আষাঢ়ের সেই দিন

এ কে সরকার শাওন

 

বৃষ্টি আমার উদাম গায়ে
আবেগের পরশ বুলিয়ে দিল!
আষাঢ়ের দিনে ফাগুন এলো;
তনু-মনে ঢেউ জাগিল
সাধের কৈশোর যেন
আবার ফিরে এলো!!

এত হাসি! এত খুশী!
আনন্দ উচ্ছল-উদ্বেল
কবে হয়েছি তা নাই মনে!
খুশীর মাঝে আক্ষেপ,
হারানো দিনগুলি যদি ফিরে
আসতো এ জীবনে!

সেবার এমনি কোন
এক আষাঢ়ের শেষ দিনে
সকাল থেকে ঝরছিল
ঝুমুর বারি মুষল ধারায়!
আমরা ক’জন স্কুলের আঙ্গিনায়,
নাওয়া-খাওয়া ভুলে,
মেতেছিলাম আষাঢ়ে গল্পে
ম্যারাথন আড্ডায়!

সৈদুজ্জামান, জামাল-কামাল
আর ভাতিজা নজরুল-বাবুল!
মোবারক-হাবিব-শওকত-রওশন
ছিলাম সেই মহান আড্ডায়
যদি আমি না করি ভুল।

বাকীদের নাম আজ মনে নাই
বলছি বুকভরা বেদনায়!
কত ছিল আপন ওরা বন্ধুসজন
জানিনা কে আছে কোথায়!

দুপুর গড়িয়ে যায়
এমন সময় ফুটবল হাতে
এলো নূরে আলম ভাই,
“চলো খেলি ফুটবল!
গাঁজাখুরি আড্ডায় কাম নাই। ”

বই খাতা ছুড়ে মালকোঁচা দিয়া,
নামিলাম চেক-চেইক্যা পানির মাঠে,
ছিলাম একদল হলাম দুই দল
এগারজন ছাড়া কেউ ছিলনা ওই তল্লাটে!

আমরা পাঁচজন সবুজ দলে
বাঁকি পাঁচজন লালে,
কেউ মারে ডন কেউ হাত ছোড়ে
ওয়ার্মিং আপের কালে!

রেফারী হুন্কার দিয়ে কয়
‘খেলায় জয় পরাজয় বড় কথা নয়!
সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে,
ফাউল অফ সাইড যেন কম হয়!

খেলার পরে সবাই মিলবো
রেবা ময়রার দোকানে!
মণ্ডা-মিঠাই-জিলাপি-মিষ্টি
খাওয়া চলবে সমানে!

হারু টিমকে গুনতে হবে
সব খাবারের দাম,
এ কথা কিন্তু আগে ভাগে ভাই
আমি স্পষ্ট বলে দিলাম!”

খেলা হলো শুরু,
কিক করার আগেই দেখি বল দৌড়ায়!
মধ্য মাঠ থেকে কিক মেরে দেখি
গোলকিপার পরাস্ত হায়!
ডানে লাফ মেরে বল লুফে কোলে
তারপরও বল ফসকে চলে যায়
জালের দেশে নিজ আঙ্গিনায়!

খেলা তো খেলা চলছে তো চলছে
কে আছে মোদের থামায়!
পিচ্ছিল মাঠে গোলের বন্যায়,
গোলকিপার মরে লজ্জায়।

উভয় দলের সতের গোল
খেলায় হয়ে গেল হায় টাই!
“আর একটি গোলে খেলা শেষ;”
ঘোষণা দিল রেফারি ভাই!

দু’পক্ষ মরিয়া গোল দিতে;
দিতে হবে আর একটি গোল!
অফসাইড বিতর্কে জড়ালো সবাই
লাগিল মহা গন্ডগোল!

এমন ঘনঘোর বরষার যখন
শেষ বিকালের আলোটুকু লুকায়;
সাক্ষী হিসাবে মানুষ তো দূর,
অন্য কোন বন্য প্রাণী পাওয়া দায়!

আধাঁর নামল ধরায়
খেলা এগিয়ে নেয়ার পথ নাই;
রেফারি অনন্যোপায়
ঘোষণা দিল, “খেলা ড্র ভাই,
আর কোন কথা নাই!
চলো সবাই
রেবা ময়রার দোকানে যাই!”

সব শেষ করে শীতে কাচুমাচু হয়ে
ভিজা কাপড়ে নিজের বাড়ীর দিকে ধাই!
সারাদিন ধরে ছিলাম বাহিরে
বাড়ীর কথা একদম মনে পড়ে নাই!

মায়ের কল্পিত রুক্ষমুর্তি মনে ভাসিল,
অসাঢ় হইলো দেহ!
আল্লাহ ছাড়া আমাকে আজ
রক্ষা করিবে না কেহ!

বাড়ী পৌঁছামাত্র ছোটবোন চিৎকার করে
নিষ্ঠুর ঘোষণা দিল,
“এসেছে রে এসেছে রে”,
মুহুর্তে দশ জোড়া চোখের তীর্যক তীর
আমার বুকে বিঁধিল!

ঐ তো আলো আঁধারে
মাকে দেখা যায়,
বেশ ধীরে ধীরে মা আসলেন!
তাঁর হাতে কোন বেত নাই
আমায় কাছে টেনে নিয়ে
আঁচল দিয়ে মাথা-মুখ মুছিয়ে
নয়নের জলে নিজেই ভাসলেন!

কাদঁতে কাদঁতে মা বললেন,
“আর কত জ্বালাবি? কবে বড় হবি!
যেদিন আমি থাকবো না
তুই, ক্যামনে জীবনের পথ চলবি!

মায়ের চোখের জল দেখে
নিশ্চুপ কেঁদেছিলাম আমি;
হারিয়ে যাইনি কোন আষাঢ়ে
কথা রেখেছি আমি!

সেদিন বাহিরে আষাঢ়ে ছিল;
ভিতরে ছিল মায়ের ভালবাসা!
আজ আষাঢ় ভিতরে বাহিরে
মুখে হাসি বটে চারিপাশে বরষা!

Print Friendly

Related Posts