পিঠা বিক্রেতা রাবেয়াকে ইউএনও সুমী আক্তারের খাদ্যসামগ্রী উপহার

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন এলাকার পিঠা বিক্রেতা সেই রাবেয়া খাতুনকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিলেন ইউএনও সুমী আক্তার।

২২ মে বিকেলে শায়েস্তাগঞ্জের বিরামচর এলাকায় অস্থায়ী কার্যালয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমী আক্তারের কাছ থেকে রাবেয়া খাতুন এ উপহার গ্রহণ করেন।

এর আগে একইদিন সকালে রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে অনলাইনে ‘শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশনের রাবেয়া ভালো নেই’ শিরোনামে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ হয়। সংবাদটি প্রকাশ হলে ইউএনও সুমী আক্তারের দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি (ইউএনও) অনলাইনের হবিগঞ্জ প্রতিনিধিকে বলেন, রাবেয়া খাতুনকে উপজেলায় পাঠানোর জন্য। এ খবর পেয়ে রাবেয়া তার এক কন্যা সন্তানকে সাথে নিয়ে দ্রুত উপজেল কার্যালয়ে যান।

ইউএনও সুমী আক্তারের কাছ থেকে উপহার গ্রহণ করে রাবেয়া খাতুন খুশিতে আত্মহারা। সন্তোষ প্রকাশ করে রাবেয়া খাতুন বলেন, ইউএনও স্যার গরীবের দুঃখ বুঝেন। তাই সংবাদ দেখেই দ্রুত খবর পাঠান। আমাকে নিয়ে মানবিক সংবাদ প্রকাশ করায় এ অনলাইনকে ধন্যবাদ। সেই সাথে বর্তমান সরকার ও ইউএনও সুমী আক্তার মহোদয়ের প্রতি রাবেয়া খাতুন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এ খাদ্যে তার কিছু দিন যাবে।

দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অসহায় রাবেয়া খাতুনকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেওয়ায় ইউএনও সুমী আক্তারকে ধন্যবাদ জানিয়ে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ গাজীউর রহমান ইমরান বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের মাধ্যমে সরকারী বরাদ্দের চাল পৌর ও ইউনিয়নগুলোতে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে। সেখান থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ে অসহায় পরিবারের মাঝে এগুলো বন্টন করে দেওয়া হচ্ছে।

ইউএনও সুমী আক্তার বলেন, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। সে অনুযায়ী চেষ্টা করে যাচ্ছি। বরাদ্দ আসামাত্র নিয়ম মোতাবেক বন্টন করে দেওয়া হচ্ছে। রাবেয়া খাতুনের হাতে সরকারী খাদ্যসামগ্রী উপহার তুলে দিতে পেরে অত্যন্ত ভালো গেলেছে।

রাবেয়া খাতুনকে নিয়ে অনলাইন পত্রিকায় মানবিক সংবাদে উল্লেখ ছিল-রাবেয়া খাতুন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জংশন এলাকায় পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাতেন। খেয়ে পরে ভালই কেটে যাচ্ছিল দিন। করোনায় তার এ কর্মজীবনে থাবা বসিয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে পিঠা বিক্রি।
করোনা শুরুর পর থেকেই তিনি বেকার। বর্তমানে খুবই অসহায় হয়ে পড়েছেন। এখন অপেক্ষা করতে হচ্ছে ত্রাণের। কিন্তু ত্রাণ পাওয়াও তার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।

শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরের হাসপাতাল সড়ক এলাকায় মাত্র আড়াই শতক জমির ছোট একটি ঘরে ৪ সন্তান নিয়ে রাবেয়া খাতুনের বসবাস। স্বামী ফুল মিয়া প্রায় ৭ বছর আগে মারা গেছেন। সেই থেকে রাবেয়ার আয়ের উপর এ পরিবারটি চলছে।

সৎপথে জীবিকা নির্বাহে তিনি পিঠার দোকান দেন। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করে মোটামুটি আয় হতো। এ টাকায় নিত্যপণ্য ক্রয় করে বাড়ি ফিরতেন রাবেয়া। জ্বলে উঠতো চুলা। রান্না করে সন্তানদের নিয়ে খেয়ে মনের সুখে ঘুমিয়ে পড়তেন।

করোনায় রোজগারের একমাত্র পথটি বন্ধ থাকায় রাবেয়া কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। বদলে গেছে তার জীবনের গতিপথ। ক্রমেই তীব্রতর হচ্ছে অভাব। স্বামী মারা যাওয়ার পর চোখের পানি ঝরছিল। একসময় সময়ের সাথে মানিয়ে নিয়েছিলেন জীবন। পিঠা বিক্রির মাধ্যমে খুঁজে বের করেছিলেন বাঁচার পথ। কিন্তু এ করোনা পরিস্থিতিতে সে পথটিও রুদ্ধ তার। এ কঠিন মুহূর্তে মৃত স্বামীর কখা খুবই মনে পড়ছে তার। বুক ফেঁটে কান্না পাচ্ছে। কিন্তু এ কঠিন সময়ে এসে তার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে। কিছু জানতে চাইলে তিনি নির্বাক চোখে তাকিয়ে থাকেন।

তিনি জানান, করোনার শুরুতে সামান্য কিছু খাদ্য পেয়েছিলেন। সেই খাবার কবে শেষ হয়েছে। এখন কেউ তার জন্য খাবার নিয়ে আসছে না। কোন উপায় না পেয়ে তিনি বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তবে লাভ হচ্ছেনা। খেয়ে না খেয়ে রোজা পালন করছেন। এরমধ্যে এসে গেছে ঈদও। সন্তানদের মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার তুলে দিতে না পেরে তিনি হতাশ।

অসহায় রাবেয়া জানান, তিনবেলা ডালভাতেই সন্তুষ্ট ছিলেন। কর্মহীন হওয়ায় তিনি ভালো করে এক বেলাও খেতে পারছেন না।

মামুন/এইচ

Print Friendly

Related Posts