প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা রিফাতকে দাফন, স্বজনের কান্না

১২ জনকে আসামী করে মামলা, গ্রেফতার ১

ইফতেখার শাহীন, বরগুনা জেলা প্রতিনিধি: প্রকাশ্যে স্ত্রীর সামনে কুপিয়ে হত্যা করা রিফাত শরীফের (২৫) মরদেহ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুর ১ টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের মর্গ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সড়ক পথে বরগুনা সদর উপজেলার ৬ নং বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবনগোলা গ্রামে রিফাতের নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়।

অনেক অপেক্ষা শেষে রিফাতের স্বজন, বন্ধুরা ও এলাকাবাসীকে রিফাতের মরদেহ দেখানোর পর বাদ আসর জানাজা সম্পন্ন করে পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ সময় রিফাতের চাচা ছালাম শরীফ, মামা মোস্তফা আলম, শ্বশুর মোজাম্মেল হোসেনসহ অর্ধশত বন্ধু ও স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।

এদিকে রিফাত হত্যা মামলায় চন্দন নামে এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আজ সকাল দশটার দিকে রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। বরগুনা থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন হত্যা মামলা দায়ের ও মামলার ৪ নম্বর আসামী চন্দনকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, বরগুনা পৌরসভার নয়াকাটা এলাকার মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের মেয়ে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি বরগুনার সরকারি কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মিন্নির সাথে বরগুনা পৌরসভার ধানসিড়ি সড়কের আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে নয়ন বন্ড ও বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবনগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে রিফাত শরীফের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।

নয়নের মা শাহিদা বেগম দাবী করেছেন, তার ছেলে নয়নের সাথে গত বছরের অক্টোবর মাসে ৫ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির বিয়ে হয়েছে। সেই বিয়ে ৩ মাসের মধ্যেই ভেঙ্গে যায়। পরে নয়নের বন্ধু রিফাত শরীফের সাথে আয়শা সিদ্দিকার ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরী হয়। গত ২ মাস আগে তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে। দ্বিতীয় বিয়ের পরেও মিন্নিকে তার প্রথম স্বামী নয়ন স্ত্রী হিসেবে দাবী করে আসছিলো এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের অন্তরঙ্গ ছবি দিয়ে প্রচারনা চালাচ্ছিলো। এ নিয়ে রিফাত ও নয়নের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।

বুধবার সকালে স্ত্রীর দাবী নিয়ে বিরোধে পরিকল্পিতভাবে রিফাত শরীফকে কোপানো হয়। যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধরা পড়ে ভাইরাল হয়েছে। শতাধিক শিক্ষার্থীর সামনে প্রকাশ্যে এ ঘটনা ঘটলেও মিন্নি ছাড়া আর কেউই রিফাতকে বাচানোর চেষ্টা করেনি।

রিফাতকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরে তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। বরিশালে নেবার পথে বুধবার বিকাল ৪টার দিকে রিফাত মারা যায়।

বরগুনা থানার ওসি আবির মোহাম্মদ হোসেন জানিয়েছেন, ১২ জনকে আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি গ্রেফতারের স্বার্থে আসামীদের নাম বলতে রাজি হননি।

আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি জানিয়েছেন, নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী তার স্বামী রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যা করেছে।

বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন-পিপিএম জানিয়েছেন, চন্দন নামে একজনকে তারা গ্রেফতার করেছেন। বাকী আসামীদেরও তারা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শনাক্ত করেছেন।

বরিশালের ডিআইজি মো. সফিকুল ইসলাম আজ বেলা সাড়ে ১১ টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি বলেছেন, কোন আসামীকে ছাড় দেয়া হবেনা। সকল আসামী ধরা পরবে এবং বিচার হবে।

Print Friendly

Related Posts