আদি বুড়িগঙ্গার ৩৫০ একর বেদখলে!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ আদি বুড়িগঙ্গা নদীর বুকে একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে কুড়ারঘাটের, ওপাড়ে নদীর জায়গা দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে একটি সরকারি হাসপাতাল। পশ্চিম রসুলপুরে নদীর বুকের উপর গড়ে তোলা হয়েছে একটি সরকারি বিদ্যুৎ স্টেশন। এই ধরণের অসংখ্য সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে আদি বুড়িগঙ্গা নদীর বুকে।

বলেছেন ‘নদী রক্ষা জোট’ আহবায়ক ও ‘নোঙর’ সভাপতি, সুমন শামস। তিনি বুড়িগঙ্গা নদীর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর্মসূচীর শেষে বক্তব্যে একথা বলেন।

শুক্রবার (৫ জুলাই) আদি বুড়িগঙ্গা নদী পুণরুদ্ধারের দাবিতে “নদী রক্ষা জোটের সদস্য ১৩টি নদী ও পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশ গ্রহণে আদি বুড়িগঙ্গা নদীর কামরাঙ্গীরচর লোহার পুল থেকে হাজারীবাগ পর্যন্ত নদীর বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, নব্বই দশকের পরেও আদি বুড়িগঙ্গা নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রবাহ ছিলো। আদালতের আইন অমান্য করে এখনও দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নদীখেকোরা।  আদি চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন কোম্পানির নামে সাইনবোর্ড ঝুলছে।গত দুই যুগ ধরে চলতে থাকা আদি বুড়িগঙ্গা নদীর জায়গা দখলের কবলে পড়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, লালবাগ, হাজারীবাগ ও কামরাঙ্গীরচর এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া রাজধানীর পশ্চিমের বুড়িগঙ্গার এই আদি চ্যানেলের প্রায় ৩৫০ একর বেদখল হয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, সিটি কপোর্রেশনের  ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হয়েছে আজ আদি বুড়িগঙ্গা। ম্যাটাডোর গ্রুপ, পান্না গ্রুপ, সিকদার হাসপাতালসহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান আদি বুড়িগঙ্গা নদীর অস্তিত্ব বিলীন করে তাদের স্থাপনা গড়ে তুলেছে।

তিনি বলেন, আমরা চাই সেনা বাহিনীর সহযোগিতায় এ নদী দখলমুক্ত করে নদীটিকে ঢাকার চারপাশের বৃত্তাকার নৌপথের সাথে যুক্ত করে আদি বুড়িগঙ্গা নদীতে ওয়াটার বাস সার্ভিস চালু করা হোক। বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলে রিকশার গ্যারেজ থেকে শুরু করে টেম্পুস্ট্যান্ড, অবৈধ মার্কেট,  ট্রাকস্ট্যান্ড, বাড়িঘর, শিল্প-কারখানা, অ্যামিউজম্যান্ট পার্ক এমনকি মসজিদ পর্যন্ত  গড়ে উঠেছে। বছরের পর বছর এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠলেও সেসব দখল প্রতিরোধে দায়িত্ব প্রাপ্ত সংস্থাগুলো নির্বিকার ভূমিকা পালন করে চলেছে।

IM-0

বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিহির বিশ্বাস বলেন, কামরাঙ্গীরচর ২ নম্বর পূর্ব রসুলপুর পাকা ব্রিজ ঘেঁষে বালুমাটি দিয়ে নদী ভরাট করে দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। এ ব্রিজের ১শ’ গজ দূরে নবাবগঞ্জ সেকশন ও কামরাঙ্গীরচর রনি মার্কেট সংযোগস্থলে নির্মিত পাকা ব্রিজ ঘেঁষে বিশাল অংশ দখল করে মার্কেট ও বসতঘর নির্মাণ করে ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এ আদি চ্যানেলের বুকের ওপর জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বক্সকালভার্ট নির্মাণ করায় পশ্চিমের নদীর বুক দখলের মহোৎসব চলছে।

পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ বলেন, মানব জাতীকে রক্ষা করার এবং প্রাণীকূলের অস্তিত্ব রক্ষা করতে আজকে আমাদের এই আয়োজন। আমাদের সকল প্রাণীকূলের খাদ্য উৎপাদনে আমাদের নদীগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অথচ সেই নদীগুলো আজ দখল-দূষণের কারণে ফসল এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।সে কারণে আমাদের খাদ্যের সাথে মিশ্রিত বিশাক্ত ক্যামিক্যাল যুক্ত খাবার খেয়ে আমরা মৃত্যুর মুখে ধাবিত হচ্ছি।

রিভারাইন পিপলের পরিচালক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, নদী রক্ষা জোট থেকে আমরা দখল-দূষণে আক্রান্ত সকল নদী পুণরুদ্ধারের জন্য একতা বদ্ধ হয়েছি। আমরা দেখছি সরকারের মধ্যেই আদী বুড়িগঙ্গা নদীর দখল প্রসঙ্গে অনেক ভুল ধারণা এখনো কাজ করছে। আজকে আমরা বৃটিশ আমলের ১৯১৩ সালের একটি ম্যাপ এবং ১৯৭১ সালের ম্যাপ অনুযায়ী আজকে আমাদের পর্যবেক্ষণ কর্মসূচী পালন করা হয়েছে।

আমরা দেখেছি যে, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের নদীটি কেমন ছিলো এবং ব্রটিশ সময়ে এই নদীটি কেমন ছিলো। কোন কোন নদী দখল ও দূষণের কারণে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ এসব দেখে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্তৃপক্ষকে একটি প্রতিবেদন পেশ করে গণমাধ্যমে তা প্রকাশ করবো।

সচেতন নগরবাসীর আহবায়ক রুস্তুম খান বলেন, হাজারীবাগের সেকশন বেড়িবাঁধ সংলগ্ন শাখা নদীর দু’পাশে সেমিপাকা ঘর, দোকান, গ্যারেজ গড়ে তোলা হয়েছে। এসব দোকান থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মহল দৈনিক এবং মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া আদায় করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব দখলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা। এর মধ্যে নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমরা চাই এই নদী অবিলম্বে দখলমুক্ত করে নদীর জায়গা নদীকে ফিরিয়ে দেয়া হোক।

তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটির সভাপতি, মোহাম্মদ আলী সমাবেশের সকলের সাথে নদী রক্ষার শপথ গ্রহণ করে বলেন, বর্ষা মৌসুমে বুড়িগঙ্গা নদীসৃষ্ট বন্যা থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে আশির দশকে তৎকালীন এরশাদ সরকার আবদুল্লাহপুর থেকে সোয়ারিঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। এ বেড়িবাঁধ করার মূল লক্ষ্য ছিল রাজধানীকে বন্যামুক্ত করার পাশাপাশি বুড়িগঙ্গার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা। সরকার ভালো উদ্দেশ্যে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও অবৈধ দখলদাররা বেড়িবাঁধকে কেন্দ্র করে দখলযজ্ঞ শুরু করেছে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, এক সময় ভাবা হয়েছিল বুড়িগঙ্গাকে টিকিয়ে রাখার জন্য নদীর দুই পাড়ে এভাবে বেড়িবাঁধ নির্মাণ (ওয়ার্কওয়ে) করা হবে। আর নদীর বুক ঘিরে ফ্লাইওভার নির্মাণ করে রাজধানীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হবে। নদীর দখলদারদের চাপে পশ্চিমের শাখা নদী বেড়িবাঁধ ঘেঁষে নদীর বুকে সিটি কর্পোরেশনে আবর্জনা ফেলে দখল করা হচ্ছে। দখলের এ ধারাবাহিকতা এখনো চলমান আছে। নদী রক্ষা জোটের দাবি, ‘সিএস নকশা অনুযায়ী আদি বুড়িগঙ্গা নদীর দখল উচ্ছেদ করে দ্রুত সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নদীকে খনন করে নৌ-যোগাযোগ চালু করতে হবে’।

কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন মিহির বিশ্বাস, আহবায়ক, বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলন এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন। আমির হাসান মাসুদ, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি। মোহাম্মদ এজাজ, পরিচালক, রিভারাইন পিপল। মোহাম্মদ আলী, সভাপতি, তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটি। জি.এম রোস্তম খান, সভাপতি, সচেতন নগরবাসী, মোঃ ফারুক হোসাইন  সদস্য, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ আমিনুল ইসলাম টাব্বুস সভাপতি, বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা রমজান দেওয়ান বাবু, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জনী, রাঙ্গাবালী কল্যণ পরিষদ। মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মহানগর সমন্বয়ক, ঘাতক দালাল র্নিমূল কমিটি। তৌহিদুল ইসলাম মাতীন, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ কিন্ডারর্গাডেন এডুকেশন সোসাইটি। আমিনুল হক চৌধুরী, সদস্য নোঙর। সৈয়দ শাহ নেওয়াজ শাহীন ও মো. নান্নু চৌধুরী, সদস্য নোঙর। মো. শাহজাহান, সম্মানিত সদস্য, নোঙর। মোহাম্মদ সবুজ, ঢাকা মহানগর সদস্য, নোঙর। জীবন আহসান, সদস্য, নোঙর কেন্দ্রীয় কমিটি। বাবু, আহবায়ক, ঢাকার হালচাল।মো. রমজান দেওয়ান বাবু, নান্নু, নোঙর পরিবারের সম্মানিত সদস্য।মো. মাসুদুর রহমান শামীম, সদস্য, বুড়িগঙ্গা বাচাও আন্দোলন। মোহাম্মদ মাসুদ সদস্য, তুরাগ নদী সুরক্ষা কমিটি। ।

 

তথ্যসূত্র : আহবায়ক, “নদী রক্ষা জোট”

 

 

 

 

Print Friendly

Related Posts