‘লেখক শেখ হাসিনা’

রিপন শান: শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি ৯অক্টোবর বুধবার বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে ‘লেখক শেখ হাসিনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান, শেখ হাসিনাকে নিবেদিত স্বরচিত কবিতাপাঠ, আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে।

বিকেলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে শেখ হাসিনা রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সপ্তাহব্যাপী প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী  কে এম খালিদ এমপি। প্রদর্শনী চলবে ৯ই-১৫ই অক্টোবর ২০১৯ পর্যন্ত (প্রতিদিন সকাল ৯:০০টা-বিকেলে ৫:০০)।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। লেখক শেখ হাসিনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবি কামাল চৌধুরী।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী  কে এম খালিদ এমপি, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল শেখ হাসিনার প্রথম বই ওরা টোকাই কেন। ২০১৮- তে তাঁর প্রথম বই প্রকাশের ত্রিশ বছর পূর্ণ হল। আজকের এই আলোচনা সে অর্থে শেখ হাসিনার লেখকজীবনের তিন দশক পূর্তিরও আনন্দ-উদযাপন। কোমল-স্নিগ্ধ-পেলব ভাষাভঙ্গিতে তিনি বয়ন করে চলেন তাঁর রচনার এক একটি অক্ষর; পরম মমতায়, সংগ্রামে ও সংকল্পে যেমন রচনা করে চলেছেন বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের সামষ্টিক অগ্রগতির সোনালি স্বপ্ন-অক্ষর।
লেখক শেখ হাসিনা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে কবি কামাল চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনার মনে সবসময় লেখকসত্তা প্রকাশের আর্তি জাগিয়ে রেখেছিল তাঁর দেশ। তিনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু তারও আগে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ পাঠক হিসেবে তাঁকে আমরা জানি তাঁর স্মৃতিকথায়। সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরাগ ও অগ্রসর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এ দুয়ের মিলিত প্রকাশ শেখ হাসিনার লেখকসত্তা, সেই সঙ্গে তাঁর সৃজন ও মননচর্চার অভিজ্ঞান।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার লেখালেখিকে মোটা দাগে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়। একটি আত্মজৈবনিক স্মৃতিকথা, যেখানে উঠে এসেছে তাঁর গ্রাম-জীবন, শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি, পারিবারিক জীবন, পিতার অম্লান স্মৃতিচারণ। অন্য অংশে তাঁর রাজনৈতিক সামাজিক অর্থনৈতিক চিন্তা ও উন্নয়নদর্শন প্রতিফলিত। তাঁর মানবিক অঙ্গীকার, উপলব্ধির সততা আর প্রকাশভঙ্গির সারল্য একজন সফল রাজনৈতিক নেতা ও রাষ্ট্রনায়কের পাশাপাশি তাঁকে পরিণত করেছে একজন দায়বদ্ধ লেখকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কে এম খালিদ এমপি বলেন, রাজীনিতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যতটা আলোচিত হয়েছেন লেখক শেখ হাসিনাও ঠিক ততটা আলোচনা পাওয়ার দাবিদার। বাংলার মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে নিরলস সংগ্রামের পাশাপাশি এদেশের সাংস্কৃতিক জাগরণেও শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী আর তাঁর নিজ রাজনৈতিক জীবনেও রয়েছে সাহিত্যের নিবিড় প্রভাব। আমাদের লেখক-সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিজনের যে কোনো প্রয়োজনে, দুর্যোগে তিনি পাশে দাঁড়ান। এভাবেই লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর রাজনীতির কবি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা স্বপ্নকে সফল করতে রাষ্ট্রনায়ক এবং লেখক শেখ হাসিনা হেঁটে চলেছেন অবিরাম বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষের দিকে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিকে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ড. মোঃ আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর রচনায় কঠিন কথাও সহজ করে বলেন। মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃতিম ভালবাসার প্রকাশ মুদ্রিত রয়েছে তাঁর অক্ষরে অক্ষরে। জাতির পিতার মতোই শেখ হাসিনাও লেখালেখিতে তাঁর অসামান্য দক্ষতার ছাপ রেখে চলেছেন।  সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ত্রিশ বছর আগে শেখ হাসিনার প্রথম গ্রন্থ ওরা টোকই কেন-এর ভূমিকা লিখেছিলাম আমি। তখন ভাবিনি রাজনীতির প্রবল দাবি মিটিয়ে তিনি লেখালেখি অব্যাহত রাখতে পারবেন। কিন্তু আমাদের বিস্মিত করে দিয়ে রাজনীতির পাশাপাশি লেখালেখিতেও শেখ হাসিনা সমান সক্রিয়তার পরিচয় দিয়ে চলেছেন। তাঁর রচনায় দারিদ্র্য দূরীকরণ, শিক্ষাবিস্তার এবং গণতন্ত্রের প্রসার-জনমানুষের সাথে সম্পৃক্ত এই তিনটি বিষয় মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে ধরা দেয়।
অনুষ্ঠানে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি রুবী রহমান, কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং কবি মহাদেব সাহার কবিতা আবৃত্তি করেন মো. শওকত আলী। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা আবৃত্তি  করেন আবৃত্তিশিল্পী আহ্কামউল্লাহ এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে লেখা সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন ডালিয়া আহমেদ। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা এবং নজরুলগীতি পরিবেশন করেন শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন ইফতেখার আলম প্রধান, অসিত বিশ্বাস এবং ইফতেখার হোসেন সোহেল ।
Print Friendly

Related Posts