ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগের পর সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মন্দবাগে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার দুর্ঘটনায় পড়েছে ট্রেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় লাইনচ্যুত হয় ‘রংপুর এক্সপ্রেস’।

লাইন থেকে ছিটকে উল্টে যায় ট্রেনটির ইঞ্জিন। ইঞ্জিন থেকে ছড়ানো আগুনে দগ্ধ হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে নতুন কেনা তিনটি বগি। লাইনচ্যুত হয় আরও চারটি বগি। এ ঘটনায় উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ প্রায় ৭ ঘণ্টা বন্ধ ছিল।

এ দুর্ঘটনায় কেউ মারা না গেলেও অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বগিতে আগুন লাগার পর যাত্রীরা জানালার কাচ ভেঙে বাইরে আসতে থাকেন। তখন কয়েকজন আহত হন। আগুন লাগা তিনটি বগিরই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এগুলোর একটি বগি আর ব্যবহার করা যাবে কি-না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি করেছে রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসন। এর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। রেলওয়ে ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছ থেকে দু’রকম ভাষ্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, সিগন্যালের ভুলে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়। আবার কেউ বলছেন, লাইনের ত্রুটিতে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত ১৬ অক্টোবর ‘রংপুর এক্সপ্রেসে’ নতুন ১৪টি মিটারগেজ বগি দেওয়া হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। প্রতিটি বগির দাম প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। মাস না পেরোতেই দুর্ঘটনায় পুড়ল মূল্যবান বগিগুলো।

গত সোমবার রাত ৩টার দিকে সিগন্যাল অমান্য করে মন্দবাগ স্টেশনে প্রবেশ করে ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’কে ধাক্কা দেয় ‘তূর্ণা নিশীথা’।

এ দুর্ঘটনায় উদয়নের ১৬ যাত্রী নিহত হন। আহত হন অর্ধশতাধিক। এ দুর্ঘটনার ৬০ ঘণ্টার ব্যবধানে উল্লাপাড়ায় দুর্ঘটনায় পড়ে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল দুপুর ২টার দিকে ঈশ্বরদী-ঢাকা রেলপথে উল্লাপাড়া স্টেশনের আগে লেভেলক্রসিংয়ে ‘রংপুর এক্সপ্রেস’ লাইনচ্যুত হয়। ট্রেনটি ঢাকা থেকে যাচ্ছিল। লাইনচ্যুত সাতটি বগির মধ্যে দুটি রেলপথ থেকে অন্তত ১৫ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে।

ইঞ্জিন ও পাওয়ার কার সংলগ্ন বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়লে আধা ঘণ্টার চেষ্টায় তা নিয়ন্ত্রণ করে ফায়ার সার্ভিস। সিরাজগঞ্জ ফায়ার স্টেশনের উপপরিচালক মঞ্জিল হক জানান, আগুন নেভানোর পর ট্রেনের ভেতর তল্লাশি করা হয়। কারও মরদেহ পাওয়া যায়নি। যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের স্থানীয় লোকজন চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

উল্লাপাড়া ফায়ার স্টেশনের স্টেশন অফিসার নাদির হোসেন জানান, উল্টে যাওয়া ইঞ্জিন থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন দ্রুত পাশের বগিগুলোতে ছড়ায়। তিনটি বগির একটির প্রায় ৬০ ভাগ পুড়েছে। অন্য দুটি বগির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।

উল্লাপাড়া থানার ওসি গোলাম মোস্তফা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ যাত্রীদের উদ্ধার করে। তাদের মালপত্র রক্ষা করে।

উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান ও পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলে আসেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, পয়েন্টিং সিগন্যালে ভুলের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানতে পেরেছেন।

তবে স্থানীয় রেলকর্মীরা জানিয়েছেন, সিগন্যালের ভুল নয়, ত্রুটি ছিল রেললাইনে। এ কারণে লাইনচ্যুত হয় ট্রেনটি। উল্লাপাড়া স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলামও সিগন্যাল ভুলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানান, লাইনম্যানের ক্লিয়ারেন্স পেয়ে ট্রেনটি উল্লাপাড়া থেকে ঈশ্বরদীর উদ্দেশে ছেড়ে যায়। স্টেশনের মূল প্ল্যাটফর্ম পার হতেই হঠাৎ ট্রেনটির ইঞ্জিন উপরের দিকে উঠে যায়। সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. মিজানুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় ট্রাফিক কর্মকর্তা (ডিটিও) আব্দুল্লাহ আল মামুনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। কারও দায় থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পশ্চিমাঞ্চল রেল বিভাগের রাজশাহীর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির ক্রান্তি ঘোষ জানান, চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। প্রতিবেদন দিতে এ কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবস সময় দেওয়া হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ফিরোজ মাহমুদের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে জেলা প্রশাসন।

Print Friendly

Related Posts