প্রতিটি পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার করতে চায় জাপাআ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২৩ এপ্রিল পালিত হলো বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব বা পাঠাগার দিবস। এই দিবসকে অনেকে আবার বিশ্ব বই দিবসও বলেন। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি পালনে জাতীয় পাঠাগার আন্দোলন-জাপাআ ‘বই পড়ি পাঠাগার গড়ি’- স্লোগানে মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর কাটাবনে দীপনপুর গ্যালারিতে আয়োজন করে আলোচনা সভা, পাঠাগার উদ্বোধন এবং কবিতা সন্ধ্যার। এ সময় সারাদেশ ১০টি নতুন পাঠাগার উদ্বোধন ও প্রতিনিধিদের হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।

পাঠাগারগুলো উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি এশিয়ার এডুকেশন এক্সিলেন্স এওয়ার্ড প্রাপ্ত শিক্ষাবীদ ও গবেষক প্রফেসর ড. এম ফিরোজ আহমেদ।

IM-7

বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রগতিশীল চিন্তাবীদ ও অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হোসেন।

আলোচক ছিলেন, কৈশর তারুণ্যের বই-এর সভাপতি তুষার আবদুল্লাহ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ট্রাভেলার ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী।

লাবণ্য রেজা ও মহিমা বাধনের যৌথ সঞ্চালনায় এবং চ্যানেল ২৪ এর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরিফুল সাজ্জাত এর সভাপতিত্বে বিশ্ব পাঠাগার দিবসে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন নো ভ্যাট অন এডুকেশন আন্দোলনের উদ্যোক্তা ও সংগঠক এবং জাপাআ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ইঞ্জি. আরিফ চৌধুরী শুভ।

তিনি বলেন, প্রতিটি পাঠাগারে আমরা একটি স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু কর্ণার’ করতে চাই। এই কর্ণারে বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতা বৃত্তান্ত থাকবে। পাঠক যেন খুব সহজে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতে পারে।  মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙ্গালী জাতির পিতাকে প্রতিটি পাঠক যেন নিজ গ্রাম থেকে জানতে পারে সে ব্যবস্থা করতে চাই আমরা। বঙ্গবন্ধুর বৈষম্যহীন অহিংস সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পাঠাগার আন্দোলনের বিকল্প নাই।

IM-4

প্রধান অতিথি ড. এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, পাঠাগার আন্দোলন এই সময়ের জন্য একটি আলোক বর্তিকা হিসেবে কাজ করবে যদি পাঠাগার গড়া খুব কষ্টকর। তবুও এই যুবকরা যে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে সেটির সাথে আমিও একাত্মতা পোষণ করলাম।

বিশেষ অতিথি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, বই পড়ি পাঠাগার গড়ি স্লোগানটা আমার কাছে ভালো লাগলো। এই তরুণরা বই পড়ে নিজেকে জানুক। এগিয়ে যাক। কিন্তু কি বই পড়বো? এখনতো বাজারে যা আছে তা হলো কয়েকটি কাগজের বাণ্ডিল। এই সব পড়ে আপনারা কি মজা পান, আমি জানি না। তবে কিছু বই এখনও লেখকরা লেখেন যা পাঠকদের সত্যি সত্যি মনোরঞ্জন দেয়। রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের সমকক্ষ্য আমরা আজও কেউ হতে পারিনি। সৃজনশীল লেখা বলতে বোঝায়, যে বই এখন বাজারে বেশি চলে সেটি। কিন্তু এইসব বইয়ে আধুনিকতা থাকলেও বেশিরভাগ বইয়েরই মান নেই। সাহিত্য বোধ নেই।  যে বই মানুষকে সমালোচনার বোধ সৃষ্টি করতে পারে না , সেটি প্রাণহীন বই। আমি আপনাদের সেই বই পড়তে বলবো যে বইতে প্রাণ আছে।

তিনি আরো বলেন, শুধু বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার বই যারা লেখেন তারাও আদৌ কতটুকু জেনে পড়ে লেখেন সেটিও আমার সন্দেহ আছে। তাই পাঠাগার আন্দোলনের সদস্যদের বেশি বেশি বই পড়তে হবে। জানতে হবে আসল আর নকল বইয়ের পার্থক্য। পাঠাগারের মাধ্যমে রক্তপাতহীন সমাজের দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে।

IM-3

প্রথম আলোর যুগ্ম-সম্পাদক সোহরাব হোসেন বলেন, আগের দিনে যেসকল পাঠাগার ছিল সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। বেশিরভাগ পাঠাগারে সিডি আর চায়ের দোকান বসছে। পাঠাগার আন্দোলন শুধু পাঠাগার গড়লে হবে না, এই সকল পাঠাগারগুলোকে পুনরায় চালুর উদ্যোগও তাদের নিতে হবে।পাঠাগারের যে কাজ পাঠচক্র করা সেটি তৈরি করতে হবে।

কৈশর তারুণ্যের বই-এর সভাপতি তুষার আবদুল্লাহ বলেন, বই আছে, পাঠক নাই। পাঠাগার আছে বই নাই। আবার পাঠাগারও নাই বইও নাই। তবুওতো পাঠাগার গড়ার কাজ হচ্ছে। আমার জানামতে এমন কাজ তারাই করে যারা শুধু বই ভালোবাসে। ছোটছোট বাচ্চারা স্কুল কলেজে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য বইমেলা করি আমি। কিন্তু তাতেও তেমন একটা সাড়া দেখছি না। তবে আগ্রহ যে একেবারে নেই তা না। এইসব মেলায় শিক্ষার্থীদের বইয়ের সাথে পরিচয় হয়। আমাদের উচিত আমাদের বাচ্চাদের পাঠাগারমুখি করা।

ট্রাভেলার ও লেখক এলিজা বিনতে এলাহী বলেন, আমি ভ্রমণ করি। আমি এভাবেই শিখি। আপনাদের আমি বলবো, আপনারা সময় পেলেই বেরিয়ে পড়বেন। আপনারা যদি আপনাদের জেলা সম্পর্কে জানেন তাহলে আপনারা গর্ববোধ করবেন এই ভেবে যে, আপনার জেলাতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ আছে। যা আপনি আগে জানতেন না। পাঠাগারগুলো ইচ্ছে করলে এই সকল সম্পদের স্বাক্ষি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু যে সমাজে পাঠাগার নাই সে সমাজে ইতিহাস কোথায় সংরক্ষিত থাকবে। তাই পাঠাগারের একটি স্থান প্রতিটি সমাজে রাখা দরকার।

এছাড়াও বক্তব্য রাখেন পাঠাগার প্রতিনিধিরা।

সন্ধ্যায় মনোমুগ্ধকর কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশন করেন জাপাআ এর সদস্যরা।

Print Friendly

Related Posts