বাংলা একাডেমির নতুন সভাপতি শামসুজ্জামান খান 

রিপন শান: বাংলা একাডেমির সভাপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন  আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোকলোরবিদ, সাহিত্যিক ও গবেষক শামসুজ্জামান খান।
রোববার (২৮ জুন) সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে। এদিন দুপুরে বাংলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিন বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করবেন শামসুজ্জামান খান। সভাপতির দায়িত্ব এবং অন্যান্য কার্যাবলি ‘বাংলা একাডেমি আইন-২০১৩’ অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হবে।
শামসুজ্জামান খান গণমাধ্যমকে জানান, সভাপতি হিসেবে নিয়োগের বিষয়টি ফোনে জেনেছি। চিঠির কপি আমার কাছে পাঠানো হয়েছে।
২০১২ সাল থেকে বাংলা একাডেমির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন অতিসম্প্রতি করোনায় প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। সবশেষ ২৯ জানুয়ারি ২০২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সদ্য প্রয়াত আনিসুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে শামসুজ্জামান খানকে।
এর আগে ১০ বছর শামসুজ্জামান খান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
শামসুজ্জামান খান জানান, ‘আমি বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক থাকাকালীন আনিসুজ্জামান স্যারের সঙ্গে ৯ বছর কাজ করার সুযোগ হয়েছে। আজ গভীর শ্রদ্ধাভরে তাঁকে  স্মরণ করছি। ’ সভাপতি হিসেবে বাংলা একাডেমির কর্মকাণ্ডকে এগিয়ে নিতে সব রকম সহযোগিতা করার কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সভাপতি হিসেবে চেষ্টা করবো আমাদের সকলের প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির কর্মকাণ্ড যেন আরো সৃজনমুখর হয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ’
 শামসুজ্জামান খানের জন্ম মানিকগঞ্জ জেলায় ১৯৪০ সালে। তিনি রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পুরস্কার স্বাধীনতা পদক এবং একুশে পদক পেয়েছেন। ১৯৯৭ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে তিন বছরের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি নির্বাচিত হন।
দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জার্নালে শামসুজ্জামান খানের ১৯টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণা পথিকৃৎধর্মী; যেমন: বঙ্গবন্ধু, মীর মশাররফ হোসেন, মওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী, বাংলা সন ও পঞ্জিকা, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এবং ফোকলোর চর্চার আধুনিকতা ইত্যাদি। গবেষণার পাশাপাশি প্রবন্ধ, রম্যরচনা, ভ্রমণকাহিনি, ক্রীড়া, জীবনী, শিশুতোষ রচনা এবং সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর বিচরণ রয়েছে। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭৮টি।

শামসুজ্জামান খান আপনকর্ম ও জ্ঞান-সাধনার মাধ্যমে ঋদ্ধ করেছেন উদার ও অসাম্প্রদায়িক বাঙালি চেতনা। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও ইতিহাস মনস্কতা এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা ও বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার সম্মিলন তাঁর চিন্তাদর্শন ও কর্মসাধনায় অনন্যরূপ পেয়েছে। তাঁর কর্মের মূল্যায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘ফোকলোর ইন কনটেক্সট : এসেজ ইন অনার অব শামসুজ্জামান খান’ এবং ‘শামসুজ্জামান খান ৭৫ পূর্তি সংবর্ধনা গ্রন্থ’ প্রকাশিত হয়েছে। বই দুটিতে দেশ-বিদেশের অনেক খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সমাজবিশ্লেষক ও ফোকলোরবিদ লিখেছেন।

Print Friendly

Related Posts