লঞ্চ টার্মিনালে দ্বিগুণ করা হলো যাত্রীদের প্রবেশ ফি

খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: লঞ্চ টার্মিনালে দ্বিগুণ করা হলো যাত্রীদের প্রবেশ ফি। এখন থেকে নদী বন্দরে প্রবেশে লাগবে ১০ টাকা। যা ইতিপূর্বে ছিলো পাঁচ টাকা। ১ অক্টোবর থেকে টিকেটের নতুন মূল্য কার্যকর করা হয়েছে। এনিয়ে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সংগঠকরা জানান, পাঁচ টাকার ভাড়া দ্বিগুন করা সাধারণ যাত্রীদের সাথে স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে।

সূত্রমতে, শুধুমাত্র নৌ বন্দরের প্রবেশ টিকের মূল্যই বাড়েনি। বৃদ্ধি পেয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন আউট স্টেশনের টিকেট (টোল) ফি।  ওইসব স্টেশনে তিন টাকার যাত্রী টোল বাতিল করে তা পাঁচ টাকা করা হয়েছে। তবে আউট স্টেশনের নতুন ফি কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।  মঙ্গলবার সকালে বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা মোঃ আজমল হুদা মিঠু সরকার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, বর্ধিত ভাড়ার বিষয়ে ইতিপূর্বে নদী বন্দরে নোটিশ টানানো ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, যা কিছুই হয়েছে তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তেই হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র আওতাধীন দেশের সকল নদী বন্দর ও আউট স্টেশনে প্রবেশ টিকেটের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। সম্প্রতি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআইডব্লিউটিএ’র প্রধান কার্যালয়ে যৌথভাবে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তারই অংশ হিসেবে বরিশাল নদী বন্দরের টার্মিনাল ভবনে যাত্রীদের প্রবেশ ফি পাঁচ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। তবে টার্মিনাল ভবনে প্রবেশের জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রবীণ নাগরিক, প্রতিবন্ধী ও গর্ভবর্তী মায়েদের প্রবেশ ফি’র প্রয়োজন হবেনা।

তিনি আরো বলেন, টার্মিনালে প্রবেশ ফি শুধুমাত্র বরিশাল নৌ-বন্দরের জন্যই নয়, বরং দেশের প্রতিটি নৌ-বন্দরে প্রবেশ ফি বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা একইসাথে কার্যকর করা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী ১ জুলাই থেকে আউট স্টেশনেও ভাড়া বৃদ্ধি পাবে। প্রবেশ ফি বাড়ানোর ফলে যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করলেও, তারা বন্দরে যাত্রীদের জন্য সার্বিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি করেছেন। যাত্রী শাম্মী আক্তার জানান, নদী বন্দরের টার্মিনালে পর্যাপ্ত বসার জায়গা থাকলেও সেগুলোর আশপাশে প্রতিনিয়ত হকাররা দখল করে রেখেছেন। ফলে যাত্রীরা সেখানে ইচ্ছে করলেই বসতে পারেনা। আবার একতলা (অভ্যন্তরীণ) লঞ্চঘাটের আশপাশে কোন টয়লেট নেই। এ কারণেও যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। যাত্রীদের দাবি প্রবেশ টিকিটের ফি যেমন বাড়ানো হয়েছে, তেমনি যেন নদী বন্দরে সেবার মান ও যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়।

অপর যাত্রী মিরাজ হোসেন জানান, যাত্রীদের কথা চিন্তা করে টার্মিনাল এলাকার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো উচিত। বরিশাল নদী বন্দরে গাড়ি পার্কিং এর জায়গা থাকলেও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই।  তাই পল্টুনে হুরমুর করে সবাই মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যাচ্ছে ইচ্ছে মতো।  যাত্রীদের সরে যাওয়ার জন্য হর্ণ বাজাচ্ছে, মনে হচ্ছে এটা পল্টুন নয়; সড়ক দিয়ে মোটরসাইকেলগুলো যাচ্ছে।  আর সড়কের মধ্যে লঞ্চের যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে নৌ-বন্দরে যাত্রীদের প্রবেশ ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করেছেন যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাবেক সদস্য সচিব অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল।

তিনি বলেন, নদী বন্দরে প্রবেশে যাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায়েরই কথা ছিলোনা।  কেননা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ যাত্রীবাহী নৌযান থেকে টাকা পাচ্ছে। তার পরেও যাত্রীদের কাছ থেকে পাঁচ টাকা ফি রাখা হতো। এটা সহনশিল বিধায় মেনে নেয়া যায়।  কিন্তু পাঁচ টাকা থেকে তা দ্বিগুন করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।  কেননা একজন গরীব যাত্রীর জন্য ১০ টাকা অনেক বড় কিছু।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ যাত্রীদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি’র নামে যে টাকাটা আদায় হচ্ছে, সে টাকা কোন কাজে ব্যয় করা হচ্ছে সেটা আমাদের জানার অধিকার রয়েছে।  কিন্তু তা আমরা জানতে পারছি না।  মূলত এই টাকাটাই বিভিন্নভাবে লুন্ঠন হচ্ছে। তাই নদী বন্দরে প্রবেশ ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য তিনি জোর দাবি করেছেন।

বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ২১টি নৌবন্দরের মধ্যে ১২টি বন্দরে মঙ্গলবার থেকে প্রবেশ ফি যাত্রী প্রতি ১০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।

Print Friendly

Related Posts