আমাদের চিন্তায় প্রাথমিক শিক্ষা

মোছাঃ শ্যামলী আক্তার

 

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ,আমরা এক মহান পেশায় নিয়োজিত। মহান বলছি কেন? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকেই আমরা শিক্ষাদানের মাধ্যমে সৃষ্টির সেরা জীবের শ্রেষ্ঠত্ব দান করি। আমরাই পারি মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে জাতিকে তার উন্নয়ন সফলতার প্রথম সিঁড়ি উত্তরণ করাতে। কারন, আমরা জানি, ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’।

আর প্রাথমিক শিক্ষা তো হলো সকল শিক্ষার বুনিয়াদ। তারই ধারাবাহিকতায় মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা সময়ের দাবী।

সময়ের দাবি বলছি কেন? আমাদের সময়ে আমাদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে দিত আমাদের অভিভাবকরাই। কিন্তু বর্তমান সময়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করে। আমাদেরকে শুধু শক্ত হাতে, মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে তাদের লক্ষ্যে পৌছার প্রথম সিঁড়িটি অতিক্রমের দায়িত্ব নিতে হবে।

যে যাই বলুক না কেন। আমরাই পারি, আদর্শ নেতা হিসাবে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দিয়ে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমরাই পারি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজে সরকারকে সামগ্রিকভাবে সহযোগিতা করতে। আমরাই পারি, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়তে।

বর্তমান সময়টা আমাদের জন্য বড়ই কষ্টদায়ক কিন্তু আমরা এও জানি জাতির জনক এর সুযোগ্য কন্যা, মাদার অফ হিউম্যানেটি, জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষক বান্ধব। তিনি নিজেই বলেছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ছিল তার জবিনের লক্ষ্য। শিক্ষকতা পেশায় আসার জন্য যে স্বপ্ন গুলো তিনি লালন করেছিলেন, সেই স্বপ্নের দ্বার গুলো আমরাই উন্মোচন করব। তাই বলবো, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা এখন আর সময়ের দাবী নয়, বরং আমাদের সকলের অধিকার। আর এই অধিকার বাস্তবায়নে এবং আমাদের সুখ-দুঃখে যোগ্য অভিভাবক হিসাবে আমাদের পাশে আছেন, আমাদের মমতাময়ী নেত্রী শেখ হাসিনা।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ, মজবুত ভিতে যেমন একটি বহুতল ভবন টিকে থাকে ঠিক তেমনি মান সম্মত প্রাথমিক শিক্ষা একটি শিশুর শক্ত ও টেকসই জীবনের ভিত্তি তৈরি করে। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাই একটি শিশুকে স্বপ্ন দেখায় উন্নত জীবনের। আর এই উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শণে দ্বিতীয় জন্মধাত্রী হিসেবে আমরা শিক্ষকরা তাদের পাশে থাকব। পথ প্রদর্শক হয়ে আমরাই তাদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ আজ প্রধান মন্ত্রী তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করছেন। জানেন তো আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিন এই প্রাথমিক বিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছেই শিক্ষা অর্জন করেছেন। এখন তিনি একজন যোগ্য, দক্ষ, ও সফল রাষ্ট্রনায়। আমরাই পারি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে আগামির রাষ্ট্র্র নায়ক তৈরী করতে।

আজ আমি মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনে আমার নেওয়া কিছু পদক্ষেপ আপনাদের সামনে তুলে ধরব:

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, শিক্ষার্থীকে শেখানো যে কতটা কঠিন কাজ তা শিক্ষকরা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমরা যদি এই কঠিন বিষয়টা একটিু সহজভাবে চিন্তা করি তাহলে এই কঠিন বিষয়টি আমাদের কাছে সহজ হয়ে যাবে। শরুতেই শিক্ষার্থীকে যদি আমরা বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে পারি তাহলে শিক্ষা দেওয়ার মত কঠিন কাজটি আমাদের কাছে সহজ হয়ে যাবে। আর বিদ্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে হলে শুরুতেই বিদ্যালয়কে শিশুদের বয়স, চাহিদা ও শিশু বান্ধব করে সাজাতে হবে।

আমি সেই প্রতিজ্ঞা করেই এই স্কুলের হাল ধরেছিলাম শুরু থেকেই, চেষ্টা করেছি আমার সমস্ত ভালোবাসা সেই লক্ষে পৌঁছাতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর একটি বছর আমি আমার চিন্তা,চেতনা ও চেষ্টায় অটোল ছিলাম।আমি সফলতার হাতছানি দেখছিলাম। প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে সহকর্মিদের সাথে আলোচনা করেছি। শিক্ষা পরিবারের অনেকের সাথে আলোচনা করেছি। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি বলবো, আমি সফল, এখন আমার শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার তাড়া আছে কিন্তু যাওয়ার কোন তাড়া নেই।

আমার শিশুরা বিদ্যালয়ে আসার জন্য যতেষ্ট আগ্রহী। কারন, আমি বিদ্যালয়টিকে আমার শিক্ষার্থীদের চাওয়া অনুযায়ী সাজিয়েছি। তাদের শেখার বিষয়টি আমি শুধু বই পুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিনি বরং তাদের বই পুস্তক এর আলোকে সাজিয়েছি পুরো বিদ্যালয়টিকে। আমার বিদ্যালয়ের শিশুরা ছয় বছর অতিবাহিত করার পর অনেক কিছুই জেনে যাবে নিজের অজান্তেই। স্কুলের বারান্দায় যেখানেই দাড়াবে সেখানেই কিছু না কিছু শিখবে।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, আমার শিশুরা যখন বিদ্যালয়ে আসে প্রথমেই আমি তাদের হাসিমুখে গ্রহন করি। কারণ, যতক্ষন তারা বিদ্যালয়ে থাকবে আমরা হাসি মুখে গ্রহন করাটাই তাদের বিদ্যালয়ে থাকতে আগ্রহী করে তুলবে। প্রধান শিক্ষক হিসেবে এটা আমাকে খুব আনন্দ দেয়।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, আমি যেদিন আমার শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি।সেদিন থেকে আমি অনেক স্বপ্ন আমার মধ্যে লালন করি । আজ সেই স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমি বলবো,আমি সফল। আজ যখন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকগণ আমার বিদ্যালয়টি দেখতে আসেন, প্রসংশা করেন, তখন নিজেকে সত্যিই খুব ধন্য মনে করি। আরো ভালো লাগে যখন আমার সম্মানিত শিক্ষকগণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরার্মশ দেন এবং পরামর্শ নেন। তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে গিয়ে আমার বিদ্যারয়ের আদোলে নিজ বিদ্যালয়কে সাজাতে আগ্রহী হন।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ, শিক্ষার্থীদের একটা নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করতে হয় আর সেই সময়টা যদি তাদের কাছে আনন্দদায়ক হয় । সেই পরিবেশটা যদি তাদের কাছে আকর্ষনীয় হয় তাহলে শিক্ষা দেওয়াটা খুব সহজ হবে। পরিবেশটা এমন হওয়া দরকার যেখানে শিশুরা খেলাচ্ছলে শিখবে, খোলা পরিবেশে শিখবে । শিষ্টাচার শিখবে, আনন্দ উল্লাস করবে। এভাবেই শিশু মনে শিক্ষার আগ্রহ তৈরী হবে এবং, তারা নির্বিঘ্নে বেড়ে উঠবে।

আমার সফলতার সাথে আমার শিক্ষা পরিবারের সহযোগিতা আছে। সহযোগিতা পাই তার কাছে। তাই আমি আমার স্কুলে আমার দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সবসময়ই সচেতন থাকি। আমি আমার বিদ্যালয়ে আমার সহকারী শিক্ষাকগণকে তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন কারি। সবাই মিলে নুতন নুতন বিষয় নিয়ে ভাবি কিভাবে বিদ্যালয়কে আরো শিশু বান্ধব করে তৈরী করা যায়। এটা আমাদের নিজ প্রয়োজনে অনেক কঠিন কে সহজ করে তোলার প্রয়াস মাত্র ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একটি শিশুর জীবন গড়ার পাঠশালা যা তাদের জীবনের ভিত্তি তৈরী করে । এই শিক্ষার মাধ্যমেই তাদের জ্ঞান অর্জন হয়। চরিত্র গঠন হয়। আজকের এই শিশুরাই শিক্ষিত হয়ে আগামীতে জাতীকে নেতৃত্ব দিবে । এজন্যই তো বলা হয় । আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ । আর আগামীর এই ভবিষৎ কে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে পৃথিবীর জীবনে চলার উপযোগী করে তুলতে আমার এই প্রয়াস মাত্র।

আমি শিশুদের মানসিক চাপ সৃষ্টি করে শিক্ষা দিতে আগ্রহী নই। বরং তারা তাদের মত করে শিখুক, তাদের মত করে জানুক। কারণ বিভিন্ন গবেষনায় বার বার প্রমাণীত হয়েছে জানার ক্ষেত্রে, শেখার ক্ষেত্রে, তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। নইলে তাদের শেখায় বাঁধা সৃষ্টি হবে। তারা প্রশ্ন করবে ও উত্তর খুঁজবে। এভাবে প্রশ্ন করেই তারা জানতে পারবে। আমি জানি এভাবেই তারা আপনার কাছে আমার কাছে জানতে চাইবে এবং শিখবেও। এভাবেই একজন শিশুর দেখে অন্য শিশু শিখতে আগ্রহী হয় ও জানতে চায়।। এভাবেই তারা ভয়কে জয় করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। নিজেকে প্রস্তুত করে এক জন প্রকৃত মানুষ হিসেবে।

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ, এবার আসি শ্রেণী কক্ষের বিষয়ে। আমরা জানি শোনার মাধ্যমে বলার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যত তাড়াতাড়ি শেখে। একজন শ্রেণী কক্ষ গুলোকেও সাজাতে হাবে তাদের পাঠ্যপুস্তকের আলোকে। অর্থাৎ তাদের পাঠ্য পুস্তকের কঠিন বিষয় গুলো দিয়ে ঐ কঠিন বিষয়ের উপর যখন শিক্ষার্থীদের ধারনা দেয়া হবে,তখন তাদের কাছে বিষয়টি একদম পরিস্কার হয়ে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় আমি আমার বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত কক্ষ গুলোকে বইয়ের আলোকে সাজিয়েছি। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের মনের আনন্দে শিখবে। তাদের মনে জাগবে জানার কৌতুহল, দুর হবে শিক্ষা ভীতি, শিক্ষা হবে আনন্দের, আর সার্থকর্তা পাবে শিক্ষা নিয়ে এবারের শ্লোগান ‘‘মনের মতো স্কুল পেলে,শিখবো মোরা হেসে খেলে’’

শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ আমি যেদিন আমার শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। সেদিন থেকে আমি অনেক স্বপ্ন আমার মধ্যে লালন করি। আজ সেই স্বপ্নের অনেকটাই বাস্তবে রুপ দিতে পেরেছি। এক্ষেত্রে আমি বলবো, আমি সফল।আজ যখন বিভিন্ন বিদ্যালয় থেকে শিক্ষকগণ আমার বিদ্যালয়টি দেখতে আসেন, প্রসংশা করেন,তখন নিজেকে সত্যিই খুব ধন্য মনে করি। আরো ভালো লাগে যখন আমার সম্মানিত শিক্ষকগণ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরার্মশ দেন এবং পরামর্শ নেন। তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে গিয়ে আমার বিদ্যালয়ের আদোলে নিজ বিদ্যালয়কে সাজাতে আগ্রহী হন।

পরিশেষে প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের প্রতি রইল ছালাম ও শুভকামনা।
মোছাঃ শ্যামলী আক্তার: উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, ফুলবাড়ী, দিনাজপুর

Print Friendly

Related Posts