পিতা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও আপোষহীন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ নাসিম পিতা মনসুর আলীর মতোই সাহসী ও আপোষহীন ছিলেন ।

৩ নভেম্বর জেলখানায় নিহত জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন পিতার মতোই সাহসী ও আপোষহীন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর যেমন ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে আপোষহীন, তেমনি মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার প্রশ্নে আপোষহীন। বার বার অগ্নিপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। মাঠের রাজনীতিতে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন নাসিম। বাবার মতো তিনিও দেশের রাজনীতিতে একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

ছাত্রজীবন থেকে গণমানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন মোহাম্মদ নাসিম। ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করলেও বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা হবার পরে ছাত্রলীগের রাজনীতর সাথে যুক্ত হন নাসিম। ছাত্র রাজনীতি ছাড়ার পর যুবলীগের রাজনীতি করে ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন এই নেতা। ওই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুব সম্পাদক নির্বাচিত হন।

‘যুব সম্পাদক’ নির্বাচিত হওয়ার পর মোহাম্মদ নাসিম ১৯৮৭ সালের সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক মনোনীত হন। এর পর ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিমকে দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০০২ ও ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত দলের সম্মেলনে তাঁকে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির এক নম্বর সদস্য পদে রাখা হয়। এরপর ২০১২ সালের সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর টানা তিন মেয়াদে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনৈতিক মাঠে সুবক্তা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ নাসিম ভোটের রাজনীতিতেও সফল হিসেবে পরিচিত। ১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি সিরাজগঞ্জ-১ সংসদীয় আসন (কাজীপুর) থেকে পাঁচবার বিজয়ী হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে তাঁকে স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। ২০০৯ সালের নির্বাচনে তৎকালীন ১/১১ সরকারের দেয়া মামলার কারণে মোহাম্মদ নাসিম অংশগ্রহণ করতে পারেননি। ওই নির্বাচনে তার বড় সন্তান তানভীর শাকিল জয়কে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে মোহাম্মদ নাসিমকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। বিজয়ী সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁকে।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনেও মোহাম্মদ নাসিম সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এছাড়াও জাতীয় সংসদে হুইপ, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ নাসিম।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হওয়ার কারণে তাঁর বাবা মনসুর আলীকে কারাগারে ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিতে হয়েছিল। তেমনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার আস্থা ভাজন হিসেবে রাজনীতি করার কারণে ১/১১ সরকারের সময়ে চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। সে সময়ে বড় ধরনের স্ট্রোক করেন মোহাম্মদ নাসিম। নির্যাতনের শিকার হয়ে দলের অনেক নেতা সে সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যার বিরুদ্ধে নানা কথা বললেও নাসিমের মুখ থেকে কোন কথা বের করতে পারেনি সে সময়ের সরকার।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মোহাম্মদ নাসিম তার পিতার মতোই দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন। দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনা এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন।’

তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও গণমুখী নেতাকে হারালো এবং আমি নিজে একজন সহযোদ্ধাকে হারিয়েছি।’

মোহাম্মদ নাসিম আজ শনিবার সকালে ঢাকার শ্যামলীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে মারা যান। তিনি পহেলা জুন থেকে এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে মোহাম্মদ নাসিমের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি স্ত্রী ও তিন সন্তান রেখে গেছেন।

Print Friendly

Related Posts