শীতে শিশুকে সুস্থ রাখুন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। শিশুরা বেশি সংবেদনশীল হওয়ায় শীতের শুরুতে নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

সাধারণত এ সময় বায়ুবাহিত ও ফুসফুসের রোগ বেশি হয়। এ সময় সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অ্যালার্জিক রোগ, শীতকালীন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হতে পারে।

তবে সর্দি-কাশি, কমন কোল্ড বা ঠাণ্ডা জ্বর বেশি দেখা দেয়। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের (ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যারা-ইনফ্লুয়েঞ্জা) মাধ্যমে এ রোগ সৃষ্টি হয়। আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা, কাশি বা হাঁচি থেকে নিঃসরিত ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগের সংক্রমণ হয়। তাই আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।

কোনো কোনো সময় খাবারে অরুচি, পাতলা পায়খানা হতে পারে। ছমাস বয়সের পর শিশুকে (যাদের ক্রনিক ডিজিজ আছে) ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।

শিশুর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রোগ হলো নিউমোনিয়া। মনে রাখতে হবে, ঠাণ্ডা লাগার পর শিশু যদি খুব দ্রুত ও ঘন ঘন শ্বাস নেয় বা শ্বাস নেওয়ার পর সাঁই সাঁই শব্দ হয় কিংবা বুকের পাঁজর যদি বসে যায়, তা হলে শিশুকে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগায় নিউমোনিয়া হতে পারে। তাই এ সময় শিশুকে ঠাণ্ডা পানীয় ও আইসক্রিম খাওয়ানো উচিত নয়। সব সময় গরম কাপড় পরিয়ে রাখতে হবে।

মায়েরা ছোট শিশুদের জন্ম থেকে দুবছর পর্যন্ত মাথা উঁচু করে বুকের দুধ খাওয়াবেন। শুয়ে দুধ খাওয়ালে সর্দি-কাশি ও কানের ইনফেকশন হতে পারে। খুব বেশি শীতের কাপড় পরালে শিশু ঘেমে গিয়ে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। প্রস্রাব করে তার ওপর শুয়ে থাকলে ঠাণ্ডা লাগতে পারে। শীতকালে ডায়রিয়া হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা হয় ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। প্রথমে বমি দিয়ে শুরু হয় এবং কিছুক্ষণ পর থেকে পাতলা পায়খানা শুরু হয়। একপর্যায়ে চাল ধোয়া পানির মতো ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হতে পারে।
ডায়রিয়া বা বমি হলে শুরুতেই খাওয়ার স্যালাইন ও অন্যান্য স্বাভাবিক খাবার খাওয়াতে হবে, যাতে কোনো অবস্থায় শরীরে পানিশূন্যতা দেখা না দেয়। যে পরিমাণ পানি ও লবণ শরীর থেকে বের হবে, সে পরিমাণ পানি ও লবণ খাওয়ার স্যালাইনের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে জিংক ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়াতে হবে।
খোসপাঁচড়া ছাড়াও শিশুর ফোঁড়া, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, হাত-পা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি চর্মরোগ হতে পারে। তাই শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। ধুলাবালি নিয়ে খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হবে। পরিবারের বড়দের সর্দি-কাশি হলে তাদের কাছ থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। পরিবারে বড় শিশুরা বাইরে গেলে তাদের ঘরে এসে হাত-পা ধুতে হবে। সর্বোপরি যে কোনো সমস্যার শুরুতেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে শিশুকে সুস্থ রাখুন।

 

-অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন

শিশুরোগ ও শিশু হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ

লেখক : সাবেক পরিচালক, শিশু হাসপাতাল

চেম্বার : ডা. মনজুর’স চাইলড’স কেয়ার সেন্টার, সাতমসজিদ রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা

Print Friendly

Related Posts