বুয়েট ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা, ১৯ জনকে আসামি করে বাবার মামলা

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। সোমবার রাতে এ হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ১৯ জনকে আসামি করে আবরারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্র্যাককর্মী বরকতুল্লাহ চকবাজার থানায় মামলা করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে রাতেই তাদের অনেককে চিহ্নিত করা গেছে।

পুলিশের প্রাথমিক ভাষ্যেও জানা গেছে, ফাহাদ হত্যায় জড়িত ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। ওই ঘটনায় পুলিশ বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ৮ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে হত্যায় ব্যবহূত বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে ক্রাইম সিন ইউনিট।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ফাহাদ হত্যাকাণ্ড তদন্ত ও জড়িতদের গ্রেফতারে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি কাজ করছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত আটজনকে আটক করা হয়েছে। জড়িত অন্যদেরও আটকের চেষ্টা চলছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে। এই হত্যাকাণ্ডে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তে রাজনৈতিক প্রভাবও থাকবে না।

পুলিশের অন্য এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তিনটি খালি মদের বোতল, একটি অর্ধেক ভরা মদের বোতল, ক্রিকেটের চারটি স্টাম্প, একটি চাপাতি, দুটি লাঠি উদ্ধার করা হয়েছে। একটি স্টাম্পে রক্তের দাগ ছিল।

রোববার রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বুয়েটের চিকিৎসক মাসুক এলাহী জানান, অন্য ছাত্রদের মাধ্যমে খবর পেয়ে শেরে বাংলা হলের প্রথমতলা ও দ্বিতীয়তলার মাঝামাঝি জায়গায় ফাহাদের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। তার শরীরে অনেকগুলো আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে।

তিনি জানান, রাত্রিকালীন ডিউটিতে ছিলেন। খবর পেয়ে শেরে বাংলা হলে গিয়ে ফাহাদকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে নিজে পরীক্ষা করে দেখেন, তিনি মারা গেছেন। পরে বুয়েট কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়।

চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন জানান, ভোরে সংবাদ পেয়ে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের উত্তর ব্লকের ২য় তলার সিঁড়ি থেকে ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাতের কোনো এক সময় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখেছে কেউ।

তিনি জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার মৃত্যুর বিষয়ে আরও ধারণা পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে।

সহপাঠীদের অভিযোগ, রোববার রাত আটটার দিকে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে কয়েকজন আবরারকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত দুইটা পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের ধারণা, ২০১১ নম্বর রুমে নিয়ে তাকে পেটানো হয়।

হল শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, আবরারকে জেরা ও পেটানোর সময় ২০১১ নম্বর কক্ষে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের উপ-আইন বিষয়ক সম্পাদক অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশারফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন৷ ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় আবরারকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন৷ তারা সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন তিনি। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে।

Print Friendly

Related Posts