জি-বাংলা সারেগামাপার গ্র্যান্ড ফিনালে যা ঘটবে!

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ জি-বাংলা সারেগামাপার গ্র্যান্ড ফিনালের আয়োজনে আসলে কী ঘটেছিল এবং নোবেল এর পারফরম্যান্স ও ফলাফল নিয়ে এতো নাটকীয়তা কেন? তা নিয়ে ইতিমধ্যেই মিডিয়ায় আসতে শুরু করেছে। পুরো ঘটনাটাই পরিষ্কার করে গ্র্যান্ড ফিনালেতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভারতীয় দর্শকের উদ্ধৃতিতে ঘটনাপ্রবাহ পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো-

এবারের জি বাংলা সারেগামাপার গ্র্যান্ড ফিনালের অনুষ্ঠান বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে ২৯ জুন আয়োজন করা হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজারহাটে অবস্থিত বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে। এই পর্বটি জি বাংলায় দর্শক দেখতে পাবেন ২৮ জুলাই রাতে।

আমন্ত্রিত অতিথিদের হোয়াইট ড্রেস কোড পরিধানের নির্দেশনা দেওয়া ছিল, যা অনেকে মানেনি। বাংলাদেশ সময় দুপুর ৩ টায় অনুষ্ঠান শুরু সাপেক্ষে সেখানে উপস্থিত হওয়ার কথা বলা হয়। ফিনালের সব প্রতিযোগীর বাবা মা’র ন্যায় বাংলাদেশের নোবেলের বাবা অসুস্থ হওয়া সত্তে¡ও অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন ছেলের পারফরম্যান্স সামনে থেকে বসে দেখবেন বলে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন দর্শক জানান, তাকে কনভেনশন সেন্টারের সামনে ট্যাক্সিক্যাব থেকে নামতে দেখা যায়। এসময় তার সাথে ছিলেন নোবেলম্যান ব্যান্ডের সদস্যরা এবং কলকাতার তন্ময় প্রামাণিক। ভিড় ঠেলে অতিথিদের আসন গ্রহণ করা এবং শিডিউল মেইন্টেইন করা পুরোটাই ছিল ম্যানেজমেন্ট এর অব্যস্থাপনায় ভরপুর। প্রবেশের সময় কর্তৃপক্ষ বলে দেয় যে, রাত ১২ টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করা হবে এবং যার যার বাসায় ফিরে রাতের খাবার খেয়ে নেবেন। আর যারা বাইরে থেকে যেকোনও ধরণের খাবার নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে চাচ্ছিলেন তাদের খাবার গেইটের বাহিরে ফেলে দিতে বাধ্য করা হয় এবং তা স্তুপ আকারে জমা হতে থাকে এক পাশে।

এরপর সকল আমন্ত্রিত অতিথিরা কনভেনশন হলের ভেতরে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ শেষে বিকাল ৫ টার সময় সকল ফাইনালিস্টদের ফ্ল্যাশব্যাক মোমেন্ট এক নজরে বড় পর্দায় দেখানো হয়। এরপর সাড়ে ৫টা নাগাদ ফাইনালের মূল আনুষ্ঠানিকতা মানে প্রথম রাউন্ডের পারফরম্যান্স শুরু হয়। এখানে সকল প্রতিযোগী নিজেদের উপস্থাপন করতে সাথে আরেকজন অতিথি শিল্পীসহ মঞ্চে আসেন। এখানেও জি-বাংলা সারেগামাপা টিমের ছিল পুরোনো স্ট্যান্টবাজি। বরাবরের মতো সবার পারফরম্যান্স শেষে বাংলাদেশের মাঈনুল আহসান নোবেলকে মঞ্চে ডাকা হয় ।

এসময় অনুপম রায়ের সাথে আইয়ুব বাচ্চুর ‹সেই তুমি› গানটি ডুয়েট পরিবেশন করেন নোবেল। তারপরে অতুল প্রসাদ এর ‹আমি বাংলার গান গাই› এই গানটি নোবেল তার দরাজ কণ্ঠে পরিবেশ করেন। এসময় তার ফ্যানবেজ যার যার আসন থেকে প্ল্যাকার্ড এবং মোবাইল ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে হাত নাড়াতে থাকেন। গানটি শেষ হওয়ার পর বিচারক শান্তনু মৈত্র মঞ্চে এসে নোবেলকে জড়িয়ে ধরেন। অতিথি বিচারক হিসেবে উপস্থিত থাকা বলিউডের সুখবিন্দর সিং বলেন, আমি তোমার বাংলা গানের ফ্যান হয়ে গেলাম। তবে ফাইনালের এই আয়োজনে গোল্ডেন গিটার বলতে কিছু ছিল না। কিন্তু বিচারকরা বলেছিলেন, গান বেশি ভালো লাগলে গোল্ডেন গিটার বাটন প্রেস করা হবে। এরপর বিচারকরা সকলের দেওয়া মার্কস খামে ভরে বাক্সে জমা দিচ্ছিলেন। এর মধ্যেই অনেকে কনভেনশন সেন্টার থেকে বাইরে বের হন রাতের খাবার গ্রহণের জন্য। কারণ ফাইনালের দ্বিতীয় রাউন্ডের পারফরম্যান্স তখনো বাকি।

তখন আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ও বিচারকদের কিছু পারফরম্যান্স বড় পর্দায় দেখানো হচ্ছিল। হলের বাহিরে যে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সবাইকে তা নিজের টাকা দিয়ে কিনে খেতে হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য কোনরকম ব্যবস্থা রাখেনি কর্তৃপক্ষ। এসময় নোবেলের বাবা এবং নোবেলম্যান ব্যান্ডের সদস্যদের খাবারের প্লেট হাতে দীর্ঘ লাইনের সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় অন্যান্যদের মতো। হঠাৎ করেই বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাওয়ায় সকলের মধ্যে ঘটে যায় বিপত্তি-ছুটোছুটি। তারপরে রাত ১১ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ ফাইনালের দ্বিতীয় রাউন্ডের পারফরম্যান্স শুরু হয়। এখানেও নোবেলকে পারফর্ম করার জন্য মঞ্চে ডাকা হয় সবার শেষে।

সকলকে উদ্দেশ্যে করে নোবেল কিছু কথা বলেন এবং তার ফ্যানবেজকে দেওয়া কথা রাখতে জেমসের এর গাওয়া ‘বাংলাদেশ’ গানটি মঞ্চে পরিবেশন করেন। এসময় অনেকেই তার গান শুনে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এরমধ্যেই চারিদিকে যেন করতালির রোল পড়ে যায়। রাত তখন ২টা ৪০ মিনিট। কিছুক্ষণের মধ্যেই সকল ফাইনালিস্টদের মঞ্চে ডাকা হয়। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক যীশু সেনগুপ্ত ফাইনালিস্টদের নিয়ে কিছু একটা জানতে চান। তখন যার যার ফ্যানবেজ প্ল্যাকার্ড উপরে তুলে ধরেন। এবার ফলাফল ঘোষণার পালা। মঞ্চ থেকে বলা হয়, এবারের সারেগামাপা এর ২য় রানার্সআপ হচ্ছেন প্রীতম। আর শুধু প্রীতমই নয় যৌথভাবে আরও একজন আর সে হচ্ছেন নোবেল। এসময় চারিদিক একদম নিস্তব্ধ। নোবেলের যখন রেজাল্ট দিল, উপস্থিত একটা মানুষও হাততালি দেয়নি। বাংলাদেশের মানুষ ছিল হাতেগোনা কয়েকজন, বাকিরা সবাই ছিল কলকাতার। তারাও সবাই হয়তো ভেবে নিয়েছিল নোবেল কিছু একটা ভালো পজিশন পাবে। কী পরিমাণ আঘাত পেলে একটা মঞ্চ এভাবে স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে তা বোঝাই যায়। যেখানে নোবেল নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারেনি .. ও নিজেও কেঁপে উঠেছিল নিজের রেজাল্টটি শুনে। কারণ এইরকম রেজাল্ট তো সে ডিজার্ভ করে না। গৌরব ও স্নিগ্ধজিৎ হয়েছে যেখানে ১ম রানার্সআপ এবং অঙ্কিতাকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সবকিছু সিলেক্ট করেছিল বিচারকেরা। ফাইনালে বিচারক মোনালি ঠাকুর আলাদাভাবে এবং অঙ্কিতার সাথেও পারফরম্যান্স করেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেশের বাহিরে কনসার্ট থাকায় ফ্লাইট ধরতে তিনি মঞ্চ থেকে চলে যান। একজন প্রফেশনাল জাজের অনুপস্থিতিতে রেজাল্ট কিভাবে দেয় তা নিয়েও অনুষ্ঠানে কথা ওঠে।

একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনায়- সারেগামাপা এতোটা আগ্রহ নিয়ে দেখা এটাই হয়তো শেষ, দুর্নীতির ছায়ায় আচ্ছন্ন সারেগামাপার এই আসল রূপ দেখার পরে মন থেকে আর কেউ ভালোবাসবে না এইটুকু নিশ্চিত। ফাইনাল প্রচারিত না হওয়া পর্যন্ত ফাইনালিস্টদের কোন ধরনের বিবৃতি দেওয়া বারণ করে দিয়েছে জি-বাংলা কর্তৃপক্ষ। অঙ্কিতা ও স্নিগ্ধজিতের এই ফলাফলে বলিউডের সিঙ্গার সুখবিন্দর সিং এর যথেষ্ট প্রভাব ছিল যা সকলের চোখে পড়েছে। আর নোবেল এর রেজাল্টের সময় পুরো স্টেজ ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। তখন চারিদিকে ছিল নিস্তব্ধতা। অথচ আগামী ২৮ জুলাই সন্ধ্যায় জি বাংলায় গ্র্যান্ড ফিনালের অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়ার সময় সবাই ঠিকই দেখবেন- নোবেল নোবেল বলে চিৎকারে ভেসে যাচ্ছে মঞ্চ এবং নোবেলও প্রাইজ নিতে আসছে! সত্যিই এসব কাজ দারুণভাবে এডিটিং করা যায়।

Print Friendly

Related Posts