৫ লাখ কোটি টাকার ‘স্মার্ট’ বাজেট পেশ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে বাজেট পেশ করেন।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ৩টায় কোরআন তেলাওয়াতের মধ্যদিয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট বক্তৃতার শুরুর আগে অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছ থেকে অনুমতি নেন।

নতুন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। আগামী ৩০ জুন এই বাজেট পাস হবে। ১ জুলাই থেকে শুরু হবে নতুন অর্থবছর।

এর আগে জাতীয় বাজেট ঘোষণার জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল দুপুর ১টার দিকে তিনি জাতীয় সংসদে প্রবেশ করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা একাদশ বাজেট। এই বাজেটকে বলা হচ্ছে দেশের প্রথম ‘স্মার্ট’ বাজেট।

তবে বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী অসুস্থতা বোধ করায় তার পরিবর্তে বাজেট বক্তৃতার বাকি অংশ পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের গণতান্ত্রিক সরকারের ইতিহাসে কোনো অর্থমন্ত্রীর বদলে প্রধানমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা করার ঘটনা এটিই প্রথম।

অধিবেশনের শুরুতেই স্পিকারের অনুমতি সাপেক্ষে বাংলাদেশের বাজেট ইতিহাস নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর তিনি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট বক্তৃতা করেন।

এই বাজেটকে ‘দেশের সব মানুষের জন্য’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে পার্বত্যাঞ্চল যেমন বাদ যায়নি, তেমনি বাদ যায়নি সমতল ও চরাঞ্চল। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিমের কেউ বাদ পড়েনি। দেশের কৃষক, কামার-কুমার, জেলে, তাঁতী, ব্যবসায়ী, বেদে, বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারসহ সব পেশার মানুষের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে এই বাজেট প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসীকে অবহিত করাটা প্রয়োজন মনে করছি যে, আমরা ২০১৯-২০ এর বাজেটটিতে দেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, তেমন কোনো উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করিনি।’

‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনাম দিয়ে প্রস্তাবিত এই বাজেটের আকার বড় হলেও অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা ছিল স্মার্ট এবং সংক্ষিপ্ত। একইসঙ্গে সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য সহজপাঠ্য।

প্রাক্তণ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা ১০টি বাজেট থেকে কী এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে এবারের বাজেটে- এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, এবারের বাজেট হবে ‘স্মার্ট’ বাজেট। এবার গতানুগতিক বাজেট হবে না। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা হচ্ছে এই বাজেট। বাজেট বক্তার বইও হবে সংক্ষিপ্ত।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ‘অগ্রগতির ধারাবাহিকতা : সম্ভাবনাময় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১৬৩ পাতার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, উচ্চ প্রবৃদ্ধি রচনা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১২৮ পাতার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১১৮ পাতার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বইয়ের পরিধি ছিল ১৫০ পাতার। সর্বশেষ গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বইয়ের আকার ছিল ১৫৬ পাতার।

এবারের বাজেটকে কেন স্মার্ট বাজেট বলছেন, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, এবারের বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেট বক্তৃতার বই হবে সংক্ষিপ্ত। বাজেটের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী হলেও তা অর্জন করতে চেষ্টা হবে সাধ্যের মধ্যে, যা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য হবে সহজপাঠ্য। দেড়শ-দুইশ পাতার বাজেট বক্তৃতার বই নয়, এবার বাজেট বক্তৃতার বই সর্বোচ্চ ১০০ পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা চলছে। আর এর মধ্যেই থাকবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার। আমরা কাজে বিশ্বাসী।

Print Friendly

Related Posts