ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের বাজেট পরবর্তী প্রতিক্রিয়া

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ তামাক একটি ক্ষতিকর পণ্য। তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ধূমপায়ী ও অধূপায়ী সকলের স্বাস্থ্য ক্ষতির ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জরুরী মুল্য বৃদ্ধি করা।

আর্ন্তর্জাতিক ও জাতীয় গবেষণা মতে যে কোন দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে অনেকাংশে চাহিদা হ্রাস পায়।তাই তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করলে একদিকে যেমন সকলের স্বাস্থ্য ক্ষতির ঝুঁকি হ্রাস পাবে অপর দিকে সরকার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পাবে যা বাজেটের ঘাটতি পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।

জনগণের মাথাপিছু আয়বৃদ্ধি এবং মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় না নেওয়ার ফলে নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতার কোনো পরিবর্তন হবেনা এবং একই সাথে নতুন তরুন প্রজন্মকে ধূমপানে নিরুৎসাহিত করা যাবেনা।

গত ১৩ জুন  জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধি না করার প্রেক্ষিতে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তামাক বিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ।

গত ১৪ জুন রবিবার, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টর কতৃর্ক আয়োজিত “তামাক কর জাতীয় বাজেট ২০২০-২১” শীর্ষক অনলাইন আলোচনা অনুষ্ঠানে এ প্রতিক্রিয়া জানান।

আলোচনায় সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিআইজিডি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাকজাত পণ্য বিশেষ করে সিগারেট এর মূল্য স্তর চারটি থেকে দুটি করা প্রয়োজন।তিনি আরো বলেন তামাক কোম্পানীর একটি বড় প্রভাব রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর উপর যা নিয়ন্ত্রণে সরকারকে সচেতন হতে হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউট,রোগ তত্ত ও গবেষণা বিভাগ প্রধান, অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধূরী বলেন, বর্তমানে যুবসমাজের জন্য অন্যতম আরেকটি ক্ষতিকর তামাক পণ্য হচ্ছে ই-সিগারেট। তামাকজাত উৎপাদকারী কোম্পানীগুলো সুকৌশলে ই-সিগারেটের বাজারজাত করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ই-সিগারেট উৎপাদন বা বাজারজাত করন বন্ধ করতে না পারলে সমাজে মাদকের ন্যায় ভয়াবহ আকার ধারন করবে যা যুবসমাজের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। যা পরবর্তিতে তামাকের ন্যায় নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের পক্ষে কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে।

ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়,অর্থনীতি বিভাগ, অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, সিগারেট এর মূল্য স্তর চারটি থেকে দুটি করার সহমত পোষণ করেন ও তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনিদিষ্ট কর আরোপ করা জরুরী। কারণ সুনিদিষ্ট কর আরোপ ব্যবস্থা প্রবর্তন করলে সরকারের রাজস্ব আয়ের হার বৃদ্ধি পাবে। তামাক কোম্পানীর কর ফাকিঁর যে কূটকৌশল অবলম্বন করে তা প্রতিহত করাও সম্ভব হবে।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর, পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, বর্তমান বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জন্য অর্থ বরাদ্ধ পর্যাপ্ত নয়। তিনি বলেন, করোনা কালিন সময়ে সরকার যদি তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনিদিষ্ট কর ব্যবস্থার প্রবর্তন করে তাহলে স্বাস্থ্য খাতের জন্য উল্লেখযোগ্যো অর্থের বরাদ্ধ রাখা সম্ভব হবে। কিন্তু সুযোগ থাকা সত্তে¡ও তামাকপণ্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রস্তাবিত বাজেটে কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধি পদক্ষেপ উপেক্ষা করা হয়েছে।এতেকরে সরকার প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাবে। ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক তামাক ব্যবহারকারীর জন্য ৪ কোটি ১০ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নজির বিহীন স্বাস্থ্য ঝুঁকির মুখে পড়বে।

ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রী কিডস (সিটিএফকে) বাংলাদেশ,কর্মসূচী কর্মকর্তা, আতাউর রহমান মাসুদ বলেন যে কর কাঠামো রয়েছে তাতে সবসময় কোম্পানীর আর্থিকভাবে বেশী লাভবান হচ্ছে। এক গবেষণা তথ্যে জানাযায় তামাক কোম্পানীর ২৩.৫ % লাভ থাকছেই। তাহলে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে কর কাঠামো সংস্কার করে কোম্পানী লাভের অংশ অবশ্যই সরকারকে কমাতে হবে।

উক্ত আলোচনায় তামাকের উপর কর বৃদ্ধি নিয়ে বিশদ আলোচনা হয় ও দর্শকদের প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন আলোচকবৃন্দ।

Print Friendly

Related Posts