পহেলা বৈশাখে জাবিতে শোকের মাতম

জাবি প্রতিনিধি: চৈত্রের শেষ দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. নূরুজ্জামানের মৃত্যুতে বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা সহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

রোববার সকাল দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবন চত্বরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম এক বক্তব্যে মৃত নূরুজ্জামানের প্রতি শোক প্রকাশ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এদিকে নুরুজ্জামানের মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকাকে দায়ী করে মানববন্ধন, কালো ব্যাচ ধারণ, বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

নুরুজ্জামানের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশাসনকে দায়ী করে সকাল দশটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত আদিব মুনিম আরিফ, ইয়াসিন আরাফাত বর্ণ, খান মোহাম্মদ রিয়াদ বিল্লাহ, ইয়াহিয়া জিসান ও রায়হান রহমান সহ ছয় শিক্ষার্থী শহীদমিনার পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। বেলা সাড়ে বারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধন কর্মসূচী শেষে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনে অবস্থান করে। এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আটদফা দাবি পেশ করেন।

দাবিগুলো হলো- নুরুজ্জামানের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে তিন দিনের মধ্যে ব্যবস্থা নিতে হবে, পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টার বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে, ভবন সম্প্রসারণ করতে হবে, সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা দিতে হবে, আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করতে হবে, প্যাথলজি বিভাগের উন্নয়ন করতে হবে, অভিজ্ঞ ডাক্তারের পদ সৃষ্টি করতে হবে এবং বাইরের হাসপাতালে হস্তান্তর করলে রোগীর ব্যয়ভার প্রশাসনকে বহন করতে হবে।

পরবর্তীতে বিকাল চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. আমির হোসেন, উপ উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নূরুল আলম, প্রক্টর ফিরোজ উল হাসান, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক বশির আহমেদ, প্রোভোষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত হয়ে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নেয়।

এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বুকে ও পেটে ব্যথায় আক্রান্ত ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. নূরুজ্জামানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নেয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ড. তরিকুল ইসলাম তাকে গ্যাস্ট্রিকের প্রাথমিক চিকিৎসা দিলে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে রাত সোয়া নয়টায় তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হলে পথেই তার মৃত্যু হয়।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. হরনাথ সরকার জানান, ‘শ্বাসকষ্ট থেকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে নুরুজ্জামানের মৃত্যু হয়।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক ড. ইনামুর রশিদ বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই বারবার রোগীকে এনাম মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেছি। ‘লোক আসছে’ বলে তার বান্ধবী কালক্ষেপন করেছে। রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে গেলে রাত নয়টার পরে তাকে জোরপূর্বক এনাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।’

Print Friendly

Related Posts