হবিগঞ্জের একজন সাহসী ও কর্মঠ পুলিশ কর্মকর্তার কথা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের সাহসী ও কর্মঠ পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। তার পদক্ষেপে হবিগঞ্জ সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ থানা এলাকায় আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে। অপরাধ প্রবণতা কমেছে পুরো জেলায়। গ্রেফতার হয়েছে ৬০ জন ডাকাত সদস্য। প্রতিরোধ হয়েছে চুরি, ডাকাতি, সংঘর্ষ, ইভটিজিংসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। উদঘাটন হয়েছে বেশ কয়েকটি খুনের রহস্য।

আর এ সবই হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হবিগঞ্জ সদর সার্কেল) মো. রবিউল ইসলামের যোগদানের পর। অপরাধ নির্মূলে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন।

২০১৮ সালের ৫ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে সদর সার্কেলে যোগদান করেন মো. রবিউল ইসলাম। যোগদানের পর পুলিশের সুপারের নির্দেশে ও অরিক্তি পুলিশ সুপার রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে ৬০ জন ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে আন্তঃজেলা, আন্তঃবিভাগীয় ও আন্তর্জাতিক ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্যও রয়েছে। তার সরাসরি নেতৃত্বে একাধিক মামলার কুখ্যাত ২৫/৩০ জন ডাকাত গ্রেফতার হয়েছে।

অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের পিছনেও তার তথ্য সংগ্রহসহ সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ ও ডাকাতি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাদের সার্বিক দিক নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া তিনি কর্মকর্তা উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে নিজ দায়িত্বাধীন এলাকার বাইরে গিয়েও ডাকাত দলের সদস্য গ্রেফতার অভিযান পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। একাধিক ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।

গত ৭ জানুয়ারি ঢাকা সিলেট মহাসড়কের মদনপুর এলাকায় গোড়া পৈলের গাছ সংলগ্ন ছোট ব্রীজ নামক স্থানে অজ্ঞাত নামা ১০/১২ জন ডাকাতরা লন্ডন প্রবাসী শেখ নুরুল ইসলামের গাড়ীতে গুলি বর্ষণ করে গাড়ী চাকা ছিদ্র করে গাড়ী থামিয়ে ডাকাতি করে। এ সময় ডাকাতরা লন্ডন প্রবাসী পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন মূল্যবান ঘড়ি, বিদেশী মুদ্রা, স্বর্ণলংকারসহ মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় লন্ডনবাসী বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ডাকাতদের আসামী করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে তদন্ত করে ১৩ জানুয়ারি ডাকাত জালাল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে ডাকাত জালালের তথ্য অনুযায়ী তার সহযোগি খেলু মিয়া ও লোকমান মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এবং লোকমান মিয়ার বাড়ি থেকে লন্ডন প্রবাসী ঘরি, ট্রলিব্যাগ উদ্ধার করা হয়। ডাকাত জালাল আদালতে এ ব্যাপারে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। এই ডাকাতি সংগঠিত করেছিল ডাকাত কুদরত বাহিনী।

গত ৪ আগস্ট দেউন্দি চা বাগানে ডাঃ অনিমেষ গোলদার এর ডাক্তার বাংলোর বাস ভবনের ছিটকারী ভেঙ্গে অজ্ঞাত ৫/৬ ডাকাত প্রবেশ করে বাসায় রক্ষিত নগদ টাকা, স্বর্ণলংকার, মোবাইল ফোনসহ কাপড় চোপড় লুঠ করে নিয়ে যায়। এ পরবর্তীতে পুলিশ এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে।৫ আগস্ট চুনারুঘাট থানার শানখলা ইউনিয়নের কালিমনগর গাতাছড়া ব্রীজের উত্তর পাশে বাঁশ ঝাড়ের নিচে ৬/৭ জনের একটি ডাকাত দল ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। খবর পেয়ে তার নেতৃত্বে চুনারুঘাট থানা পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা করে। এ সময় ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি করে। পুলিশও ডাকাতদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি করে। এতে আন্তর্জাতিক ডাকাত দলের সর্দার একাধিক ডাকাতি মামলার আসামী কুখ্যাত ডাকাত সোলাইমান গুলিবিদ্ধ হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশ তাকে আটক করে। এ সময় অন্যান্য ডাকাতরা ঘটনাস্থল থেকে পলিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তবে ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তলসহ অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় ডাকাত সোলাইমানকে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন। নিহত ডাকাত সোলাইমানের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, নরসিংদী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডাকাতির ঘটনা ঘটতো।

এমনকি ভারতের ত্রিপুরায় ডাকাতি করতো সোলাইমান বাহিনী। ওই দিন সোলাইমানের সহযোগী ডাকাত দলের সদস্য কালা বাবুল, শাহীন, ইমরান মিয়া পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। এর মধ্যে শাহীন ডাকাতের বাড়ি শায়েস্তাগঞ্জ থানা এলাকায়। ডাকাত শাহীন ৩/৪টি ডাকাত দলের নেতৃত্ব দিতো। বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতি সংঘটন করতো। গ্রেফতারকৃত কালা বাবুলের বিরুদ্ধে ১৪টি, শাহীনের বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। শাহীন ডাকাত দলের নেতৃত্ব দেয়াসহ কোন জায়গা ডাকাতি করতে হবে তার পরিকল্পনা করতো। ডাকাতদের গাড়ীর ব্যবস্থা ও তাদের মালামাল বিক্রি করে দিতো।

গত ১০ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩টায় শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবই বাঁশ বাগানে একদল ডাকাত ডাকাতির প্রস্তুতি নেয়। সংবাদ পেয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে শায়েস্তাগঞ্জ থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় ডাকাত দল পুলিশকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে। এ সময়ে পুলিশ পাল্টা ফাঁকা গুলি ছুড়ে। এক পর্যায়ে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। পুলিশ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আশপাশে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে বাগানের ভেতর একাধিক গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আন্তঃজেলা ও আন্তঃবিভাগীয় ডাকাত দলের সর্দার কুদরত মিয়াকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করে। ঘটনাস্থলের আশেপাশ থেকে ৫ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি দেশীয় তৈরি পাইপগান ও অন্যান্য দেশীয় তৈরি ডাকাতির সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ডাকাত কুদরত মিয়াকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে এলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

ডাকাত কুদরতের নেতৃত্বে হবিগঞ্জ, বি-বাড়িয়া, নরসিংদী, সিলেট এলাকায় ডাকাতি সংগঠিত হতো। তার নামে বিভিন্ন থানায় ১৭টি ডাকাতি ও ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা ছিল। পুলিশ অনুসন্ধান করে জানতে পারে কুদরতের সাথে কালা বাবুল, তাহির মিয়া ও ইমরুল মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন ডাকাত সেখানে ছিল। ২৩ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ লাখাই সড়কের রিচি নামক স্থানে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ডিবি পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৪ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় ডাকাতদের কাছ থেকে ডাকাতি করা সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ সময় ডাকাত হুমায়ূন, কাইয়ুম, মহিবুর রহমান, সোহেল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

গত ১ নভেম্বর হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পাইকপাড়া-নছরতপুর সড়কের ডাকাতি প্রস্তুতিকালে বি-বাড়িয়া জেলার ভাদুঘর গ্রামের কুখ্যাত ডাকাত হানিফ মিয়া ও আজমিরীগঞ্জে কুখ্যাত ডাকাত সাইদুল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাইপগান, ধারালো অস্ত্র, কার্তুজ, রডসহ ডাকাতির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ৫ অক্টোবর ভোরে লাখাই উপজেলার মুড়াকরি ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়ির পরিবারের লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে লাখাই উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়। পরবর্তীতে বি-বাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার আতুকুড়া এলাকায় ডাকাতরা সিএনজি অটোরিকশাযোগে পালিয়ে যাওয়ার সময় ৫ ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত ডাকাতরা হলো সুনামগঞ্জ জেলার ছাতকের জিতু মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জের নূরপুর গ্রামের সৈয়দ আলী, লাখাই উপজেলার স্বজন গ্রামের ফরহাদ মিয়া, মামুন মিয়া ও মফিজুল ইসলাম। এ সময় ডাকাতদের কাছ থেকে টেলিভিশনসহ লুণ্ঠিত মালামাল ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ সরঞ্জামদি উদ্ধার করা হয়।

চৌকস এ কর্মকর্তার নেতৃত্বে লাখাই থানার ডাকাত আব্বাস মিয়া, আলজার মিয়া, মোশাহিদ মিয়া, তুরন মিয়া, আমিরুল ইসলাম, জালাল মিয়া, সাইফুল মিয়া, জিতু মিয়া, মামুন মিয়া, ফাহাদ মিয়া, মফিজ মিয়া, সৈয়দ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। হবিগঞ্জ থানার ইকবাল মিয়া, বাছির মিয়া, নিজাম মিয়া, তাউছ মিয়া ও জুয়েল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। শায়েস্তাগঞ্জ থানার শাহ আলম, কিতাব আলী, আব্দুল আউয়াল, লেলু মিয়া, লোকমান মিয়া, জামাল মিয়া, শেখ শাহিন মিয়া, ইমন তালুকদার, সুমন মিয়া, সাজিদ মিয়া, জামাল মিয়া, সিরাজুল মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলামের ভূমিকার কারনে হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের আওতাধীন থানাগুলো ছাড়াও পুরো জেলায় ডাকাতি প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। যার প্রভাব সিলেট রেঞ্জের প্রতিটি জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায়ও পড়েছে। এসব ডাকাতদের গ্রেফতার করার ফলে বিশেষ করে সিলেট রেঞ্জে ডাকাতির প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে। পুলিশ কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের এ ভূমিকাকে অনেকেই নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ হিসেবে মন্তব্য করছেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রবিউল ইসলাম জানান, রোড ডাকাতিসহ সকল ধরনের ডাকাতি প্রতিরোধ করতে হলে মুল ডাকাতদের চিহ্নিত করে কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা হলে ডাকাতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে। আমি সেই বিষয়টি লক্ষ্য রেখেই কাজ করছি।

এম.এম চৌধুরী কাওসার/বিডিমেট্রোনিউজ

Print Friendly

Related Posts