মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বৈশাখের বাতাবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঙ্গালিরা নিজেদেরকে তুলে ধরছেন স্বমহিমায়। এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার স্লোগান ছিল ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে।’ বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ৩০ বছরে পা দিল এ বছর। এবারের শোভাযাত্রার স্লোগানটি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘নৈবেদ্য’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেয়া।

রোববার সকাল ৯টায় মঙ্গল শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর শাহবাগ ঘুরে টিএসটি মোড় হয়ে আবার চারুকলার সামনে গিয়ে ৯টা ৩৫ মিনিটের দিকে শেষ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন শোভাযাত্রায়।

শোভাযাত্রা উপলক্ষে ডিএমপির পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা। ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে প্রথমে র‌্যাব-৩ এর মোটর পেট্রোলিং টিমও তারপর একটি কার পেট্রোলিং টিম এগিয়ে সাথে ছিল। তার পেছনে ছিল ডিবির একটি টিম।

শাহবাগ পৌঁছানোর পর সোয়াটের একটি বিশেষ দল মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেয়।

নিরাপত্তার স্বার্থে সরকারের পক্ষ থেকে আগেই নির্দেশ ছিল, এবারের শোভাযাত্রায় মুখে কোনো মুখোশ ব্যবহার করা যাবে না, তবে মুখোশ হাতে প্ল্যাকার্ড হিসেবে রাখতে হবে। এছাড়াও মঙ্গল শোভাযাত্রায় ভুভুজেলা নিষিদ্ধ থাকবে।

শোভাযাত্রা উপলক্ষে সকাল থেকেই টিএসসি, দোয়েল চত্বর, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকে। নয়টার মধ্যেই পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। লাল-সাদা পোশাকে উচ্ছল নারীদের মাথায় শোভা পায় নানান রঙ্গের ফুলের টায়রা। তরুণদের পরনে ছিল লাল-সাদা পাঞ্জাবি।

বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা। নানা প্রতীক, চিত্র আর মুখোশের মাধ্যমে অশুভ শক্তির বিনাশ কামনা করা হয়; প্রার্থনা করা হয় সত্য, সুন্দর এবং মঙ্গলের জন্য।

এবারের শোভাযাত্রার শিল্প-কাঠামোগুলোর একটিতে বাঘের মুখ থেকে কাঁটা তোলার চিরায়ত গল্পটি উপস্থাপিত হয়েছে বাঘ ও বকের অনুষঙ্গে। ছিল মঙ্গলের বারতা পেঁচা। সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে ছিল ছাগলের কাঠামো। এছাড়া ছিল দুই মাথা ঘোড়া, দুই পাখি ও কাঠঠোকরা। শোভাযাত্রায় আরও ছিল মা ও শিশু এবং বাঘের মুখোশ, টেপাপুতুল, রাজা-রানির মুখোশ, সূর্য ইত্যাদি।বৈশাখ-নতুন বছর-বাংলা নববর্ষ

১৯৮০’র দশকে স্বৈরাচারী শাসনের বিরূদ্ধে সাধারণ মানুষের ঐক্য এবং একইসঙ্গে শান্তির বিজয় ও অপশক্তির অবসান কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রবর্তন হয়। ওই বছরই ঢাকাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় এই আনন্দ শোভাযাত্রা।

এরপর থেকে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক-শিক্ষার্থীগণ পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার উদ্যোগ প্রতি বছর অব্যাহত রাখে।

Print Friendly

Related Posts