বরিশালের সড়কে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: বরিশাল নগরবাসীর জন্য সুখবর বয়ে আনছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। শুধু বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে নয় সড়কের দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবহার উপযোগীতা বজায় রাখতে বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে নথুল্লাবাদ থেকে রুপাতলী পর্যন্ত ফোরলেন সড়ক নির্মাণ করা হবে ।

পাশাপাশি গড়িয়ারপাড়-কুদঘাটা-কালিজিরায় নির্মান করা হবে বাইপাস সড়ক। এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এই তথ্য জানিয়েছেন বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান।

তিনি জানান, পদ্মা সেতু নির্মান হলে বরিশালে প্রচুর শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। তাছাড়া তৃতীয় বৃহৎ সমুদ্র বন্দর, আর্ন্তুজাতিকামানের শিপ ইয়ার্ড, পর্যটন কেন্দ্র, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বরিশাল বিভাগে থাকায় পদ্মাসেতু নির্মান পরবর্তী এই অঞ্চলের চাহিদা বাণিজ্যিক রাজধানীর সমতুল্য হয়ে যাবে। সরকার এ কারনে শুধু বর্তমানের চিন্তা করে নয়, ভবিষ্যতের চিন্তা করে প্রত্যেকটি সড়ক মেরামত এবং প্রশস্তকরণ করছেন। এই পরিকল্পনার মধ্যে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে সওজ।

মাসুদ খান বলেন, দুইটি ভাগে কাজ শুরু হয়েছে। প্রথমত যেসব সড়ক রয়েছে তাতে আর্ন্তজাতিক নিয়ম মেনে সংস্কার এবং যেগুলো নির্মাণ করা হবে তা আর্ন্তুজাতিক মানের হতে হবে। এই কাজের অংশ হিসেবে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ভুরঘাটা থেকে লেবুখালী মহাসড়কে মোট ১০টি স্পীড ব্রেকার রয়েছে তা উচ্ছেদ করা হবে।

নিার্বহী প্রকৌশলী মাসুদ খান বলেন, মহাসড়কে স্পীড ব্রেকার রাখার নিয়ম নেই। এরপরপরই হাত দেওয়া হবে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কাশিপুর থেকে রুপাতলী পর্যন্ত ৯৫৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করেছে সওজ। একইসাথে মূল সড়কের পাশে কতটুকু জমি সড়ক ও জনপথ বিভাগের তা নির্ধারণ করে অভিযানে নামছে। ফেব্রুয়ারী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে সড়কের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশল বিভাগ।

জানা গেছে, ৯৫৭টি স্থাপনার মধ্যে পাকা, আধা পাকা ও কাঠের ঘর রয়েছে। ওদিকে ভুরঘাটা থেকে কাশিপুর এবং রুপাতলী থেকে লেবুখালী পর্যন্ত সড়কে অবৈধ স্থাপনা সনাক্তের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রæত গতিতে। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা বরিশাল জেলা প্রশাসন থেকেও দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি জেলা প্রশাসন (পিটিশন নং ১৫৬৪/২০১১) এর অনুক‚লে ২০১৫ সালের ৭ ডিসেম্বরের রায় মোতাবেক সড়কের উভয় পাশে ১০ মিটার করে ফাঁকা স্থান রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।

জানা গেছে, দুটি কারনে একইসাথে শহরের মধ্য থেকে ফোরলেন এবং গড়িয়ার পাড় থেকে কালিজিরা পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করতে যাচ্ছে। ফোরলেন ব্যবহার করা হবে আঞ্চলিক ও ক্ষুদ্র থেকে মাঝারি আকৃতির যানবাহনের জন্য। আর বাইপাস ব্যবহার করা হবে শিল্প কারখানার কাচামাল বহনকারী এবং ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য। এতে করে সড়কে উপযোগীতাও দীর্ঘদিন রক্ষা পাবে তেমনি যানজটের কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

প্রকৌশল বিভাগ বলছে, বরিশাল নগরীর মধ্যে বাস্তবায়নাধীন ১১ কিলোমিটার ফোরলেন সড়কটি এখনো উপযুক্ত ফোরলেন হয়ে ওঠেনি। এই সড়কটির জন্য কয়েকটি কালভার্ট এবং আমতলার মোড় থেকে সাগরদী ব্রীজ পর্যন্ত সরু সড়ক প্রধান প্রতিবন্ধকতা। চলতি মাসের শেষের দিকে এই প্রতিবন্ধকতা দূর করতে আমতলা মোড় এলাকা প্রশস্ত করতে সমাজ কল্যান অধিদফতরের কাছে জমির চাহিদা প্রস্তাব করা হবে। পাশাপাশি ওই অংশের সড়কের জমি উদ্ধার করা হবেও বলে জানানো হয়েছে।

এদিকে কালভার্টগুলোকে ফোরলেনের উপযুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে সওজের। জানা গেছে, ফোরলেন ব্যবহার উপযোগীতার পাশাপাশি জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাইপাস সড়ক নির্মাণে হাত দেবে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এ নিয়ে গত ২০ জানুয়ারী স্থানীয় সুধীজনের সাথে বৈঠক করেছেন বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগ।

নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদ খান জানিয়েছেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে কোন স্থান থেকে বাইপাস সড়ক যাবে তা নির্ধারণ করার জন্য ভ‚মি জরিপের কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত কাশিপুর থেকে নথুল্লাবাদ হয়ে সিএন্ডবি রোড থেকে রুপাতলী পর্যন্ত সড়কটি ফোরলেন মহাসড়কে উন্নিত করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সওজের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল বরিশালবাসী। এমনকি সিএন্ডবি রোডকে ফোরলেনে উন্নীত না করার জন্য এবং নিজেদের ভবন/জমি রক্ষার জন্য ‘বরিশাল শহর বাইপাস সড়ক বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করে বৃহৎ কর্মসূচিও পালন করে। একইসাথে শহরের মধ্য থেকে ফোরলেনের বিরোধীতা করে বরিশাল নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। এরফলে পুরো বিষেয়টি পুনরায় বিবেচনায় নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ। নগরবাসীর দাবীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বাইপাস সড়কের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সওজ। এখন সড়কটি বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের চিন্তা করছে সওজ।

এর আগে ১৯৯৮ সালে গড়িয়ারপাড় থেকে চহঠা-বারুজ্জারহাট-রুইয়ার পুল-টিয়াখালী-দপদপিয়া এলাকা দিয়ে বিকল্প চার লেন বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছিল সওজ। ওই বাইপাস সড়কটি বরিশাল-ঢাকা এবং বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের সংযুক্ত করবে। সেটি বাস্তবায়ন হলে বরিশাল নগরীর শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তরের ভবন ও আবাসিক ভবনের ধ্বংসযজ্ঞ এড়ানো যাবে, আবার নগরীর মধ্যভাগও নিরাপদ হবে। তাছাড়া বর্তমান ফোরলেন সড়কটি মাত্র ১২০ ফুট প্রশস্ত। এরপর আর জমি বাড়ানো সম্ভব নয়। যা জাতীয় মহাসড়কের নির্ধারিত নিয়ম অনুসরন করে না বলে মনে করেন নগরবিদরা।

Print Friendly

Related Posts