লাখাইয়ে যেভাবে খুন হন টমটম চালক ফালু

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জের লাখাইয়ে টমটম চালক ফালু মিয়া হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ২৪ মার্চ সন্ধ্যায় হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এতে জানা গেছে, ২০ মার্চ হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার তিস্কারপুর এলাকায় অজ্ঞাতনামা ১ যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার করে লাখাই থানা পুলিশ। হত্যাকান্ডটি প্রাথমিকভাবে রশির মাধ্যমে গলায় পেচিয়ে সংঘটিত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়ার পর এসআই (নিঃ) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বাদী হয়ে উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবরে এজাহার দায়ের করেন।

এজাহারের প্রেক্ষিতে ২১ মার্চ লাখাই থানার মামলা নং-৬ রুজু হয়। মামলাটি তদন্তকালে হবিগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিপিএম, পিপিএম’র নির্দেশে ও হবিগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা এর নির্দেশনা ও তদারকির মাধ্যমে লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলামসহ চৌকস পুলিশ টিম অজ্ঞাতনামা মৃত দেহটি সনাক্ত করে জানতে পারেন যে, ভিকটিম ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার সরাইল উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার শুক্কুর আলীর পুত্র ফালু মিয়া। সে পেশায় একজন টমটম চালক।

এ সূত্রের আলোকে এএসআই (নিঃ) মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন ও এএসআই (নিঃ) মোঃ তোহা সঙ্গীয় ফোর্সসহ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার কাজ শুরু করে। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামী কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার শিবলা গ্রামের মৃত ছাত্তার মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া (২৫) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের চান্দিয়ারা এলাকার মৃত জালাল মিয়ার ছেলে ইসলাম মিয়া (৩৫) কে গ্রেফতার করা হয়।

হবিগঞ্জ সার্কেল এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা এর নেতৃত্বে গ্রেফতারকৃত আসামীদ্বয়কে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভিকটিম ফালু মিয়াকে হত্যার লোহমর্ষক, চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।

ঘটনার দিন ১৯ মার্চ দিবাগত রাত অনুমান ৮ টায় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক জসিম, ও রাসেল মিয়া নামে দুইজন ব্যক্তি ভিকটিম ফালু মিয়ার টমটম ছিনতাই করার উদ্দেশ্যে কৌশলে টমটমটি ভাড়া করে এবং ভিকটিম ফালু মিয়াসহ টমটমটি লাখাই উপজেলার মোড়াকড়ি এলাকায় নিয়ে আসে। মোড়াকড়ি এলাকায় আসার পর আসামীরা মুড়ি ও চানাচুরের সাথে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে ভিকটিম ফালু মিয়াকে খাওয়ায়। নেশাযুক্ত মুড়ি চানাচুর খাওয়ার পর ভিকটিম ফালু মিয়া অচেতন হয়ে পড়লে আসামী রাসেল মিয়া ভিকটিম ফালু মিয়াকে নিয়ে টমটমের পিছনে বসে এবং ঘটনায় জড়িত অপর আসামী জসিম টমটমটি চালিয়ে তিস্কারপুর এলাকায় নিয়ে যায়।

সেখানে যাওয়ার পর আসামীরা টমটমটি রাস্তার পাশে রেখে ভিকটিমকে নিয়ে শুকনো খালের মধ্যে নামে এবং সেখানে থাকা একটি গাছের উপর ভিকটিমকে বসায়। গাছের উপরে ভিকটিমকে বসানোর পর আসামী রাসেল মিয়াকে ভিকটিম ধরে রাখে এবং অপর আসামী জসিম তাৎক্ষণিকভাবে টমটম হতে একটি নাইলনের রশি নিয়ে আসে। এ রশি আনার পর আসামী রাসেল মিয়া অচেতন ভিকটিম ফালু মিয়াকে মাটির ওপর বসিয়ে তার হাত-পা একজোট করে চেঁপে ধরে এবং আসামী জসিম মিয়া নাইলনের রশি দ্বারা ভিকটিমের গলা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আসামীরা দ্রুত টমটমটি নিয়ে নখলাউক ও কাশিমপুর হয়ে বুল্লা বাজারে যাওয়ার পর টমটমের চার্জ শেষ হয়ে যায়। তখন আসামীরা সেখানে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে। সকাল হওয়ার পর আসামীরা অন্য আরেকটি টমটম ভাড়া করে সেটা দিয়ে টমটমটি ভাদিকারা এলাকায় নিয়া আসে।

ভাদিকারা পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজনের টমটমটি দেখার পর সন্দেহ হলে তারা টমটমটি আটক করেন। ২০ মার্চ আসামীরা এলাকার লোকজনদের সাথে সুকৌশলে আলাপ আলোচনা করে টমটমটি তাদের বলে দাবী করলে এলাকার লোকজন আটককৃত টমটমটি ছেড়ে দেয়। তখন আসামীরা সকাল অনুমান সাড়ে ১০ টায় টমটমটি নিয়ে ভাদিকারা হতে উপজেলার স্বজনগ্রাম এলাকায় যায়। স্বজনগ্রাম এলাকায় পৌঁছার পর আসামীরা টমটমটি নৌকায় তুলে নদী পার করে কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আসামী রাসেল মিয়ার বাড়ীর সামনে নিয়ে রাখে। পরবর্তীতে ২১ থেকে ২২ মার্চ পর্যন্ত টমটমটি রাসেল মিয়ার বাড়ীর সামনে ছিল। এর মধ্যে রাসেল মিয়া ঘটনার বিষয়টি জসিম এর ভাই ইসলাম মিয়াকে অবগত করে। তখন ইসলাম মিয়া আলামত গোপন করার জন্য একটি ষ্ট্যাম্প ও ব্যাটারীর একটি ভূয়া কাগজ তৈরী করে ২২ মার্চ সেখানে আসে এবং টমটমটি বিক্রয়ের জন্য লোক ঠিক করতে থাকে। টমটমের ব্যাটারীতে চার্জ না থাকায় ঐদিন সকাল অনুমান সাড়ে ১১ টায় আসামীগণ টমটমটি নদী পাড় করে অষ্টগ্রাম উপজেলার ইসলামপুর এলাকার জনৈক আরজু মিয়ার গ্যারেজে নিয়ে চার্জে দেয়।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এবং হবিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল ইসলাম পিপিএম-সেবা এর নির্দেশনা ও তদারকির মাধ্যমে লাখাই থানা পুলিশ এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত আসামী রাসেল মিয়া (২৫) এবং আলামত গোপনে সহায়তাকারী আসামী ইসলাম মিয়া (৩৫) গ্রেফতার করে।

আসামীরা বিজ্ঞ আদালতে ফৌজধারী কার্য বিবি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন। ঘটনায় জড়িত অপর পলাতক আসামী জসিম মিয়াকে গ্রেফতারের লক্ষে অভিযান অব্যাহত আছে।

এমএমচৌধুরী/এইচ

Print Friendly

Related Posts