পবিত্র হজ্বের তাৎপর্য ও দোয়া কবুলের স্থান

আলহাজ্ব এম.এ.কাদের

মুসলমানদের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে হজ্ব একটি অন্যতম ইবাদত। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের উপর জীবনে একবার হজ্ব পালন করা ফরজ। প্রতি বছর আমাদের দেশ  থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ্ব পালন করে থাকেন। ইসলামে হজ্বের গুরুত্ব অপরিসীম।

হযরত ইব্রাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর প্রিয় সন্তান ইসমাইলকে কোরবানী দেওয়ার জন্য জামারার কাছাকাছি মিনায় নিয়ে যান । যাওয়ার পথে শয়তান ইসমাইলকে কুমন্ত্রনা দেয়। আল্লাহর নির্দেশে অলৌকিকভাবে প্রিয় সন্তানের পরিবর্তে পশু কোরবানী হয়। ঐ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, আরবী জ্বিলহজ্ব মাসে ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নিদিষ্ট সময়ে পবিত্র কাবা এবং কয়েকটি বিশেষ স্থান আল্লাহ ও রসুল (সঃ) নির্দেশ অনুযায়ী জিয়ারত, তাওয়াফ, অবস্থান করা এবং নিদিষ্ট অনুষ্ঠানাদি পালন করাই হলো হজ্ব।

ইতিমধ্যে আমাদের দেশ থেকে প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হজার হাজ্বি পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য  কাবা চত্তরের আশে পাশে অধিক আগ্রহে  অবস্থান করছেন। আজ শুক্রবার থেকেই হজ্বের কার্যক্রম শুরু। হজ্বের এই কার্যক্রম ১৩ই জিলহজ্ব পর্যন্ত চলবে। হজ্বের বিশেষ তাৎপর্যের মধ্যে কাবাঘর তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে নিজেকে শুদ্ধিকরন ও আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা।

সারা পৃথিবীর মুসলমানদের এই মিলন মেলায় সবার মুখ থেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের একই ধ্বনি উচ্চারিত হয় “লাব্বাইকা আল্লাহুমা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শরীকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়ান নি’মাতা, লাকা ওয়াল মূলক,  লা শারীকা লাক।” অর্থ- আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, আপনার কোন শরিক নাই ,আমি হাজির, নিশ্চয় সকল প্রশংসা এবং সকল নিয়ামত আপনারই, আর রাজত্বও আপনার। আপনার কোন শরিক নাই।

আমাদের প্রিয়নবী (স.) তার উম্মতদের উদ্দেশ্যে বলেছেন যে আমার কবর) জেয়ারত করল কাল হাসরে তার জন্য সুপারিশ করা আমার জন্য ওয়াজিব। পবিত্র কাবা শরীফে ১ রাকায়াত নামাজ আদায় করলে আল্লাহতায়ালা তাকে লক্ষ রাকায়াত নামাজের ছওয়াব দেন। এমনিভাবে নামাজ, রোজা, দোয়া দরূদ, পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও যেকোন ইবাদতের ক্ষেত্রে লক্ষ গুণ ছওয়াব দেওয়া হয়। তাছাড়া পবিত্র মদিনা শরীফে একই নিয়মে সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার গূন ছওয়াব পাওয়া যায়। মহান আল্লাহর মেহমান হিসাবে পবিত্র হজ্ব পালনের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ তাদেরকে নিষ্পাপ করে দেন। হাদিসে উল্লেখ আছে  (ইবনে কাছিরে) হজ্বপালনে সামর্থ থাকা সত্বেও যারা এর থেকে বিরত থাকল, তারা ইয়াহুদী, নাছারা , খ্রীষ্টান হয়ে মরুক তাতে  আল্লাহর কিছু যায় আসে  না ।

পবিত্র হজ্ব পালনের জন্য প্রতিটি মুসলমানের বয়স সর্বোচ্চ ৪০/৫০ বছরের মধ্যেই¡ সম্পুর্ণ করা উচিত।  পবিত্র হজ্ব পালনে শক্তি সামর্থ্য থাকা দরকার। কারন পবিত্র হজ্ব  শুরুর তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১০ ই জিলহজ্ব তারিখে প্রায় ২০-২৫ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। মুযদালিফা থেকে হেঁটে জামারায় বড় শয়তানের পাথর ছুড়ে কাবায় এসে তাওয়াফ ও ছায়ী শেষ করে কোরবানী করতে হবে। আবার মিনায় ফিরে তাবুতে রাতযাপন করতে হয়। একারনে একই দিনে পরিশ্রম হয় অনেক বেশি। শক্তি সামর্থ্য না থাকলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভীড়ে হজ্বের এই কঠিন কার্যক্রম সুন্দরভাবে শেষ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।

মক্কা শরিফে দোয়া কবুলের বিশেষ স্থান গুলো মনে রাখা দরকার ১. হারামশরীফ-হারামশরীফের চতুরদিকে সর্বোচ্চ ৮-১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ২. মসজিদুল  হারাম মসজিদুল হারাম কাবা শরীফের চতুর্দিকে বৃত্তাকার মসজিদ ৩. কাবাশরীফ- মসজিদুল হারামের কেন্দ্রস্থল কালো রংয়ের চতুরকোন আয়তকার গৃহটি ৪. হাতিম-কাবাঘর সংলগ্ন উত্তরদিকে অর্ধ বৃত্তাকার ৫. মিজাবে রহমত-কাবাঘরের ছাদের পানি পড়ার জন্য সোনার তৈরি প্রনালী ৬. হাজরে আসওয়াদ- কাবাঘরের দক্ষিণ পূর্বকোনে দেয়ালে লাগানো জান্নাতি পাথর ৭.  বাবুল কাবা- কাবা ঘরের দরজা ৮. মাতাফ-কাবা শরিফের চতুরদিকে তাওয়াফের জন্য খোলা স্থান ৯. মাকামে ইব্রাহিম- কাবা শরিফের পূর্বদিকে পাথর খন্ড যার উপর দাঁড়িয়ে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) কাবা ঘরের প্রাচীর গাঁথেন ১০. সাফা- কাবা শরিফের পূর্বপাশে নিকটতম পাহাড় ১১. মারওয়া- সাফা থেকে ৪৫০ মিটার দূরে মারওয়া পাহাড় অবস্থিত। এখানে সায়ী করতে হয় ১২. মাসআ-সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তি স্থান ১৩. আরাফাত- হযরত আদম (আঃ) এর সঙ্গে হযরত হাওয়ার পুনর্মিলন স্থান এখানেই তাদের তওবা কবুল হয় ১৪. জাবালে রহমত- দয়ার পাহাড় আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত ১৫. মসজিদে নামিরা- আরাফাতের দিন এখান থেকে হজ্বেও ভাষন দেওয়া হয় ১৬. মুজদালিফা- এখানে আদম (আঃ) মা হাওয়া একত্রে রাত্রি যাপন করেন ১৭. মিনা- হযরত ইব্রাহিম(আঃ) আল্লাহর আদেশে তাঁর প্রিয় পুত্র  ইসমাইলকে যেখানে কোরবানী দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন ১৮. যামারাত- মিনায় পৃথক ৩টি স্তম্ভ  যেখানে শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোড়া হয়।

পবিত্র মদিনা শরীফে দোয়া কবুলের স্থান ১. নবীকরিম (সা:) এর রওজা মোবারক ২. রওজাতুম মিম রিযাযিল জান্নাহ ৩. মসজিদে কুবা ৪. বাকী গোরস্থান ৫. উহুদের যুদ্ধে শহীদদের কবর ৬. মসজিদুল কিবলা তাইন।

আল্লাহর মেহমান হিসাবে আল্লাহ আপনাদের  সুন্দর ও সুষ্ঠভাবে পবিত্র হজ্বব্রত পালন করার শক্তি ও সামর্থ দিন। আল্লাহ আপনাদের সকল দোয়া কবুল করুন এবং আপনারা সকলে নিষ্পাপ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন।

লেখক : সংবাদকর্মী
Email-md1.uphl@gmail.com

Print Friendly

Related Posts