প্রতিবন্ধী মূলত কারা?

জুঁই জেসমিন

আমরা যাদের  প্রতিবন্ধী হিসেবে চিহ্নিত করি সমাজে, সত্যিই কি তারা প্রতিবন্ধী? তার আগে প্রতিবন্ধী শব্দটির অর্থ বা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।

প্রতিবন্ধী শব্দের আভিধানিক অর্থ বাধা সৃষ্টিকারী। তবে জন্মগত বা দূর্ঘটনা জনিত কারণে  শারীরিক কোনো  দৃশ্যমান সমস্যা দেখা দিলে তাহলে কি সেই ব্যক্তিরা প্রতিবন্ধী? এই যেমন ধরুন কারো হাতে পায়ে ছয়টি করে আংগুল কিংবা পাঁচটির কম। কিংবা এক পা অন্য পা হতে ছোটো, এই অস্বাভাবিক দেখানোকে আমরা প্রতিবন্ধী হিসেবে ধরে নিই। এবার একটু ভাবুন বা লক্ষ্য করে দেখুন এই ধরণের মানুষরা সমাজে অক্ষম না সক্ষম-?  নিশ্চয় সক্ষম সাধারাণ দশজন মানুষ হতে গুণে কাজে অনেক এগিয়ে।

তবে তারা প্রতিবন্ধী বলে সমাজে পরিচিত কেন?  মানুষ শ্রেষ্ঠ জীব সে  যেভাবেই যেই আকৃতিতে পৃথিবীতে আসুক না কেন? তার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করার ক্ষমতা ১০০ভাগ নিশ্চিত আছে, যদি অটল ইচ্ছা থাকে তবেই। সমাজ ও পরিবারের অনিষ্টকারীরাই মূলত প্রতিবন্ধী।এমন একজন নারী যার শুধু একটি সমস্যা ছিলোনা একাধিক সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন প্রতিভা ও কর্ম গুণে। যিনি অন্ধ বোবা ও বধির ছিলেন। তাঁর জীবনী জানা আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন।  বলছি হেলেন কেলারের কথা, আর তাঁরই  জীবনী ব্যাখ্যা —

* যে নারীর কানে পৌছালোনা পৃথিবীর ডাক, পাখির কলতান, যে নারী দেখলোনা  প্রিয়জনের মুখ, দেখলোনা চন্দ্র সূর্য  নক্ষত্র আসমান জমিন- সে নারী  স্নাতকোত্তর  প্রজন্মের সূর্য অন্ধজনের প্রেরণা জ্যোতি রজনীর কপালে জ্বলজ্বলে প্রভাময় শুভ্র ফোটা। অন্ধ, বোবা, বধির হয়েও এনেছেন জীবনের জয়।

আমেরিকার টুসকুমবিয়া শহরে জন্ম -জন্মের সতেরো মাস যাঁর ছিল আলোর সাথে  শেষ আলিঙ্গন। কচি কোমল হাতে ছুঁয়েছিল
বারংবার মায়ের মায়াময় মুখখানি, ছুঁয়েছিল মিটিমিটি চাহনিতে পৃথিবী ও প্রকৃতি। বাবার কিনে দেওয়া খেলনা পুতুল, ছিল যাঁর ভাল লাগার খেলাঘর। যাঁর আধো আধো কথায় ভরে উঠতো ঘর উঠোন আনন্দ চঞ্চলতায়। হঠাৎ  বিপর্যয়, ভর দুপুর অমাবস্যার পত্র
গ্রাস করে আলোর সূর্য, নেমে আসে অশুভ নক্ষত্র। মায়ের কোল থেকে পড়ে অবচেতন অবুঝ বালিকা- ছোট্ট শরীরে জ্বর বাঁধে বাসা
কেড়ে নেয় দৃষ্টি,  মুখের বুলি,শ্রবণ শক্তি। সব চিকিৎসায় ব্যর্থতার অশুভ বার্তা- কোনো আশা নেই,আলো নেই! মা ক্যাথরিন বাবা আর্থার -নিরাশার ঘোল সমুদ্রে ঘুরে বিপাকে কী হবে মেয়ের?

শব্দহীন আলোহীন জীবনের  সব জানালা ও জগত অবুঝ বালিকার ব্যকুলতা দু চোখ জুড়ে মাকে দেখার- স্তব্ধতার কপাট খুলে নিজেকে জানার। সময়ের ঋতু চক্রে সতেজ অনুভূতিগুলো সহস্র প্রশ্নে চিবিয়ে খায় বালিকার মগজ। অন্ধকার!  অন্ধকার..গাঢ় থেকে গাঢ়তর অন্ধকার!  বালিকার আঁধার প্রান্তরে উদয় একুশ বছরের তরুণী- এনি সুলিভ্যান।

প্রস্ফুটিত হতে থাকে মেধা, ফিকে হতে থাকে জীবনের আঁধার। শেখা হয়  ব্রেল পদ্ধতিতে ভাষা গ্রীক,ফরাসি, ল্যাটিন, ইংরেজি-
কণ্ঠে আসে মিষ্টতা শৈশবের সুললিত ঢেউ বিপ্লবী চেতনা জীবনের শিরা উপশিরায় আসে জয়।মনের পৃথিবী ঘিরে সাহিত্য সংস্কৃতি  সভ্যতা, আংগুলের স্পর্শে স্পর্শে  সৃষ্টির বিশালতা।

এ সেই আলোকিত নারী হেলেন কেলার। ফিরে আসে যাঁর  মুখের বুলি, মাস একশত বত্রিশে। দেশে বিদেশে  সব অন্ধের তরে গড়ে তোলেন প্রায় পঞ্চাশ বিদ্যালয়। সতেজ শানিত বক্তৃতা ঝরেছে প্রেরণার উচ্ছাসে-ভ্রমনপথের যাঁর সাথী,  আলেকজান্ডার গ্রাহামবেল এনি সুলিভ্যান। যাঁর সৃষ্টি চির অক্ষয় চির অম্লান। মানুষের সেবা দানে নিজেকে করে বলীয়ান!  অনুভূতির পরশ প্রভায় অক্ষরে অক্ষরে  ভেসে ওঠে  জীবনের  দৃশ্য-

‘The Story of my life ‘
The World I Live in’
Let Us have faith
Teacher any sulivan
‘The Open Door

হেলেনের রচনা সমূহ। বিশ্ব যুদ্ধে বিশ্ব সেবিকা হেলেন কেলার। দেশে দেশে বক্তৃতার সুমধুর ঝড়। কবি গুরু আর গুণী মনীষীর সান্নিধ্যে সান্নিধ্যে দৃষ্টিহীন জীবনে  দুর্গম পথ চলা। কেটে যায় জীবনের অধ্যায়, বেলা অবেলা।

যাঁর জন্ম-২৭শে জুন ১৮৮০ মৃত্যু-১লা জুলাই ১৯৬৮। কবিতায় জীবনী।

এখন যদি বলা হয় প্রতিবন্ধী হেলেন কেলার। তাহলে এর অর্থ কী বুঝাচ্ছে, বাধা সৃষ্টিকারী হেলেন কেলার। সত্যিই কি তবে এমন গুণীজনেরা বাধা সৃষ্টিকারী নাকি সমাজ ও পরিবারের অনিষ্টকারীরাই মূলত প্রতিবন্ধী। যে বা যারা বাবা মাকে কষ্ট দেয়, সমাজে অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধা দেখা যায় শেষ বয়সেও কর্ম করে ধুকে ধুকে, ছেলে বউমা দিব্বি চলে মুখ ফিরিয়ে।  বাবা মায়ের প্রতি না আছে দায়িত্ব না চোখে মুখে দয়ামায়ার চিহ্ন, এই ধরণের সন্তানেরা তবে কি সত্যিকার অর্থে প্রতিবন্ধী নয়? আবার এমন কোনো সন্তান আছে সামান্য সমস্যা বা  নিজ আরাম ফুর্তির জন্য বাপের সম্পত্তি বিক্রি করে উল্লাস করে,  আপন জনের নিষেধ অমান্য করে একের পর এক অনিষ্ট করতেই থাকে। এইসব ব্যক্তিরা তবে কী? যারা সমাজের বাধা পরিবারের বাধা তারাই তো বাধা সৃষ্টিকারী।

আজ বিশ্ব ব্যাপি করোনা ভাইরাসে ত্রাণ নিয়েও নয়ছয়,  নেতা বা ক্ষমতাধারীরা গুম করছে গরীবের হক,  এই বিবেকহীন মানুষেরা সমাজের তবে কী? দিনের পর দিন মানুষের মূল্যবোধ জ্ঞান কত নীচে নামছে ভাবা যায় কী! আজ প্রতিবন্ধী ভাতা ও কোটা পেতে  সুস্থ স্বাভাবিক মানুষেরাও  প্রতিবন্ধী সেজে, নিচ্ছে ভাতা নিচ্ছে চাকরির কোটা।  যা আমার চোখের দেখা নয় শুধু, আপনাদের জানা বা দেখা।

কয়েক বছর পর এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা, জিজ্ঞেস করি চাকরীর খবর কি?  তিনি বলেন প্রাইমারিতে হয়ে গেছে, আমি বলি কেমনে কেমনে, জবাব দেন প্রতিবন্ধী কোটায়। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি আপনি প্রতিবন্ধী মানে? তিনি বলেন একটু অভিনয় করে প্রতিবন্ধীর কার্ড করে নিয়েছি, কন্ঠস্বর মোটা ভারী করে গলার সমস্যা দেখিয়ে তা করে নিয়েছি এ বলে হাসি।

আবার কিছু দিন পূর্বে দেখলাম,  এলাকার সুস্থ স্বাভাবিক মানুষকে পঙ্গুর অভিনয়ে প্রতিবন্ধীর কার্ড করে নিতে। যারা সত্যিকারে জন্মগত  বা দূর্ঘটনা জনিত কারণে অসহায়, নিজে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারেনা,  যেমন মানসিক প্রতিবন্ধী ও একেবারে পঙ্গু
এদের একমাত্র ভাতা দেওয়া আবশ্যক, কেননা এই ধরণের মানুষেরা এক পয়সা রোজগার করতে পারেনা রাস্তায় কারো সাহায্যে শুয়ে বা বসে সাহায্য করা ছাড়া।

(২)

যারা কর্ম করে খেতে পারে তারা যা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে, অসহায় পঙ্গু অক্ষম ব্যক্তিরাও সেই অংকের টাকা পাচ্ছে, এতে তাদের এই ভাতা টাকায় ওষুধ বা ভালোমন্দ থাকা  খাওয়া  হয়না। তাই সামান্যতম সমস্যা যা কোনো সমস্যায় না এমন কর্মজীবী মানুষকে এই ভাতা না দিয়ে একেবারে অক্ষম অসহায়দের দিলে তারা হয়তো বেশ ভালো থাকতে পারে।

এলাকার কোনো পঙ্গু বা অচল মানুষ প্রতিবন্ধী কার্ড করে  নিতে গেলে মেম্বার চেয়ারম্যান মোটা অংকের টাকা ছাড়া তাদের কার্ড করে দেয়না। শুধু প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে নয়, বয়স্ক ভাতা বিধবা ভাতার ক্ষেত্রেও চার হতে পাঁচ হাজার টাকা ছাড়া কার্ড হয়না।
যারা  দিচ্ছেনা অর্থ ছাড়া অসহায়দের উচিত পাওনা তারা কি সুস্থ স্বাভাবিক?

সমাজে বিশিষ্ট সমাজ সেবক হিসেবে যারা পরিচিত বা সমাজ সেবকের লেবাসে চলে ভুঁড়ি ভোজ করে এইসব ব্যক্তিরাই মূলত সত্যিকারে জগতের প্রতিবন্ধী।

চরম সত্যি বলতে জন্মগত যারা শারীরিক সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে আসে তাদের মেধা প্রচুর হয়ে থাকে, সাধারণ মানুষ থেকে অসম্ভব কিছু করে দেখায়,এ ধরণের মানুষেরা। আর সৃষ্টিকর্তা হয়তো সাধারণ মানুষকে বুঝানোর জন্যই কিছু মানুষকে ব্যতিক্রম রূপে পাঠান,  যার হাত নেই পা দিয়ে লেখে পা দিয়ে গাড়ি চালায় আরও অনেক কিছু করে।

যাদের হাত পা সবি আছে তাদের ভাবা উচিত ওই মানুষটিকে দেখে যা এক হাত দিয়েই অসম্ভবকে সম্ভব করে বা পা দিয়েই কঠিন কঠিন কাজ সমাধান করে। যারা জন্মগত ভাবে দুনিয়ায় ব্যতিক্রম ভাবে আসে তাদের প্রতিবন্ধী না বলে রত্নময় বা রত্নম্নণি নামে পরিচয় করা উত্তম।  কেননা এসব ব্যক্তির মাঝে অসীম গুণ প্রতিভা নিহিত আছে, শুধু মাত্র একটু ভালোবাসা ও যত্ন করলে এরা তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে পারে।

লজ্জার বিষয় হলো এই, যাদের মাঝে গুণে ভরা তাদের বাহ্যিক হাত পা অস্বাভাবিক দেখে অসহায় ভেবে করুণার দৃষ্টিতে দেখা হয় অথচ এরা যা গাইতে পারে, আঁকতে পারে, আবিস্কার করতে পারে,বেশিরভাগ সুস্থ স্বাভাবিক যারা তারা ধারের কাছেও যেতে পারেনা। যারা সমাজের অনিষ্টকারী,  পরিবারের বাধা সৃষ্টিকারী তাদেরই নাম ডাক গুণগান বেশি।  আর যারা সমাজে এতো গুণের অধিকারী এতো অর্জন এতো সফলতা, তাদেরকে বলা হয় প্রতিবন্ধী।  যেমন প্রতিবন্ধী টিচার প্রতিবন্ধী ডিসি, প্রতিবন্ধী লেখক,  প্রতিবন্ধী গায়ক, তবে কি যোগ্যতার কোনো দাম নেই? সামান্য হাত পায়ের আংশিক সমস্যার কারণে প্রতিবন্ধী বলে বলে  চিৎকার করতে হবে সমাজে?

যেখানে সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাসে নীরব, আতংকিত সেখানে বাংলাদেশে মার্চ মাস থেকে  এ অবধি ২০৬ টির অধিক নারী / শিশুর ধর্ষণ মামলা।  যারা এমন জঘন্য কাজ করে, করে যাচ্ছে তারা সমাজের  অনিষ্টকারী বাধা সৃষ্টিকারী নয় কী ?  আর এই বাধা সৃষ্টিকারীর অর্থই হলো প্রতিবন্ধী।

শহর উপশহর গ্রাম গঞ্জে প্রতিষ্ঠা হয়েছে অনেক স্কুল আর নামকরণে আছে উদাহরণ স্বরুপ যেমন ; ২নং প্রতিবন্ধী  চাড়োল মডেল স্কুল। এমন অনেক জায়গার নামের সাথে প্রতিবন্ধী স্কুলের নাম- তাহলে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে স্কুলের নাম কি দ্বারাচ্ছে?  বাধা সৃষ্টিকারী বা বাধা সৃষ্টিকারীদের স্কুল। যার পরিপূর্ণ ভাবার্থ দাঁড়ায়  বিদ্যালয়ে শুধু বাধা বিপত্তি শেখানো হয়। অন্ধ খোড়া বোবাদের জন্য যদি এই বিদ্যালয় তবে সুন্দর এক নামকরণে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হলে মন্দ হবে কোথায় ? মোটেও মন্দ নয় কারণ তাদের প্রতি একটু খেয়াল একটু যত্ন দিলে অনেক ভাল কিছু উপহার দিতে পারে স্বাভাবিক মানুষ থেকে। এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী শব্দ বা নামের পরিবর্তে রত্নমণিদের স্কুল বা রত্ন প্রভাদের স্কুল করলে তাদের মনে কষ্টের আচড় লাগবেনা। বরং এতে তারা প্রচুর উৎসাহে লেখাপড়া করতে পারে স্কুলের নাম সুন্দর হলে।

অবহেলা, করুণা, আর অসহায়, এমন দৃষ্টিতে আজ শত সহস্র গুণীজন হারাতে হচ্ছে, প্রস্ফুটিত হচ্ছেনা মেধা, সমাজে একরকম আড়াল করে রেখে।   আয়েসা শিদ্দিকা আর মুজাহিতের মতো অসংখ্য প্রতিভাঠাসা কিশোর কিশোরীর প্রতিভা ঝরে ঝাচ্ছে বেদনার অশ্রু জলোচ্ছ্বাসে। শুধু মাত্র অন্ধ বা হাত পা বিকলঙ্গতার কারণে।

আমার চেনা ও দেখা রাজধানীর রোমানার কথা বলি, কোটিপতির মেয়ে হয়েও অন্ধ হওয়ার কারণে যথাযথ আদর সোহাগ ও পড়ালেখার সুযোগ পাননি। কণ্ঠে তার মিষ্টতার ঢেউ,  হাতে শিল্পের যাদু । মামার সহযোগিতায় নজরুল সঙ্গীতে মাস্টার্স
ও নামীদামী কলেজের শিক্ষিকা, সব চেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো বাবা মায়েরা এখন তার পরিচয়ে পরিচিত। যেখানে বাড়িতে দু দুটো গাড়ি থাকতে রিক্সায় করে কলেজে যেতে হয়েছে মিস রোমানাকে। বাকি দু ভাই বোন সুস্থ স্বাভাবিক হওয়া সত্তেও জীবনে কিছু অর্জন করতে পারেনি, যা রোমানা অর্জন করেছে দু চোখের জ্যোতি না থাকা সত্তেও মনের আলোয়।

আমরা গুগল বা ইউটিউবে চোখ রাখলে আশ্চর্য আশ্চর্য কিছু মানুষ দেখতে পাই, দুটো হাত নেই এমন ছেলে বা মেয়েকে অথচ সব কাজ কী সহজ ভাবেই করে,  ব্রাস করা, খাওয়া দাওয়া করা, কাপড় পরা, বাইক চালানো অফিস যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি।
যেখানে নিজের কাজকর্মে নিজের কাছে বাধা বলে মনে হয়না সেখানে অন্যরা কোন চোখে বাধা দেখে আর কোন মুখে প্রতিবন্ধী বলে ?

যাদের ঘরে এমন সন্তান হয়েছে যেমন হাত ছোটো বা পা ছোটো বা অন্ধ কিংবা বোবা,  বুকে হাত দিয়ে বলুনতো সুস্থ স্বাভাবিক সন্তানটিকে যেভাবে আদর সোহাগ করে তেমনটি কি সেই সন্তানকে করে ?  নিশ্চয় করেনা। না ভালো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়, না ভালো কিছু খাওয়ান পরান হয়, একমাত্র মায়ের আচল ঘিরেই বড় হতে থাকে এই ধরণের শিশুরা। আর বেশিরভাগই মায়েদের জগত রান্নাঘর আঙিনা ও খুব জোর বাপের বাড়ি আর নিজ গ্রাম। মায়েদের পক্ষে সম্ভব হয়না নিজের মতো করে সন্তান মানুষ করা, পরিচর্চা করা।

আবার কিছু কিছু মা আছে যা চাকুরী নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।  সকাল হতে রাত অবধি বাড়ির কাজ আর অফিসের কাজ।  এতে সুস্থ শিশুরাও দিন দিন মানসিক ভাবে আক্রান্ত হতে থাকে। স্বাস্থ্য, বুদ্ধি দুটোই লোপ পেতে থাকে।

হেলেন কেলারের মতো উৎকৃষ্ট উদাহরণ আর নেই যা অদ্বিতীয় কারো জীবনী আলোচনা করা যেতে পারে। হেলেন কেলার অন্ধ বোবা বধির হয়েও এনেছেন জীবনের জয়, করেছেন লড়াই, বিশ্বযুদ্ধে ছিলেন সদা ব্যস্ত অন্ধদের সেবায়। পঞ্চাশটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন তার মতো রত্নময়ীদের জন্য।

(৩)

কাসিনো ব্যবসায়ী  সম্রাট, জি কে শামীম, পাপিয়া নুর, ঘুষখোর ডি আই জি মিজানের মতো ব্যক্তিরা দেশের বড় অনিষ্ট কারী,বাধা সৃষ্টিকারী,  বড় প্রতিবন্ধীর দল। এরা দেশ সেবার নামে দেশ ও দেশের মানুষকে করে বিকলাঙ্গ,  টাকার পাহাড় গড়ে, করে  ফুর্তি উল্লাসের তরঙ্গ।

*
অন্যদিকে অসহায় শ্রেণির কী অনিশ্চিত অনিরাপদ ভয়ংকর জীবনযাপন- ঘর হতে  বেরুলেই গাড়িতে রাস্তাঘাটে ট্রেন লাইনে -স্কুল গেটে, হাসপাতাল গেটে অন্ধ, পঙ্গু ভিক্ষুকদের ভিড়,, কী  করুণ অবস্থা! রোদ বৃষ্টিতে জ্বলেপুড়ে কয়লারি হয়,  পেটের তাগিদে সারা জীবনে রোজ এক ছড়া পাঠ করতে হয় এক সুরে  -” বাবা গো মাগো দুটো টাকা দেন গো, বাবাগো মাগো দুটো পয়সা দেনগো”।

সরকার এদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে খাদ্য বস্ত্র চিকিৎসা সব কিছুর ব্যবস্থা বন্দোবস্ত করেছেন, প্রতিটি শহর গ্রাম থেকে প্রশাসনিক ভাবে এদের সাহায্য  সহযোগিতা করে যথা স্থানে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়না কি?  কিংবা যদি তাদের মোটা অংকের ভাতা দেওয়া হয়  তাহলে এতো কষ্ট করে সাহায্য চায়তে হতোনা জনপথে। যেমন বেড়ে চলছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা, ভুয়া সমাজসেবক তেমন বেড়ে চলছে ভুয়া প্রতিবন্ধী, ভাতা ও বিশেষ কোটা পাওয়ার লোভে। তাই আবারো বলছি যারা খেটে খেতে পারে, কোনো প্রকার শারীরিক সমস্যা ছাড়া সামান্য হাত পা ব্যতিক্রমের জন্য, কোনো প্রয়োজন নেই প্রতিবন্ধী নামে কার্ড বা কোটা নেওয়ার। সত্যিকার অর্থে যারা অসহায় তাদের জন্য এ ভাতা এ কোটা বরাদ্দ হোক, সম্পুর্ণ রূপে এসব তাদের হক। মানুষ যেমন শ্রেষ্ঠ জীব শ্রেষ্ঠত্বের অধিকার অর্জন করে নিতে হবে নিজ কর্ম গুণে।

লোভ হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে মিষ্টি যা চরম নীচে নামিয়ে দেয়,সমাজে সম্মানের উদ্দানে মূল্যবোধের নিক্তিতে বসার যোগ্যতা বা মান রাখেনা। তাই বিবেককে জাগিয়ে রেখে মনুষ্যের জয় করা মানুষের শুরু থেকে  শেষ ধর্ম হোক । সদা মঙ্গল প্রদীপ জ্বলুক সত্য ও ন্যায়ে সকল দেশ ও সমাজে  বিজয়ে বিজয়ে সবার অন্তর প্রান্তরে।

জুঁই জেসমিন: লেখক ও মানবাধিকার কর্মী
jui.jesmin2019@gmail.com

Print Friendly

Related Posts