ইডেন এখন পিঙ্ক গার্ডেন, টেস্ট ক্রিকেটের আরেক অধ্যায়ে বাংলাদেশ

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ইডেন এখন পিঙ্ক গার্ডেন, যেখানে উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। কলকাতার এই গোলাপি ময়দানেই আজ লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা শুরু করবেন টেস্ট ক্রিকেটের আরেক অধ্যায়। দিবারাত্রির টেস্ট ক্রিকেটে নাম লেখাবেন।

২০১৫ সালে গোলাপি বলের টেস্ট ক্রিকেট ম্যাচ প্রথম খেলে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের অভিষেক হচ্ছে এরও চার বছর পর। স্বাগতিক ভারতও গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্টে অভিষেক করছে ইডেনের ম্যাচ দিয়ে। এ জন্যই হয়তো এ ম্যাচ নিয়ে উন্মাদনা পৌঁছে গেছে অন্য এক উচ্চতায়।

টেস্টের মতো সিরিয়াস ক্রিকেটেও সংযোজন করা হয়েছে বিনোদন। গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্টে যোগ হচ্ছে নতুন মাত্রা। এই অভিযাত্রায় রোমাঞ্চকর ক্রিকেট খেলা উপহার দিতে চান মুমিনুল হকরা। একই রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছেন বিরাট কোহলিরাও।

শুধু বাংলাদেশ ও ভারতের নয়, উপমহাদেশেই প্রথম খেলা হচ্ছে গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট। শ্রীলংকা ও পাকিস্তান গোলাপি বলের ম্যাচ আগে খেলে ফেললেও তা দেশের মাটিতে হয়নি। সেদিক থেকেও কলকাতার দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচটি ঐতিহাসিক। আর যে কোনো প্রথমের সঙ্গেই তো মানুষ নিজেকে জড়াতে চায়। দুই দেশের ৭০ হাজার মানুষকে ম্যাচের প্রথম দিনই সে সুযোগ করে দিচ্ছে ইডেন।

টেস্ট ম্যাচটি যত বেশি দিন মাঠে থাকবে, দর্শকও তত বেশি নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারবেন। দর্শকের জন্যই তো দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচ আমদানি করেছে আইসিসি। এই ম্যাচের সফল আয়োজন হলে দিবারাত্রির টেস্টের জনপ্রিয়তা হু হু করে বেড়ে যাবে।

বিনোদন আর ক্রিকেট মিলে ইডেনের গোলাপি মঞ্চে দর্শকও ক্রিকেট রোমাঞ্চ উপভোগ করতে চান। টেস্ট ক্রিকেটের বিনোদনটা পুরোপুরি দেওয়ার চেষ্টা করবে দু’দলই। বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল হক যেমন বললেন, ‘আমি যখনই মাঠে নামব, জেতার জন্যই খেলব। প্রথম টেস্টে যে ভুলগুলো করেছিলাম, চেষ্টা করব সেগুলো কম করতে। চেষ্টা করব ম্যাচ থেকে ভালো কিছু অর্জন করতে।’

tiger-1

অভিষেকের পর থেকে এ পর্যন্ত ১১টি দিবারাত্রির ম্যাচ হয়েছে, যেখানে ফলহীন শেষ হয়নি কোনো ম্যাচ। আড়াই দিনেও টেস্ট ম্যাচ শেষ হওয়ার রেকর্ড আছে। তিনশ’ রানের ব্যক্তিগত ইনিংসও আছে একটি। কলকাতা টেস্টেও তেমন কিছু ঘটে গেলে অবাক হওয়ার নেই। পেস বোলারদের কেউ একজন রেকর্ডও গড়ে ফেলতে পারেন। এই টেস্ট ম্যাচের রোমাঞ্চ বাড়াতে ইডেনের স্পোর্টিং পিচ করা হয়েছে।

কিউরেটর সুজন মুখার্জি জানিয়েছেন, ব্যাটসম্যান-বোলার সবাই উইকেট থেকে সমান সুবিধা পাবেন। বিরাট কোহলির পছন্দে পিচের ওপর কিছুটা ঘাসও রেখে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের পিচ থেকে পেসাররা ভালো সুবিধা পান। এ জন্য বোলিংবৈচিত্র্য এবং লাইন-লেন্থ ধরে ধারাবাহিক বোলিং করে যেতে হয়। ভারতের তিন পেসার উমেশ যাদব, ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ শামি লাইন-লেন্থ বোলিংয়ে পারদর্শী। ইন্দোরে প্রথম টেস্ট ম্যাচ তিন দিনে শেষ করে দেওয়ার মূল কারিগরই ছিলেন এ তিনজন। টাইগারদের ২০ উইকেটের ১৪টিই নিয়েছেন তারা।

কোহলি জানালেন, স্বাগতিক দর্শক সুবিধা কাজে লাগিয়ে পেসাররা আগের চেয়েও ক্ষুরধার বোলিং করবেন ইডেনে। ৭০ হাজার দর্শকের সামনে ভারতের পেসারদের মুমিনুলদের খেলা সহজ হবে না বলে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন তিনি।

ইন্দোরের স্পোর্টিং পিচে খেলার শিক্ষা থেকে বাংলাদেশ দলও গোলাপি বলের দিবারাত্রির টেস্ট ম্যাচের একাদশে একাধিক পরিবর্তন আনতে পারে। এ ম্যাচে তিন পেসার খেলাবে নিশ্চিত। আবু জায়েদ রাহি, এবাদত হোসেনের সঙ্গে আল-আমিন বা মুস্তাফিজুর রহমানের একজন খেলবেন। এই রেসে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছেন আল আমিন। গোলাপি বলে সবচেয়ে বেশি প্রস্তুতি তার। প্রথম টেস্টের শুরুর দিন থেকেই গোলাপি বলে নেট সেশন করেছেন তিনি। এই ক’দিনে গোলাপি বলটাও ভালো বুঝে গেছেন তিনি। তাই পেসারের জবাব পেসাররাই দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আর দর্শককে মোকাবিলা করতে সমন্বিত পারফরম্যান্সের ওপর জোর দিয়েছেন মুমিনুল।

সংবাদ সম্মেলনে দর্শকের চাপ প্রসঙ্গ উঠতেই টাইগার অধিনায়ক বলেছেন, ‘দর্শক যদি মাঠে থাকে, আমার সব সময় খেলতে ভালো লাগে। খেলাটা অনেক বেশি মজা হয়, আমি এভাবেই চিন্তা করি। আমার মনে হয় না, এটা কোনোভাবে চাপ হবে।’

তবে এই ম্যাচে চ্যালেঞ্জ বেশি থাকবে ফ্লাডলাইটের আলোয় খেলা। অভিজ্ঞতা না থাকায় দুই দলের কেউই জানে না, সময়ের বাঁক পরিবর্তনের সঙ্গে কীভাবে মানিয়ে নিয়ে খেলতে হয়। সেদিক থেকে কলকাতা টেস্ট ম্যাচটি শিক্ষণীয়ও বলা যেতে পারে।

মুমিনুল স্বীকার করলেন রাতে খেলার চ্যালেঞ্জের বিষয়টি, ‘ফ্লাডলাইটে খেলার চ্যালেঞ্জ আছে, আবার ওদের বোলারদের খেলারও চ্যালেঞ্জ আছে। আমার মনে হয়, এসব চ্যালেঞ্জ ইতিবাচকভাবে নেওয়াই ভালো। এ পর্যায়ে খেলার চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মতো সামর্থ্য খেলোয়াড়দের অবশ্যই আছে।’ অবশ্য কোহলি গোলাপি বলকে যতটা চ্যালেঞ্জিং মনে করেন, ততটা প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে নয়। তাই মুমিনুলদেরও দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ এই ম্যাচ।

Print Friendly

Related Posts