ঢাবি ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ, ক্ষোভে ক্যাম্পাস উত্তাল

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে রাজধানীর কুর্মিটোলা এলাকায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে রোববার রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়।

ওই শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, রোববার বিকালে ক্লাস শেষে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে কুর্মিটোলায় নামেন ওই তরুণী। উদ্দেশ্য ছিল রাতে বান্ধবীর বাসায় থেকে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া।

সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই অজ্ঞাত পরিচয় কোনো লোক তার মুখ চেপে ধরে এবং পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে তিনি চেতনা হারান।

রাত ১০টার দিকে চেতনা ফিরলে ওই শিক্ষার্থী একটি অটোরিকশা নিয়ে বান্ধবীর বাসায় যান এবং তাকে পুরো ঘটনা বলেন। এরপর সহপাঠীরা তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ কয়েকজন শিক্ষক রাতেই হাসপাতালে যান এবং ওই ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন।

ক্যান্টনমেন্ট জোনের পুলিশের সহকারী কমিশনার জাকিয়া নুসরাত বলেন, “আমরা ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছি, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এদিকে ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়লে রাতেই বিক্ষোভ শুরু হয় ক্যাম্পাসে। ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিচার দাবিতে রাত আড়াইটার দিকে মিছিল বের করে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকশ শিক্ষার্থীর ওই মিছিল ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে। রাত সাড়ে ৩টায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা।

এর আগে ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ডাকসুর এজিএস ও ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ধর্ষণের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার জেগে থাকবে। ধর্ষণকারীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। ওই ছাত্রীর ছবি ও নাম প্রকাশ না করার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্ষকের ছবি প্রকাশ করতে হবে।’

উত্তাল ঢাবি :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয়, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা ও ডাকসু নেতারাও সমাবেশে যোগ দেন।

অপরদিকে একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। ধর্ষণ ও নির্যাতনে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এ সভায় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত হন। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতার হোসেনের নেতৃত্বে ডাকসু থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

শাহবাগ থানায় ঢাবি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় শাহবাগ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল হাসান।

তিনি বলেন, ‘ঢাবি শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানা মামলা হয়েছে। আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যেহেতু ঘটনাটি ক্যান্টনমেন্ট থানায় সেহেতু লিখিত অভিযোগটি আমরা ক্যান্টনমেন্ট থানায় পাঠিয়ে দেব।’

প্রতিবাদে অনশনে সিফাত:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অনশনে বসেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্র। অনশনে বসা ছাত্রের নাম সিফাতুল ইসলাম সিফাত। দর্শন বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের ছাত্র তিনি। সোমবার সকাল থেকে অনশন শুরু করেন সিফাত। পরে তার সঙ্গে যোগ দেন আরো কয়েকজন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি ব্যানার নিয়ে সকাল থেকে অনশন শুরু করেন সিফাত। পাশে হাতে লেখা একটা ব্যানারে লেখা, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে অনশন।’

সিফাতুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বোন ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তার প্রতিবাদে অনশন পালন করছি। দ্রুত ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

পরে অনশনে যোগ দেওয়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্রী শেখ কান্তা রেজা বলেন, ‘এরকম ধর্ষণের ঘটনা দেশে প্রায় প্রতিদিনই ঘটে। কিছু দিন পরে আবার তা ধামাচাপা পড়ে যায়। ঢাবি শিক্ষার্থীকে ধর্ষণে যারা জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

ছায়া তদন্তে র‌্যাব-ডিবি :

কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় ছায়া তদন্তে নেমেছে র‌্যাব ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সোমবার র‌্যাব ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা কুর্মিটোলা গলফ ক্লাবের বাইরের দিকে একটি ঝোপের মধ্যে কিছু আলামত পান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাবের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা জানান, ‘ঝোপের মধ্যে ইউনিভার্সিটির বই, ঘড়িসহ কিছু আলামত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটিই ঘটনাস্থল।’

এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা।

 

 নরপিশাচকে গ্রেফতারে পুলিশকে অনুরোধ করেছি : ঢাবি ভিসি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতাদের জন্য পুলিশকে অনুরোধ জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। তিনি বলেছেন, তাদের (জড়িতদের) ধরতে পুলিশ তৎপর আছে। তাদের (পুলিশ) অনুরোধ করেছি নরপিশাচকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার জন্য।

সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি ওই ছাত্রীকে দেখতে গিয়ে এ কথা বলেন তিনি। ছাত্রী ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে উপাচার্য সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত, চরম দুঃখজনক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এটি। হাসপাতালে তাকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। ছাত্রীর মনোবল ভালো আছে। তার মনোবল খুব শক্ত আছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষ তার অভিবাবক। বাবাসহ পরিবারের লোকজন তার সঙ্গে আছে। প্রথমে তাকে মানসিকভাবে সামর্থ্য করে তুলতে হবে। তার কাছে আমরা ভিড় করব না। এখন মূলত প্রধান কাজ হচ্ছে তাকে মানসিকভাবে সাপোর্ট দেয়া। পাশাপাশি নরপিচাশকে শনাক্ত করা, তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা।

উপাচার্য আরও বলেন, থানা পুলিশ হাসপাতাল থেকেই পরিবারের কাছ থেকে মামলা নিয়েছে। তার বাবা বাদী হয়েছে। ঢাবি সব ধরনের সহায়তা দেবে।

ট্রমা-শ্বাসকষ্টে ভুগছেন ছাত্রীটি:

ধর্ষণের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওই ছাত্রী ট্রমায় ভুগছেন। তার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিতে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন। সোমবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ওই ছাত্রী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি সাংবাদিকদের একথা জানান।

ঢামেক পরিচালক বলেন, ‘মেয়েটির মেন্টালি ট্রমা ছাড়াও শারীরিক কিছু আঘাত রয়েছে। পাশাপাশি সে কিছু সমস্যার কথা উল্লেখ করেছে এবং আমরাও কিছু সমস্যা চিহ্নিত করেছি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাকে চিকিৎসা দিচ্ছে। এই অবস্থায় তার সঙ্গে দেখা করা, কথা বলা তার জন্য অস্বস্তিকর। কেউ যেন আমরা তার কাছে না যাই।’

ধর্ষণের আলামতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ধর্ষণের বিষয়টি ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ দেখছে। পাশাপাশি তাকে ঢামেকের নাক কান গলা বিভাগ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তার যেহেতু শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, সেজন্য রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগসহ আরও কিছু বিভাগের ডাক্তারদের নিয়ে একটি বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

পরে ঢামেক সূত্র জানায়, এ ঘটনায় ঢামেকের গাইনি বিভাগের প্রধান সালমা রউফকে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

 

Print Friendly

Related Posts