অপরাধীর মুক্তির বড় ফাঁক জরিমানা

জুঁই জেসমিন

 

দিনদিন অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে, না কমছে? বাড়ছে নিশ্চয় – কেন বাড়ছে? আইন থানা পুলিশ বিচার সালিশ, এসব কী আগের যুগের মতো ভয় ভীতির কাজ করে? করেনা। তা না হলে কেন অপরাধী অপরাধ করার আগে বারবার বলে “শালার যা হবে হবে তোকে খতম করতে,, দু’চার বিঘা জমি যাবে যাবে, যাবে যাক লাখ পাঁচেক টাকা। তাও তোকে দেখে ছাড়বো।” বাড়তে থাকে জুলুম অত্যাচার শেষমেশ খুন খারাপি।

১৩ হতে ১৯ বছর বয়সের মধ্যে জীবনে কোনো প্রকার অশান্তি বা বিরহ যাতনা দেখা দিলে অনেকেই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত বেছে নেয়। আবার ৫০ এর উর্ধ্বে অনেক বয়স্ক মানুষ পরিবারের ছলনা যাতনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথে যান।

সাম্প্রতিক কিছু ঘটে যাওয়ার ঘটনা টানছি, আর ঘটনা থেকেই স্পষ্ট বুঝা যেতে পারে বর্তমানের জেল বা জরিমানা কতটা জনসাধারণের কাছে অভয় যা সমাজের অকল্যাণকর। গলায় ফাঁস আর বিষপান আত্মহত্যার মূল দুটি অস্ত্র। আর এই অস্ত্র শক্তির জোরে ঝরে যাচ্ছে হাজার হাজার প্রাণ। আবার আত্মহত্যার শিরোনামকে সামনে রেখে, আড়ালে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনাও পিকপাক করতে থাকে। যেমন কাউকে মেরে তারপর গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় যাতে সমাজের কাছে প্রমাণ করা যায় আত্মহত্যা করেছে, কিংবা কাউকে বিষ খাইয়ে অপরাধী বা খুনি অনেক পথ বেছে রাখেন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণে।

এক শিক্ষিত পরিবারের ঘটনা দিয়েই শুরু করি, সমাজে ব্যক্তি স্বার্থের দৌড় আসলে কত দূর – শেষ বয়সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন এক বৃদ্ধা। তার দুই ছেলে বড় অফিসার, বড় ছেলে কাস্টমস অফিসার। এখন নিশ্চয়ই আপনাদের প্রশ্ন শিক্ষিত ভদ্র পরিবারে এমন ঘটনা কেন? জ্বী আমারও ওই একই প্রশ্ন- আর সেই সাথে ঘুরপাক ভাবনা এ যুগে বয়স্ক বাবা মায়েরা কি পরিবারের বোঝা? যা ঘরে ঘরে দেখছি এক প্রকার যেন সত্যিই কঠিন বোঝা। দিদার ভাতিজি খেতেন কতটুকু বা চাওয়া পাওয়ার আবদারই বা কত বিশাল ছিলো, যার কারণে আত্মহত্যার মতো জঘন্য পথ বেছে নিলেন? ৯০/১০০ কেজি ওজনের এতো বড় ভারী মানুষটাকে খড়ি ঘরে ওভাবে ফাঁসে ঝুলতে দেখে আমি নির্বাক হয়ে যাই।

কতটা কষ্ট হলে এতোটা মুখের জিভ বেরিয়ে আসতে পারে? মৃত্যুর ধরণ আসলে কত প্রকার আর কতটা ভয়ংকর! ছেলেদের অবহেলা আর বউদের অস্বাভাবিক আচরণে বেচারা গলায় দড়ি দেন। অথচ থানা পুলিশের কাছে জবাবদিহিতা হলো পেটের ব্যথা সহ্য করতে না পেরে গলায় দড়ি দিয়েছেন বয়স্কা। অপরাধী কত সহজেই বেঁচে গেল, খই মুড়ির মতো কিছু টাকা ছিটিয়ে।

১৫ বছরের এক কিশোরীর কথা বলি, অষ্টম শ্রেণী পাস করতে না করতেই বিয়ে দেয় তার বাবা মা। বিয়ের নতুন নতুন বেশ ভালোই ছিলো শাশুড়ি স্বামীর কাছে। তারপর শুরু হয় কাজের অমানবিক চাপ, সাত সকালে উঠে রান্নাবান্না সেরে গরু ছাগলের জন্য ঘাস কেটে নিয়ে আসা রোজ। ভর দুপুরে এভাবে মাঠে রোদ বৃষ্টিতে জ্বলেপুড়ে এসে শাশুড়ির হুকুম ছাড়া দু দানা মুখেও দিতে পারতো না। পেটে আসে বাচ্চা সেই অবস্থাতেও মাঠে ঘাস কাটতে হয়েছে তাকে। একসময় শাশুড়ি ও স্বামীর অত্যাচার সহ্য না করতে না পেরে দু মাসের দুধের শিশুকে রেখে মারা যায় গলায় দড়ি দিয়ে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বেচারা গলায় ফাঁস দেওয়া মুহূর্তে তার স্বামী দেখে ফেলে, তড়িঘড়ি করে বউকে নামিয়ে ডাক্তারের কাছে না নিয়ে গিয়ে হাউমাউ করে প্রতিবেশীদের ডেকে জানায়, তার বউকে নাকি ভুত ধরেছে।গ্রাম্য ওঝা এসে ঝাড় ফুক করতে থাকে। ধীরে ধীরে মেয়েটি নিস্তেজ হতে থাকলে কে জানি বলে উঠে তার গলায় তো দড়ির দাগ সে নিশ্চয়ই ফাঁস লাগিয়ে ছিলো, তাকে তো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। লোকজন আসল ব্যাপারটা জানতে পারলে শেষমেশ হাসপাতালে নিয়ে যায় আর ডাক্তার হাত দিতে না দিতেই বেচারা মেয়েটি মারা যায়।

এখন প্রশ্ন মেয়েটিকে কি সংগে সংগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেতনা? কেন ভুত ধরেছে এসব বলে নাটক করে দীর্ঘ দেড় দু’ঘন্টা সময় নষ্ট করলো? মেয়েটিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে এলে নিশ্চয়ই বাঁচতো যা প্রতিবেশীদের মুখে শুনেছি আমি। পোস্টমর্টেম করা থেকে শুরু করে সব শেষে মেয়ের বাপকে দু লাখ টাকা জরিমানা দেওয়া হয়। সব মিলে সাড়ে তিনলাখ টাকা এদিক-ওদিক ছিটিয়ে অপরাধীরা সাজা থেকে মুক্তি পেয়ে যায়। এই জরিমানা দিন দিন মানুষকে অপরাধী করে তুলছে ব্যাপক সাহসে। অপরাধী বা খুনির হবে যথাযথ সাজা জরিমানা নয়। এমন এক দৃষ্টান্তমূলক সাজা প্রয়োজন এই ধরণের অপরাধীদের যাতে সব মানুষ অপরাধ করার আগে ভাবে, কী হতে পারে অপরাধ করলে?

তবে সমাজে যাতে আর দিনের পর দিন আত্মহত্যা নামে জঘন্যতম ঘটনা না ঘটে সেই ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা প্রত্যেক জেলা উপজেলা মহল্লায় নেওয়া প্রয়োজন। যেমন- যে বা যারা বিয়ে করে তাদের নাম ঠিকানা থানায় বা মানবাধিকার সংস্থায় দিয়ে আসতে হবে। বিয়ের পনের দিন বা এক মাস সময়ের মধ্যে একদল মানবাধিকার কর্মী যাবে সেই পরিবারে। পরিবারের সবাইকে তথা বউ বর শ্বশুর শাশুড়ি প্রত্যেককেই এক সাথে নিয়ে বসবে। কার প্রতি কেমন দায়িত্ব, কর্তব্য আচরণ এসব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে, যাতে কেউ কারো উপর নির্যাতন করতে না পারে। যদি কেউ নিয়ম নীতি ভঙ্গ করে সে জন্য অভিযোগ করার ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেওয়া হবে। বউয়ের উপর মারপিট, বাবা মায়ের প্রতি অবহেলা এসব কোনোটাই যাতে কোনো পরিবারে না হয়। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো কেউই যাতে আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয়। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আশেপাশের এলাকাগুলোতে এসব আলোচনা করছি করে যাচ্ছি আর প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা পেলে হয়তো এ উদ্যোগ সফলে অনেকটাই স্বার্থক হবো। আসলে আমরা কেউই চাইনা সমাজে এমন ভয়ংকর জঘন্য ঘটনা ঘটুক, কেউ আত্মহত্যার পথ বেছে নিক, দিনের পর দিন অসংখ্য প্রাণ ঝরে যাক, সত্যিই কেউই চাইনা। যেহেতু চাইনা কেউ তবে ঘটবে কেন এমন ঘটনা? সবাইকে প্রতিবাদী হতে হবে। সত্য উচ্চারণে যদি প্রত্যেকেই এগিয়ে আসি তাহলে সমাজে কোনো অপরাধী পার হতে পারবেনা মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে। আর নতুন করে কেউ অপরাধী হয়ে জন্মাতেও পারবেনা। ইচ্ছে করলেই আমরা নিজ নিজ অবস্থান হতে প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারি।

প্রতিটি পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন মানুষের মধ্যে প্রতিবাদের সুর থাকলে একজোট হওয়া সম্ভব, সম্ভব মিছিলে মিছিলে দাবির স্লোগানে ঝড় তোলা। তবেই এক শৃঙ্খল সমাজ পেতে পারি। এখন অনেকের ভাবনা আমি নিজ উদ্যোগে একক ভাবে আত্মহত্যা প্রতিরোধে জনসাধারণের কাছে কিভাবে নিজেকে উপস্থাপন করি? যে-কোনো কাজ প্রথমত পরিবার থেকে শুরু হলে কাজটা সহজ সাধ্য হয়।

২০১১ সাল হতে We Can তথা আমরাই পারি ” এ সংগঠনে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি, পারিবারিক নির্যাতন প্রতিরোধ জোট, বাল্য বিবাহ, শিশু শ্রম, নারী শিশু ধর্ষণ এসবের প্রতিকার নিয়ে আমরা মূলত কাজ করি। বিভিন্ন সেমিনার থেকেই নিজের মধ্যে সাহস জুটে নিজ উদ্যোগে কিছু কাজ করার।

বলছিলাম পরিবার থেকেই কার্যক্রম শুরু ব্যাপারে- আমরা জানি সব পরিবারে কোনো না কোনো কারণে দ্বন্দ্ব বিবাদ লেগে থাকে, যা পারিবারিক নির্যাতনের মধ্যে পড়ে। শাশুড়ি কিংবা বউ এদের মধ্যে যে কেউ একজন বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ, পুরুষদের মধ্যেও কোনো ব্যতিক্রম নয়। এখনকার সমাজে বেশিরভাগ সংখ্যক পুরুষ আত্মহত্যা করে। আমার বোনের বিয়ের সময় কিছু টাকা দেওয়ার ওয়াদাবদ্ধ করে আমার পরিবার। আজ কাল আজ কাল করে কোনো টাকা কড়িই দেননি। আমার বোন দুই মাস ধরে আমাদের বাড়িতে এসে থাকে। খাওয়াদাওয়াও ঠিকঠাক করেনি চিন্তায়। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেন আত্মহত্যা করার। আমি টানা তিনরাত ঘুমাইনি। বোনের জামার কোণ আমার জামার সাথে গিট দিয়ে রাখতাম, ভুলে ঘুমিয়ে পড়লে সে কু মতলবে উঠতে গেলে যাতে আমি টের পাই। দিনের বেলা তাকে এটাসেটা বলে নানা ভাবে স্বান্তনা দিতাম। যাহোক সে আর আত্মহত্যা নামে জঘন্য কাজটি করেনি। মাস দু’য়েক আগের কথা, আমার ভাইয়ের বউ পারিবারিক ঝগড়াঝাটি ব্যাপারে সেও ভুল সিদ্ধান্তে মেতে ওঠে নিজেকে শেষ করার। দু দুটো রাত চোখের পাতা এক করিনি। সে আমাকে পাহারা করেছে আমি কখন ঘুমাবো সেই সুযোগে সে গলায় দড়ি দেবে, আঙ্গিনায় গাছের নীচে বসে থাকে, আমিও তার সাথে বসে থাকি। তাকে বলি এতো সুন্দর পৃথিবীটা কার জন্য? নিশ্চয় আমাদের জন্য, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য নয়। জীবনের পুটলি বেঁধে দু চোখ যেদিক যাবে সেদিক যাবো। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিশ্চয় করবেন। তিনদিনের মাথায় তাকে শহুরে পাঠিয়ে দিই এক আত্মীয়ের বাসায়। পরিবারে সব কিছু স্বাভাবিক হলে, স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি মীমাংসা হলে মাস তিনেক পর আবার পরিবারে ফিরে আসে সে।

২০১৭ সাল থেকে স্কুলে স্কুলে গুণীজনের গল্প ধারায় স্বপ্ন বুননের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের মাঝে আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা করি, যাতে শত বাধা বিপত্তিতেও ভুলেও আত্মহত্যার পথ বেছে না নেয় কেউ। আত্মহত্যা করা কতটা ভয়াবহ পরিণাম এ ব্যাপারে অনেক কাহিনী টেনে ব্যাখ্যা দিই তাদের মাঝে। আসলে ঘটনার পিছনে থাকে ঘটনা, আর ঘটনা ছাড়া হয়না ইতিহাস হয়না বাস্তবতা। ধরুন কোনো এক ব্যক্তির ঘরে সুন্দরী বউ ও ছেলে মেয়ে আছে। ছেলে মেয়ে দুজনের পড়াশোনা মাধ্যমিকে। এখন এই ব্যক্তি পিতার জমিজমা থাকা সত্তেও অর্থ সম্পদ থাকা সত্তেও চুরি ডাকাতি করে, শুধু তাই নয় অন্যের বউয়ের সাথে দৈহিক মেলামেশা তথা জড়ালো লেনদেনের সম্পর্ক গড়ে উঠে। এক্ষেত্রে পিতার এমন কর্মকাণ্ডে মেয়েটি পাড়াপড়শি ও স্কুলে মুখ দেখাতে পারেনা। হ্যাঁ এমনই এক ঘটনা আমার দেখা এক পরিবারে।

লোকটি, স্ত্রী ও কন্যাকে প্রচন্ড মারধরও করতো, আর আশেপাশের কারো বাড়িতে যেতেও দিতোনা। মেয়ে, পিতার এমন অমানবিক কার্জকলাপ দেখে ঘর থেকে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কোথায় যাবে চেনেনা শহর ও শহরের মানুষকে। নিজেকে আশ্রয়ের জন্য প্রয়োজন নিরাপদ ঠিকানা বা যোগাযোগ। তার জমানো টাকা সেলোয়ারে গুজে যোগাযোগের মাধ্যম খুঁজে পাড়ার অনেকের কাছে, কিন্তু তার দুষ্ট পিতার ভয়ংকর আচরণের কথা ভেবে, মেয়েটিকে কেউ কথা বলার সুযোগ সময় দেয়নি। শেষমেশ মেয়েটি ভর দুপুর নিজ ঘরে গলায় দড়ি দিয়ে শেষ ঠিকানা খুঁজে নেয়। মেয়েটিতো বাঁচতে চেয়েছিলো, তবে কেন এমনটি ঘটলো এর জন্য দায়ী কে বা কারা? শুধু কি পিতা দায়ী নাকি এ যুগের সমাজ? এমন অহরহ ঘটনা ঘটে আর অপরাধীরা জরিমানার নামে টাকা ছড়িয়ে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে উড়তে থাকে অভয়ে। বাড়তে থাকে অপরাধ ঘটতে থাকে ঘটনা।

বছর দুয়েক আগে আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রামে এক ঘটনা ঘটে, মানিক নামে এক ছেলে বউকে প্রচণ্ড মারপিট করে। গভীর সম্পর্ক করে নাকি তারা দুজন বিয়েও করেছিলো। কিন্তু বিয়ের পর আদর ভালোবাসার নামে চলে অমানবিক নির্যাতন। মানিক ব্যস্ত থাকতো ফেসবুক প্রেমে ম্যাসেঞ্জারে নিয়ে আর মাঝে মাঝে রাতভর কার্ড খেলা। ভোর বেলা গৃহে ফিরে চলতো স্বামী স্ত্রীর মিলন নামে স্ত্রী ধর্ষণ। একদিন সে তার বউয়ের পেটে ও বুকে সমস্ত শক্তি দিয়ে লাত্থি মারে মাটিতে ফেলে রাখে। কোলে দেড় বছরের শিশু সবুজ। বেচারা অসহনীয় ব্যথায় কখন যে দেহ থেকে প্রাণ রাতের শিরোনামে লাশে পরিণত হয় যা ইতিহাস ঝলসানো এক অদ্বিতীয় স্বাক্ষর। শিশু কেঁদে কেঁদে মৃত মায়ের করে দুধ পান। আর মানিক টলে টলে ঘরে ফিরে করে লাশ ধর্ষণ। যা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আসা সত্তেও সমস্ত অপরাধ ধামাচাপা হয় টাকার অংকে। দৃষ্টান্তমূলক সাজার পরিবর্তে মানিক পেয়ে যায় মুক্তি জরিমানার সূত্রে। যে সমাজে শাস্তি নেই উপযুক্ত বিচার সাজা নেই, সে সমাজে অপরাধী খুনিদের জন্ম হবেনাতো কী হবে?

প্রতিটি গ্রাম শহর হতে কতশত ঘটনা ঘটে এ অবধি উপযুক্ত বিচার সাজা ক’জনের হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে যা মুক্তির বড় ফাঁক জরিমানা। জরিমানা শব্দটা সব বিচার ব্যবস্থায় মানায়না। যে অন্যায়ে একজনের প্রাণ চলে যায়, যে কাজ বা অপরাধে একটি জীবন ধ্বংস হয়ে যায় ? সেখানে অন্যায়কারী জরিমানা দিয়ে পার হবে কেন? কোনো বস্তুগত জিনিস বা আহতর ক্ষেত্রে জরিমানা নেওয়া দেওয়া চলে, কিন্তু কেউ অন্যের পাশবিক নির্যাতনে মারা যাবে কিংবা মেরে ফেলা হবে এই ক্ষেত্রে কেন জরিমানা শব্দটা প্রযোজ্য? প্রশাসনের কাছে মিথ্যে রিপোর্ট দিয়ে কেন অপরাধীদের মুক্তি দিচ্ছি নানান সাক্ষীতে আমাদের সমাজ? এর জন্যতো আমরাই দায়ী, ঘটনা যারা জানে বা দেখে তারপরও সত্য প্রকাশে নীরব থাকে যারা প্রত্যেকে দায়ী। হাতে হাতে বেশিরভাগ ব্যক্তির স্মার্ট ফোন।

সত্যের দৃশ্য চিত্রসহ সোসাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিন। একজোট হয়ে প্রতিবাদে মিছিলে নামুন, জরিমানা নয় দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করুন, ঝড় তুলুন প্রশাসনের দরবারে, জনময়দানে ঘটনাস্থলে ফাটুক ফুটুক সত্যের ইতিহাস। মিথ্যেরা হোক নতজানু নিজ কর্ম ভুলে। শৃঙ্খলা আসুক ফিরে সমাজে, কিশোর তরুণ জাগ্রত হোক জ্বলে উঠুক সত্যের প্রতিবাদে। আমরা যদি প্রত্যেকেই চাই- তবে “আমরাই পারি’ সমাজের সকল অনিয়ম অন্যায় অপকর্ম দূর করতে।

পরিশেষে প্রশাসনের সকল কর্তাবাবুকে বলছি, আত্মহত্যা নামে সত্যকে মিথ্যে বানিয়ে এমন যত সকল ঘটনা নিয়ে আপনার দরবারে ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য দু-চারজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসুক না কেন, কোনো সিগনেচার দেবেন না, যে সিগনেচারে অপরাধীরা বুক ফুলে মুক্তি পেতে পারে। তদন্ত করুন, সরজমিনে গিয়ে নীতিবান গোয়েন্দার মাধ্যমে ঘটনার আসল রহস্য। জরিমানা নয়, দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিন অপরাধীদের অপরাধ অনুযায়ী। তবেই অপরাধমুক্ত দুর্নীতিমুক্ত সমাজ পেতে পারি আপনাদের সঠিক বিচার ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্তে।

জুঁই জেসমিন: লেখক ও মানবাধিকার কর্মী
juijesmin2019@gmail.com

Print Friendly

Related Posts