ভোলার কুকরী-মুকরীতে ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ চলছে

মোকাম্মেল হক মিলন: ভোলা জেলার সর্ব দক্ষিনের উপজেলা চরফ্যাসনের ‘চর কুকরী- মুকরী’তে সরকারিভাবে ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাব মোকাবেলায় ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়’র অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি’র ৪০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

গত বছরের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ ইকো পার্কের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ইকোপার্ক স্থাপনে উদ্ভিদ, প্রাণী প্রজাতী রক্ষা, বন্য প্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দেশি বিদেশি পর্যটকদের আগমনে উপক’লীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ করা হবে।

বন বিভাগ কার্যালয় সূত্র জানায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব হৃাসকল্পে সৌন্দর্য বর্ধনকারী বনায়ন সৃষ্টির মাধ্যমে সাজানো হবে চর কুকরী-মুকরীকে। ইকো টুরিজম সুজোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে এখানকার সার্বিক পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রতিবেশ সংরক্ষিত করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কান্ট্রিবোট ক্রয়, নতুনভাবে তথ্য ও শিক্ষা কেন্দ্র নির্মাণ, শেডসহ গাইড ম্যাপ নির্মাণ, দিক নির্দেশনামূলক সাইন বোর্ড, পর্যটকদের জন্য যাত্রী ছাউনি, ৭০ ফিট উঁচু পর্যবেক্ষন টাওয়ার, আর সিসি রোড-পিলারসহ ছোট-বড় জেটি নির্মাণ করা হবে।

শিশুদের জন্য থাকবে বিভিন্ন রাইডস। আরো থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য সেড, বসার বেঞ্চ, বন্য প্রাণীদের জন্য পুকুর, বিভিন্ন বন্য প্রাণীর ম্যূরাল, হরিনের বেষ্টনি ইত্যাদি।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো: ফরিদ মিয়া বলেন, চর কুকরী-মুকরী দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর একটি দ্বীপ এলাকা। বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপটির প্রতি সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচুর আকর্শন রয়েছে। তাই পর্যাপ্ত সুজোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্বীপটিতে পর্যকটকদের আগমন নিশ্চিত করতে পার্ক স্থাপন করার উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বন বিভাগের হলেও এটি বাস্তবায়নে কাজ করছে গনপূর্ত বিভাগ।

চরফ্যাসন উপজেলার নদী ও সাগরের জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ কুকরী-মুকরী। এখানে রয়েছে ‘জীববৈচিত্রের এক বিপুল সমাহার এবং পাখিদের জন্য রয়েছে রামসার সাইট’।

আজ থেকে প্রায় চারদশক আগেও দ্বীপটিতে তেমন জনবসতি ছিলনা। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এটি একটি ইউনিয়নে পরিনত করা হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দ্বায়িত্ব গ্রহণের পর এই চরটির উন্নতি শুরু হয়। বর্তমানে চরটিতে জনসংখ্যা ১৪ হাজারেরও বেশি। নির্মাণ করা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক রেষ্ট হাউজ। পাখি পর্যবেক্ষন কেন্দ্র, পর্যবেক্ষন টাওয়ার, আমব্রেলা শেড, আরসিসি ব্যঞ্চসহ বিভিন্ন স্থাপনা হয়েছে।

চর কুকরী-মুকরী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাসেম মহাজন মনে করেন, এই এলাকায় পর্যটকদের আকর্শন করার জন্য ইকোপার্ক স্থাপন সরকারের একটি সঠিক স্বিদ্ধান্ত। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হবে। কারণ পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পেলে স্থানীয়দের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার লাভ করবে এবং ব্যবসার বিভিন্ন নতুন নতুন দিক উঠে আসবে। এতে করে সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নসহ সার্বিক অবস্থার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে জানান তিনি।

ভোলা গনপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: সারোয়ার হোসেন জানান, প্রকল্পটির অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজগুলো পূর্ত বিভাগ সম্পন্ন করছে। ২০১৮ সালের জুনে এর কাজ শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন রাইডস’র কাজ চলমান আছে। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য ৭০ ফিট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারের কাজ হয়েছে ২০ ভাগ। প্রতি ১০ ফুট উঁচুতে একটি করে ফ্লোর রয়েছে টাওয়ারটিতে। এছাড়া পর্যটকদের জন্য চরফ্যাসনে একটি রেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হবে। এর সার্বিক সহযোগিতায় বন বিভাগ কাজ করছে।

 

Print Friendly

Related Posts