, শুভলং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রীজ দেখার জন্য আলাদা আলাদা সময় ব্যয় করতে হয় না। এ সব দর্শনীয় জায়গাগুলি দেখার জন্য চট্রগ্রাম শহর থেকে রাঙামাটির বাসে অথবা কার, লাইটেস ভাড়া করে আসা যায়। তবে রাঙামাটি আসতে দুর্গম পাহাড়ী রাস্তা ব্যবহার করে আসতে হয় সেহেতু রাতের চেয়ে দিনের বেলা ভ্রমণ করাই উত্তম।

চট্রগ্রাম থেকে রাঙামাটি আসতে প্রায় চারঘন্টা সময় লাগে। কাপ্তাই লেক কিংবা শুভলং ঝর্ণা দেখার জন্য রাঙামাটি শহরের বিভিন্ন জায়গায় নৌঘাট রয়েছে। যে কোন ঘাট থেকেই নৌযান ভাড়া করে কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রীজ ও শুভলং ঝর্ণা পরিদর্শন করা যায়। ভাড়ার পরিমাণ নির্ভর করে সময়ের উপর। আবার প্যাকেজ সিস্টেমও আছে। তবে দর কষাকষির সুযোগও আছে।

 

শিউল মনজুর: কবি ও কথাসাহিত্যিক।

Print Friendly

Related Posts