তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা

মোঃ আলীম আল রাজী

ধুমপান এবং অন্যান্য তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ পরিনামের দিকে নিয়ে যায়। ধুমপান যেমন ধুমপায়ীকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি পরোক্ষ ধুমপান এর মাধ্যমে অনেক অধুমপায়ীদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়। তামাকপণ্য সহজলভ্য হওয়ায় তামাকের ব্যবহার কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমছে না বরং তামাকজনিত মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৬ সালের তথ্যমতে, পৃথিবীর যেসব দেশে তামাকপণ্যের দাম অত্যন্ত সস্তা বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম।

গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ ও ২০১৭ এর তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর অগ্রগতির আলোকে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে রয়েছে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে আরো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। টোব্যাকো এটলাস বাংলাদেশের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারেরও বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করে। প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ ৭২ হাজার শিশু-কিশোর (১০-১৪) এবং ২ কোটি ৪ লক্ষ ৮৭ হাজার (১৫+) মানুষ তামাক ব্যবহার করে।

এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় এই যে প্রতিবছর এই তামাক ব্যবহারজনিত মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে। মানুষের ফুসফুসে কঠিন সব রোগের উৎপত্তির মূল কারণ হল অবাধ ধূমপান। দেশে প্রতিদিন প্রায় ২.৪৯ কোটি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি তামাক ব্যবহারের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৯২ হাজারেরও বেশি মানুষকে ফুসফুস ও অন্যান্য তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে।

দেশ তামাকজনিত ব্যাধি ও অকালমৃত্যুর কারণে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন। বাংলাদেশে শুধুমাত্র তামাক ব্যবহারজনিত বাৎসরিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। সম্প্রতি এক গবেষণার তথ্যানুযায়ী, তামাকজনিত প্রধান সাতটি রোগের ন্যুনতম একটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৫৭ শতাংশ এবং ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ১০৯ শতাংশেরও বেশি। বর্তমানে দেশে ১৫ লাখের অধিক নারী-পুরুষ এবং ৬১ হাজারেরও বেশি শিশু পরোক্ষ ধুমপানের প্রভাবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এই তামাক সেবনের কারণে ।

তামাকের এই আগ্রাসী আক্রমনে দেশ আজ মহামারির দ্বারপ্রান্তে উপনীত হতে যাচ্ছে। দেশের এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে উত্তরণের লক্ষ্যে সকলকে তামাকের এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন সেক্টর হতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের সকল তামাক উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে। পরিস্থিতি কার্যকরভাবে মোকাবেলার জন্য উচ্চহারে করারোপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বাড়ালে তামাকের ব্যবহার যেমন হ্রাস পাবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি পাবে। এক্ষেত্রে দেশের অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পারস্পরিক যোগাযোগ ও বোঝাপড়ার মাধ্যমে একযোগে কাজ করতে হবে। যেন একই সাথে দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রের উন্নতি সাধন হয়, আবার জাতীয় রাজস্বও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সংগঠণসমূহ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যকর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সরকারকে নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচারণা ও অধিপরামর্শের কাজও যুগপৎভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

তাই তামাক নির্মূলে সকল শ্রেণির পেশাজীবি, ছাত্র ও যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে তামাকপণ্যের উপর সুনির্দিষ্টহারে কর বৃদ্ধি করতে একসাথে আওয়াজ তোলার কোন বিকল্প নাই। সুতরাং আসুন, আজ গণসাক্ষরতা ক্যাম্পেইনে সকলেই স্বাক্ষর প্রদান করে সকল প্রকার তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই ও সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলি-’ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ, তামাকের দিন শেষ’ ’দাম বাড়ান তামাকের, জীবন বাঁচান আমাদের’।

সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান-সুপ্র তৃণমূল এনজিও ও নাগরিক সংগঠনের একটি জোট। সুপ্র বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৫ টি জেলায় ৬ শতাধিক বে-সরকারী প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনের সাথে গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ, অর্থনৈতিক ন্যায্যতা ও বৈষম্য দূরীকরণে প্রগতিশীল কর সংস্কারসহ সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। তামাকপণ্যের ব্যবহার কমাতে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সন্নিবেশ করার জোর দাবী জানানো যাচ্ছে।

-সকল তামাকপণ্যের ‘খুচরা মুল্যের’ (MRP) ভিত্তিতে করারোপ করা;

সহজলভ্যতা কমাতে মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে উন্নতি সাধন হয় আবার জাতীয় রাজস্বও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, নাগরিক সংগঠণসমূহ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যকর সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সরকারকে নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়নে ব্যাপক প্রচারণা ও অধিপরাপমর্শের কাজও যুগপৎভাবে চালিয়ে যেতে হবে।

তাই তামাক নির্মূলে সকল শ্রেণির পেশাজীবি, ছাত্র ও যুবসমাজকে ঐক্যবদ্ধভাবে তামাকপণ্যের উপর সুনির্দিষ্টহারে কর বৃদ্ধি করতে একসাথে আওয়াজ তোলার কোন বিকল্প নাই। সুতরাং আসুন, আজ গণসাক্ষরতা ক্যাম্পেইনে সকলেই স্বাক্ষর প্রদান করে সকল প্রকার তামাকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই ও সম্মিলিতভাবে আওয়াজ তুলি-’ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ, তামাকের দিন শেষ’ ’দাম বাড়ান তামাকের, জীবন বাঁচান আমাদের’।

তামাকপণ্যের ব্যবহার কমাতে আসন্ন ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সন্নিবেশ করার জোর দাবী জানানো যাচ্ছে।

-সকল তামাকপণ্যের ‘খুচরা মুল্যের’ (MRP) ভিত্তিতে করারোপ করা;

-সহজলভ্যতা কমাতে মূল্যস্ফীতি ও আয় বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে সুনির্দিষ্ট সম্পুরক শুল্ক নিয়মিতভাবে বাড়ানো;

-তামাকপণ্যের ব্রান্ড ও এর প্রকার, আকার, কার্যকরিতা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও জনগণের নিকট প্রকাশ করা

-যে কোন ধরনের তামাকপণ্য উৎপাদনকারীকে সরকারের করের আওতায় নিয়ে আসা;

-সিগারেট ও বিড়ির ক্ষেত্রে শলাকাভিত্তিক ও গুল-জর্দার ক্ষেত্রে ওজনভিত্তিক কর নির্ধারণ ও ৪৫% হারে সম্পুরক শুল্ক আরোপ করা;

-সকল প্রকার তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের উপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করা;

-সকল প্রকার তামাকপণ্যের উপর স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বৃদ্ধি (২%) করা।

 

লেখক: মিডিয়া ম্যানেজার, সুশাসনের জন্য প্রচারাভিযান (সুপ্র)

Print Friendly

Related Posts