আমির হোসেন আমু ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্রে

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমুকে ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সদ্যপ্রয়াত আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

বুধবার এক ভিডিও বার্তায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৪ দলের শরিক দলসমূহের নেতাদের সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমির হোসেন আমুকে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের দায়িত্ব দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আমির হোসেন আমু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও প্রজ্ঞা দিয়ে ১৪ দলের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনে যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন বলে নেত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

আলহাজ আমির হোসেন আমু ১৯৪০ সালের ১লা জানুয়ারি তদানীন্তন বরিশাল জেলার ঝালকাঠী মহকুমায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং মাতা আকলিমা খাতুন। আমির হোসেন আমু ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে কারাবরণ করেন।

তিনি ১৯৫৯ সালে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ভাষা দিবস উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক মনোনীত হন। তিনি ১৯৬৫ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ এবং ১৯৬৮ সালে বরিশাল আইন মহাবিদ্যালয় থেকে এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২ সালের সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক হন।

আমির হোসেন আমু ১৯৬৫ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬২ সালে গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ১৯৬৩ এর হামুদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৬৪ এর কনভেনশন আন্দোলনের আহবায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৫৮ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সদস্য, ১৯৬৫ তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক, ১৯৬৭তে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৫৯-৬২ বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৬৪ সালে মিস ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনে বৃহত্তর বরিশাল জেলার সর্বদলীয় নির্বাচন প্রচার কমিটির আহবায়ক ছিলেন। তিনি ১৯৬৩ হতে ১৯৬৪ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের অন্যতম রূপকার হিসেবে প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন।

আমির হোসেন আমু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে আইন পেশার পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হন। তিনি ১৯৭০ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বরিশাল সদর আসন থেকে জয় লাভ করেন। ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে তিনি বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী, যশোর ও ফরিদপুরসহ পঁাচ জেলায় মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ সালে তিনি যুবলীগের প্রেসিডিয়াম প্রতিষ্ঠাতা সিনিয়র সদস্য হিসাবে মনোনীত হন। তিনি ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠী ও রাজাপুর নির্বাচনী এলাকা থেকে সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে ঝালকাঠী আওয়ামী লীগের সভাপতি হন এবং ১৯৭৫ সালে ঝালকাঠীর গভর্নর হিসাবে নমিনেশন পান। ১৯৭৫-১৯৭৮ নিরাপত্তা আইনে তিনি তিনবছর কারাবরণ করেন। সেসময় সরকার কোন মামলা দিতে পারেনি; হাইকোর্টে রিট করার পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান।

তিনি ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং একই সাথে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৮০ সালে তিনি বরিশাল ও ঝালকাঠী জিলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮১ হতে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্মসম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তৎকালীন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৬ সালে স্বৈরাচারী আন্দোলনে তিনি কারাবরণ করেছিলেন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমির হোসেন আমু সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময়ে তিনি বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি পুনরায় জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি নবম জাতীয় সংসদে ধর্ম মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন।

আমির হোসেন আমু ২৮ আগস্ট ২০১৩ দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ৫৯তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে ১০ দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ডেলিগেট হিসাবে যোগ দেন। গত ২১ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে তিনি ভূমি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ১২ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।

Print Friendly

Related Posts