শোক হোক শক্তির আধার॥ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান

এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী। বছর ঘুরে আবার এলো জাতীয় শোক দিবস। স্বাধীনতার স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, জাতির পিতাকে হারানোর দিবস।  বড় কষ্টের দিবস।  জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি প্রতি বছর দিনটিকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে আসছে।

শোকাবহ এই কালোদিবসে ভোর রাতে ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলও সেদিন হায়েনাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।

জঘন্যতম এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্তবাবু, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু’কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়সীমা ৯ মাস হলেও এর ইতিহাস সুদীর্ঘ।  বলা হয়, ১৯৭১ সালে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিটি ঘরেই ছিল দূর্গ আর প্রতিটি মানুষই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। সম্মুখ সমরের বীর সেনাদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছে শহর গ্রামের নারী-পুরুষ সম্মিলিতভাবে। সামগ্রিকভাবে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ছিল সকল যোদ্ধার লড়াইয়ের জীয়ন কাঠি।

যে পিতার দূরদর্শী, সাহসী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাঙালি জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র, নিজস্ব পতাকা ও জাতীয় সংগীত। সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে নিয়ে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র তাঁকে হত্যা করে। এই হত্যার মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্দ করার অপপ্রয়াস চালায়।

আজ দেশে সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন হয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। আজ দেশে স্বাধীনতার পক্ষশক্তির জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

যার জন্য এই দেশ, যার জন্য এই স্বাধীন মানচিত্র, ঘাতকের বুলেটে তারই দেহ ঝাঁঝরা হলো! দেশবিরোধী শক্তির অনুচররা তার পুরো পরিবারের ওপর যে নিষ্ঠুরতা চালালো, তা নজিরবিহীন। আর সেই রক্তেরই ওপর দাঁড়িয়ে দেশটাকে যখন গলাধকরণে ব্যস্ত, তখনই অসহায় এ জাতির ত্রাতা হয়ে এলেন তারই যোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।

আজ আমরা যে একটা সুখী, সমৃদ্ধ, আত্মনির্ভরশীল ও মর্যাদাসম্পন্ন দেশ গড়তে চলেছি।  আজকের বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশকে আজকে বাংলাদেশকে মানুষ সম্মানের চোখে দেখে। এটটুকুই আমাদের তৃপ্তি। বিশ্বে বাংলাদেশকে আমাদের নেত্রী আজ এমন একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এবারও জনগণ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। মানুষের এ আস্থা ও বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদেশটাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, তাতে সন্দেহ নেই।

শোক দিবসে, আসুন, আমরা জাতির পিতা হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করি। তাঁর ত্যাগ এবং তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ ধারণ করে সবাই মিলে তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। জাতীয় শোক দিবসে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান: বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সংগ্রামী ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক।

Print Friendly

Related Posts