`ঈদে জঙ্গি হুমকি ছিল’

জাপান, সৌদি আরব ও ফিনল্যান্ড সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এসে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ফিনল্যান্ড সফরে প্রবাসীদের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, নানা হুমকির মধ্যেও এবারের ঈদ ভালোভাবে শেষ হয়েছে এবং সেজন্য তিনি শুকরিয়া করছেন।

সে প্রসঙ্গ টেনে একজন সাংবাদিক জানতে চান, ঠিক কী ধরনের হুমকি ঈদের সময় ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার পর থেকেই গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও পুলিশ কড়া নজরদারি শুরু করে। কোথাও কোনো ধরনের তথ্য পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

“আপনারা জানেন যে নানা নামে নানাভাবে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে নানা ধরনের থ্রেট কিন্তু দিতেই থাকে। সারাক্ষণ কিন্তু এগুলো আসছে। সবটা আমি বলে মানুষকে ভীত করতে চাই না। কিন্তু যতদূর পারি, এগুলোর পেছনে আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার, তা আমরা নিয়ে থাকি।”

এবার ঈদের আগেও তেমন হুমকি ছিল জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ঈদের জামাতের সময় আমি সত্যিই খুব চিন্তিত ছিলাম। কারণ এমন এমন ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, তা যেন কোনোমতে না ঘটে।”

সরকারপ্রধান বলেন, তিনি দেশে বা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, দেশে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সব সময় তার যোগাযোগ থাকে। এবারও বিভিন্ন ঈদ জামাত সম্পন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে ‘মেসেজ’ চলে গেছে।

“আমাদর গোয়েন্দা সংস্থা, আমাদের পুলিশ বাহিনী, আমাদের র‌্যাব থেকে শুরু করে সকলেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে তারা কাজ করেছে। সেজন্য খুব সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাতগুলো সম্পন্ন হয়েছে।”

গুলশান হামলার এক সপ্তাহের মাথায় কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে জঙ্গিদের হামলাচেষ্টার ঘটনা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “একবার শোলাকিয়াতে একটা ঘটনা ঘটেছে, চেষ্টা হয়েছে। এবার কিন্তু কেউ কিছু করতে পারেনি।”

জঙ্গিবাদ দমনে জনগণের সচেতনতাকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে বড় শক্তি’ হিসেবে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “জনগণ কিন্তু যথেষ্ট সচেতন। আমরা জনগণকে সম্পৃক্ত করেই এ ধরনের হুমকি মোকাবিলা করতে চাই।

“সেজন্য জনগণের কাছে সব সময় আমার আবেদন থাকবে, তারা যেন এ বাপারে সজাগ থাকেন, সচেতন থাকেন। কারণ এসব ঘটনা আমাদের উন্নয়নের গতিধারাটা ব্যহত করবে।”

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, “কোথাও কোনো তথ্য পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সফরকে অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসু বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সার্বিক বিবেচনায় এবারের আমার জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড- এই ত্রিদেশীয় সফর অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে।’

তিনি ২৮ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর শেষে গতকাল শনিবার দেশে ফেরেন।

সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ত্রিদেশীয় সফলের শুরুতে গত ২৮ মে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছেন। জাপানে তাঁর অবস্থানকালীন বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।

পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়ার ভবিষ্যত’ শিরোনামে আয়োজিত নিক্কেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া. সেখানে তাঁর সম্মানে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায় ও যোগ দেন এবং জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রাতঃরাশ গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাপানী নাগরিকদের পরিবার বর্গ এবং জাইকা সভাপতি শিনিচি কিতাওকার সঙ্গে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৩১ মে সৌদি আরব পৌঁছেন এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪ তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন।

তিনি মক্কাতে পবিত্র ওমরাহ পালন করেন এবং মদীনায় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।

ফিনল্যান্ডে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী গত ৪ জুন সে দেশের প্রেসিডেন্ট সৌলি নিনিয়েস্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং ৫ জুন তাঁর সম্মানে অল ইউরোপীয় আওয়ামী লীগ এবং ফিনল্যান্ড আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেন।

প্রধানমন্ত্রী লিখিত বক্তৃতায় বলেন, ‘গত ২৮মে থেকে ৭ই জুন পর্যন্ত আমি জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর করি। সফর শেষে গতকাল আমি দেশে ফিরে এসেছি।’

জাপান সরকারের আমন্ত্রণে গত ২৮মে হতে ৩০মে পর্যন্ত তিনি জাপান সফর করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাপানে এটাই ছিল তাঁর প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। সফরে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন।

Print Friendly

Related Posts